কৃষকের মুক্তি কত দূর?

‘তার জীবিকা কারখানা শ্রমিকের চেয়েও অনিশ্চিত, সে তবু দু-একটা দিন শান্তিতে থাকতে পায়, চিরলাঞ্ছিত ঋণদাস (কৃষক) সেটুকুও পায় না’—এই কথাগুলো ১৫০ বছর আগে ফ্রান্স-জার্মানির কৃষক সমস্যা পুস্তকে বলেছিলেন ফ্রেডরিক এঙ্গেলস। গরিব কৃষকের দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে ১৫০ বছর আগের ফ্রান্স-জার্মানির কী অদ্ভুত মিল! শুধু ফ্রান্স-জার্মানির জায়গায় যেন বাংলাদেশ শব্দটি বসিয়ে দিলেই হয়।
৫ মে প্রথম আলোর শিরোনাম ‘ধানের উৎপাদনে খরচ উঠছে না, কৃষকের মুখে হাসি নেই’-তে বলা হয়েছে, ‘কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় তিন সপ্তাহ ধরে পুরোদমে চলছে বোরো ধান কাটার উৎসব। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম কম থাকায় কৃষকদের উৎপাদন খরচ উঠছে না।
তাই কৃষকদের মুখে হাসি নেই। নিকলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড়হাটি গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, “অখন (এখন) যে অবস্থা! গিরস্থি খরি (চাষ করে) জমি বেচি বেচি (বিক্রি করে) খাওয়া লাগবে। এখন নতুন ধান বিক্রি করছি ৪৫০ টাকা মণ। এ ধান জমিতে চাষ করতে বীজ, সেচ, সার, ডিজেল, কীটনাশক, শ্রমিক খরচসহ পড়ছে ৭০০ টাকা মণ। যদি এই দাম থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে আর বোরো খেত করবাম (করব) না।”’
১৯৬৯ সালে সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারিত হয় সাকল্যে ১৩০ টাকা। আর একজন কৃষক এক মণ (৩৭.৩২) চাল বিক্রি করে পেতেন ৩০ টাকা।
তখন এক ভরি সোনার দাম ছিল ১৬০ টাকা, একটি এক কেজি সাইজের ইলিশের দাম ছিল ১.৫০ টাকা, একটি সুতি শাড়ির দাম ছিল আট টাকা, লুঙ্গির দাম ছিল পাঁচ টাকা, এক কেজি সরিষার তেলের দাম ছিল ২.৫০ টাকা, এক কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ১.৫০ টাকা, এক কেজি মসুর ডালের দাম ছিল ৮০ পয়সা, এক লিটার কেরোসিন তেলের দাম ছিল ৪৮ পয়সা, লবণের কেজি ছিল ২৫ পয়সা, গামছার দাম ছিল ১.৫০ টাকা, এক মণ জ্বালানি কাঠের দাম ছিল ২.৫০ টাকা, এক কেজি সাইজের দেশি মুরগির দাম ছিল ১.৭৫ টাকা, এক কেজি চিংড়ি বা পুঁটি মাছের দাম ছিল এক টাকা, এক ডজন ডিমের দাম ছিল ১.৫০ টাকা। অথচ আজ এক মণ চাল বেচে কৃষক পান বড়জোর এক হাজার টাকা।
কৃষকের দুর্দশা দূর করতে হলে সরকারকে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ফসল কিনতে হবে।
কৃষকের ক্ষমতায়ন করতে হবে। সংসদে শ্রমিক কৃষকের জন্য আসন সংরক্ষণ করতে হবে, তাঁদের কথা শুনতে হবে। কৃষকের মুক্তি মানে সত্য সত্যই বাংলাদেশের মুক্তি, কথাটা জাতীয়ভাবে বুঝতে হবে। মুক্তির কোনো সংক্ষিপ্ত রাস্তা নেই।
লেখক: প্রধান সমন্বয়ক, রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি, কুড়িগ্রাম।