সূর্যালোকে মাংস রান্না

ঝালাই কারখানার মুখোশ বা ওয়েল্ডিং মাস্ক পরে রান্নাঘরে প্রবেশ করেন—এমন বাবুর্চি খুব কমই আছেন। কিন্তু সিলা সুথারাত সে রকমই একজন। তিনি কড়া রোদে মুরগি রান্না করতে ভালোবাসেন।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে দক্ষিণে দুই ঘণ্টার পথ। সেখানে ফেরিওয়ালার কাজ করেন ৬০ বছর বয়সী সুথারাত। তিনি ক্রেতাদের হাতে অন্য রকম কিছু তুলে দেওয়ার জন্যই সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে রান্নার একটা পদ্ধতি বের করেছেন।
সুথারাত একটা বিশেষ যন্ত্র বানিয়েছেন। এতে তিনি একটা বড় দেয়ালে নাড়ানোর উপযোগী হাজারখানেক আয়না লাগিয়ে নিয়েছেন। সেগুলোর সাহায্যে তিনি সূর্যালোক প্রতিফলিত করেন মসলা মাখানো আস্ত মুরগির মাংসের ওপর। ফলে রান্নার জন্য পর্যাপ্ত তাপ তৈরি হয়। এই অপ্রচলিত রান্নাপদ্ধতি দেখে কেউ কেউ চোখ কপালে তুলেছেন বটে। এ বিষয়ে সুথারাতের মন্তব্য, ‘ওরা ভেবেছিল আমার মাথাটা বোধ হয় গেছে। এভাবে মুরগি রান্না করাটাকে সবাই অসম্ভব মনে করেছিল। বেশ কিছুদিন দেখার পর ওরা আমার পদ্ধতিটাকে গ্রহণ করল।’
রান্না করার সময় সূর্যের তীব্র আলোয় উজ্জ্বল মুরগির মাংসের দিকে টানা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকাও কঠিন হয়ে পড়ে।
সূর্যালোক প্রতিফলকযন্ত্রটা বিপুল তাপ তৈরি করে। সেটা চুলার তাপের সমান। সুথারাতের সূর্য-চুলায় মুরগি সেদ্ধ করতে মাত্র ১২ মিনিট লাগে। তাঁর এই তাক লাগানো কাজ গত দুই দশকের বেশির ভাগ সময় প্রচারের বাইরেই ছিল। কেবল স্থানীয় লোকজন ব্যাপারটা জানত। তবে সম্প্রতি অনলাইনে এই রন্ধনপ্রণালির ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে লোকজন দলে দলে ফেতচাবুরি প্রদেশে গিয়ে সুথারাতের দোকানে ভিড় জমাতে শুরু করেছে।
সুথারাত বললেন, ১৯৯৭ সালে একটি গাড়ির জানালা থেকে প্রতিফলিত রোদের তাপ দেখেই এভাবে রান্নার চিন্তা তাঁর মাথায় প্রথম আসে। তখন লাকড়ি, পেট্রল ও গ্যাসের দাম বাড়তির দিকে ছিল। সবকিছু ভেবেই সূর্যালোকে রান্নার উদ্যোগ নেন। এটা পরিবেশবান্ধব উপায়, সেটা একটা বাড়তি পাওনা।
এখন সুথারাত ও তাঁর স্ত্রী পানসি দিনে প্রায় ৪০টি মুরগি রান্না করেন, সঙ্গে অন্য মাংসও। এগুলো সুস্বাদু, অন্যান্য গ্রিলের মতো পোড়া পোড়া গন্ধ থেকে মুক্ত।