সাদেক হোসেন খোকার হুমকি

বাংলাদেশের রাজনীতিবিদেরা কথায় কথায় প্রতিপক্ষকে নিন্দা-হুমকি ইত্যাদি করে থাকেন। অনেক কথা মাটিতে পড়তে পারে না, অঘটন ঘটিয়ে ফেলেন। সোমবার বিএনপির এক প্রতিবাদ সভায় বিএনপির নেতা সাদেক হোসেন খোকা আওয়ামী লীগের প্রতি হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ২০০৬ সালে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করতে প্রয়োজনে তার চেয়ে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে।’ অস্বীকার করা যাবে না যে, সেই সহিংসতার পথ ধরেই অনিবার্য হয়ে উঠেছিল জরুরি অবস্থা। বিরোধী দুই দলের নেতারা একদিকে জরুরি শাসনের নিন্দা করছেন, অন্যদিকে আবার সেই জরুরি অবস্থার পূর্ববর্তী পরিস্থিতি তৈরির আহ্বান জানাচ্ছেন—এটি কি চরম স্ববিরোধী অবস্থান নয়? সাদেক হোসেন খোকা যখন রাজনৈতিক সভায় দাঁড়িয়ে অনুরূপ পরিস্থিতি তৈরির হুমকি দেন, তখন যেকোনো শান্তিকামী মানুষই বিচলিত না হয়ে পারেন না। এত দিন বিএনপির নেতারা যেই নৃশংসতার নিন্দা করেছেন, এখন তার চেয়েও ভয়ংকর কিছু করার ডাক কীসের ইঙ্গিত বহন করে? সাদেক হোসেন খোকা বিএনপির অন্যতম নীতিনির্ধারক এবং দলটির ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক। তাঁর সভাপতিত্বেই জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের উপস্থিতিতে প্রতিবাদ সভা হয়। সেই সভার সভাপতির ভাষণে সাদেক হোসেন খোকা লগি-বৈঠার চেয়েও ‘কঠিন পদক্ষেপের’ ঘোষণা দেন। এর মাধ্যমে তিনি কি তাহলে সরাসরি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার চিন্তা করছেন? রাজনীতিবিদেরা অনেক কাজ করেন, যা তাঁদের কথায় আসে না। আবার এমন অনেক কথা তাঁরা বলেন, যার কোনো সারবস্তু নেই। সাদেক হোসেন খোকা হয়তো আক্ষরিক অর্থেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য খুনোখুনি করার কথা বলেননি। কিন্তু দলের কর্মীরা এসব কথায় উত্তেজিত হয়ে ওঠেন, প্রতিপক্ষও রণপ্রস্তুতি নিতে পারে। আশা করব, সাদেক হোসেন খোকা গণতান্ত্রিক রাজনীতির মাঠে ফ্যাসিবাদী হাতিয়ার ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক হবেন এবং আপত্তিকর কথাটি ফিরিয়ে নেবেন। নইলে উসকানির পরিণামের দায় তাঁকে ছাড়বে না।