'বাঁশ পিডি' এবং কংজরী চৌধুরীর সাফ জবাব!

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর প্রবল আপত্তির মুখে বহুল আলোচিত ‘বাঁশ’ পিডি সাদেক ইবনে শামছ সেখানে যোগ দিতে পারেননি। তিনি শুধু আপত্তিই জানাননি; কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন যে সাদেক ইবনে শামছের মতো সরকারি কর্মকর্তাকে তিনি গ্রহণ করবেন না। এরপর সরকার তাঁকে খাগড়াছড়ি থেকে প্রত্যাহার করে কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করে এবং ২০ এপ্রিল সেখানে তিনি যোগ দিয়েছেন বলে প্রথম আলোর কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার দর্শনায় সরকারি ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে ফাইটোসেনেটারি ক্যাপাসিটি শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) সাদেক ইবনে শামছকে ১১ এপ্রিল খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। ১৯ এপ্রিল তাঁর খাগড়াছড়িতে যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী সাফ জানিয়ে দেন, ‘খাগড়াছড়ি ভালো মানুষের বাস। এখানে কোনো খারাপ মানুষের কর্মস্থল হতে পারে না।’

সম্প্রতি ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে দর্শনা উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের অতিরিক্ত উপপরিচালকের কার্যালয় কাম ল্যাবরেটরি ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশসহ নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের ঘটনা ধরে পড়ে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তোলপাড় শুরু হয়।
দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেওয়াই একজন সত্যিকার জনপ্রতিনিধির কর্তব্য। কংজরী চৌধুরীর এই সাহসী সিদ্ধান্তকে আমরা অভিনন্দন জানাই। যেখানে বাংলাদেশে সবকিছু চলে ওপরের নির্দেশে, সেখানে একজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সেই নির্দেশ পত্রপাঠ নাকচ করে দিয়েছেন। এটি হিম্মতই বটে।

কিন্তু খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সেই হিম্মত কীভাবে দেখালেন? তাঁর রক্ষাকবচ হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের চুক্তি। এই চুক্তিবলেই তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ হয়েছে, পৃথক পৃথক আইনে। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠনের পর নির্বাচন না হলেও জেলা পরিষদ কার্যকর আছে। আইন অনুযায়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ ২২ থেকে ২৪টি দপ্তর এর অধীনে ন্যস্ত। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মকর্তাকে গ্রহণ করা না-করার এখতিয়ার তাঁর আছে।

কিন্তু অতীব দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, পাহাড়ের তিন জেলা পরিষদ সীমিত স্বায়ত্তশাসন ভোগ করলেও সমতলের জেলা পরিষদগুলো একেবারেই সরকারের হুকুমবরদার। সেসব জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নেই, আছেন ‘দলীয়’ প্রশাসক। এটাকে অনেকে ঠাট্টা করে ক্ষমতাসীন দলের পুনর্বাসনকেন্দ্র বলেও ঠাট্টা করেন। যাঁরা মন্ত্রী-এমপি হতে পারেননি, তাঁদেরই নাকি জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে বসানো হয়েছে। সম্প্রতি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেন জেলা পরিষদে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু জেলা পরিষদের ক্ষমতা না বাড়ালে নির্বাচন করে কী লাভ? তাঁদের কেউ কি কংজরী চৌধুরীর মতো বলতে পারবেন, ‘আমার এখানে খারাপ লোকের কোনো জায়গা নেই?’

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান যা বলেছেন, সেটাই হওয়া উচিত একজন জনপ্রতিনিধি বা জনগণের সেবকের কথা। কিন্তু এখানে সরকার বা মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা রহস্যজনক। যে ব্যক্তি ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে রডের বদলে বাঁশ এবং খোয়ার বদলে সুরকি দিতে পারেন, বদলিই তাঁর একমাত্র শাস্তি? এ রকম গুরুতর অভিযোগ আসার পরও কর্তৃপক্ষের প্রথম কর্তব্য ছিল অন্তত তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা। সেই কাজটি তারা করেনি। তাহলে কি আমরা ধরে নেব যে বাঁশ পিডির পেছনের খুঁটি বেশ শক্তিশালী?

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মতো স্থানীয় প্রশাসনের সব কর্তাব্যক্তি যদি সাহসী, সৎ ও কর্তব্যনিষ্ঠ হতেন, তাহলে প্রশাসনের দুর্নীতি, অনিয়ম অনেকাংশে হ্রাস পেত।
লোক দেখানো বদলি নয় বা শোকজ নয়, চুয়াডাঙ্গায় ‘বাঁশ কেলেঙ্কারির’ সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?