আমার দ্বিতীয় মা

লেখক অর্নি ইসলামের নতুন মা নিশি রানী
লেখক অর্নি ইসলামের নতুন মা নিশি রানী

কয়েক দিন আগে আমি একটি বৃদ্ধাশ্রমে গিয়েছিলাম, দিনটি ছিল আমার স্বপ্নপূরণের।
জন্ম হল আমার নতুন মায়ের।
মায়ের নাম নিশিরানী, বয়স ৭০ বছর প্রায়।
তিনি মা হয়েছিলেন ১২-১৩ বছর বয়সে।
কিন্তু এ মা পাননি তাঁর রক্তের বিনিময়ে বড় করা ছেলেমেয়েদের ভালোবাসা!
নিজে না খেয়ে যাদের মুখে আহার তুলে দিয়েছিলেন, পাননি তাঁদের কাছে শেষ ঠাঁই। তিনি তাঁর ব্যক্তিজীবনের আর কোনো কথা বলতে চাননি।
আমিও আর সে বিষয়ে কোনো কথা বাড়াইনি।
মায়ের শেষ ঠাঁই হয়েছে ‘আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রম’-এ।
বিত্তবান কিন্তু হৃদয়হীন সন্তানের কাছ থেকে শেষ বয়সে আশ্রয় হারিয়ে বেশ কয়েকজন মায়ের শেষ আশ্রয় হয়েছে এই আশ্রমে।
আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল, নিজের সন্তানের ভালোবাসা ও দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত একজন মায়ের দায়িত্ব নিজে নেওয়ার।
বৃদ্ধাশ্রমে প্রবেশের পর প্রবীণ অসহায় মায়েদের মুখগুলো আমাকে এক সন্তানের জায়গায় বসিয়ে দেয়।
অনেক মায়ের মধ্যে খাতির জমে ওঠে এক মায়ের সঙ্গে, তাঁরই নাম নিশিরানী।
তাঁর কাছে গিয়ে ‘মা’ বলে ডাকতেই তাঁর মুখ হাসিতে ভরে উঠল। মন তখন একটা কথা বলে উঠল, ‘মা, আজ থেকে তোমাকে সুখে রাখার দায়িত্ব আমার।’
আমি যত দিন বেঁচে আছি, বাধ্য সন্তানের মতো এ দায়িত্ব পালন করব, ইনশা আল্লাহ!
মায়ের শাড়ি খুব পছন্দ, তাঁর গল্প শোনাতে ভালো লাগে! ছবি তুলতে ভালো লাগে, আমরা বেশ কয়েকটি ছবি তুললাম, মায়ের সঙ্গে অনেক আড্ডা হলো। মনে মনে একটি শাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।
সবার মতো আমিও আমার নিজের মাকে খুব ভালোবাসি, সব থেকে শ্রেষ্ঠ আর ব্যতিক্রম মনে করি। প্রতি মা দিবসেই তাঁকে নিয়ে থাকত আমার নানা পরিকল্পনা।
কিন্তু বাসায় এসে যখন ‘নিশি মা’-এর কথা বললাম, আম্মু খুব খুশি হলেন আর উৎসাহ দিলেন, আর আম্মুর মুখের হাসি বলে দিল, এত দিনে সেরা উপহার পাওয়া হয়েছে। আমাকে বললেন, ‘তুই কখন এত বড় হয়ে গেলি! এমন চিন্তা তোর মাথায় কেমন করে এল?’
এখন থেকে আমার আর আম্মুর মা দিবস পালন হবে নিশি মায়ের সঙ্গে।
এবার থেকে আমার মা দিবসের মজা বেড়ে গেল দ্বিগুণ!
এ রকম মমতাপূর্ণ মা দিবস পালিত হোক প্রতিটি প্রাণে!
লেখক: পাঠাগার সম্পাদক, ড্যাফোডিল-বন্ধুসভা