হত্যা মামলার রাজনীতিকরণ

প্রবাদে আছে বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা এবং পুলিশ ছুঁলে ছত্রিশ× ঘা। আর এই বহুল উচ্চারিত বাংলা প্রবাদটির বাস্তব রূপ পরিলক্ষিত হলো ২০০৩ সালের ১৭ মার্চ জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বেগুন গ্রামের এক খানকায় সংঘটিত পাঁচ হত্যা মামলায়।
মামলার শুরু থেকেই পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। প্রথমে তারা এটিকে ডাকাতির ঘটনা বলে ১৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে, যার মধ্যে ছিঁচকে চোর, ভ্যানচালক, দরজি থেকে শুরু করে কয়েকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাও ছিলেন। ঘটনাটি বিএনপি আমলের, তাই আওয়ামী লীগ নেতাদের ফাঁসানো হয়। পরবর্তীকালে জঙ্গিনেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁদের জবানবন্দি থেকে বেরিয়ে আসে যে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
কিন্তু ২০০৮ সালে দেওয়া পুলিশের অভিযোগপত্রে জেএমবির আট সদস্য যুক্ত হলেও আগের কাউকে বাদ দেওয়া হয়নি; বরং ২০১০ সালে বিএনপি নেতা আনিসুর রহমানকে মামলার নতুন আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযুক্ত হলে আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি নেতাদের মামলায় জড়ানো হবে, এটাই বাংলাদেশে রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখন একই হত্যা মামলায় জেএমবি, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা যেমন পালাক্রমে অভিযুক্ত হলেন, তেমনি অভিযোগ উঠল আপাতনিরীহ কিছু লোকের বিরুদ্ধে। কিন্তু তারা ভেবে দেখল না যে এর মাধ্যমে কেবল নিরীহ মানুষই
হয়রানি হলেন না, মামলাটির ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। যেখানে জেএমবি হত্যার দায় স্বীকার করেছে সেখানে অন্যদের জড়ানোর পেছনে আর যাই হোক সৎ উদ্দেশ্য নেই।
যারা কালাইয়ের খানকায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের কঠোর শাস্তি হোক, এটা সবাই চায়। কিন্তু একই মামলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা কিংবা শ্রমজীবী মানুষকে হয়রানি করার বদভ্যাস সংশ্লিষ্টদের পরিহার করতেই হবে।