সবার জন্য ইফতারি

পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের সময় সাধারণ মানুষের হাতে ইফতারি তুলে দিচ্ছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। মাসজুড়েই এই সংগঠনগুলো পথশিশু, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষসহ দায়িত্বের খাতিরে পথে থাকা মানুষকে ইফতার করাবে। এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে একদল তরুণ স্বেচ্ছাসেবক। এমন দুটি উদ্যোগের কথা জানাচ্ছেন মো. মিকসেতু
ইফতারি পেয়ে হাসি ফোটে মানুষের মুখে। ছবি: সংগৃহীত
ইফতারি পেয়ে হাসি ফোটে মানুষের মুখে। ছবি: সংগৃহীত

পথচারীদের হাতে ইফতারি
২৯ মে ছিল রমজান মাসের ২ তারিখ। ফেসবুক ইভেন্টে জেনেছি রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে ইফতারির আয়োজন করেছে ‘শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন’। পথের জটলা ঠেলে ইফতারের ঠিক আগমুহূর্তে হাজির হতে হলো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনের রাস্তা ধরে এগোতেই দেখা মিলল একদল তরুণের। তাঁরা বসেছেন একদল কিশোরের সঙ্গে। দূর থেকে মনে হলো গল্প করছেন। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি একজনকে। তিনি বললেন, এখানেই একটু পর ইফতার হবে। কিন্তু মিনিট পাঁচেক পরই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলো। ইফতারের সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। সবাই ধানমন্ডি লেকের পাড়ে একটি ছাউনির নিচে চলে গেলেন। সেখানেই হলো ইফতারের আয়োজন।

প্রায় ৫০ জন শিশু-কিশোর। তাদের সারি ধরে বসানো হলো। স্বেচ্ছাসেবক তরুণেরা কেউ ইফতারির প্যাকেট বিতরণ করছেন, কেউ গ্লাসে পানি ঢেলে দিচ্ছেন। কয়েকজন আবার ইফতারির প্যাকেট হাতে রাস্তার দিকে ছুটে গেলেন। ফুটপাতের দোকানিদের হাতে তুলে দিলেন সেগুলো। বিতরণ শেষে নিজেরাও বসে পড়লেন। মসজিদ থেকে আজান ভেসে এল। শুরু হলো যৌথ ইফতার। যেন তাঁরা একই পরিবারের সদস্য।

ইফতার শেষে কথা হলো শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মুঈদ হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা মাসজুড়েই এই ইফতার আয়োজন করব। এটা শিশুদের জন্য সংগঠন হলেও আমরা ইফতার করাই পথচারীদের। কোনো কোনো দিন চলে যাই মাদ্রাসা, এতিমখানা কিংবা বৃদ্ধাশ্রমে। একেক দিন একেক জায়গায়।’

তাঁর কাছেই জানা গেল, ২০১২ সালে তাঁদের সংগঠনের যাত্রা শুরু। ঢাকার সেগুনবাগিচায় পথশিশুদের পড়াতেন তাঁরা। পড়ানোর পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনও করা হয়। এ কাজে তিনি নিজেই বেতনের একটি অংশ খরচ করেন। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন প্রায় ১১০ জন তরুণ।

রান্না করছেন একজন স্বেচ্ছাসেবী
রান্না করছেন একজন স্বেচ্ছাসেবী

এক টাকায় ইফতারি
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন মূলত অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করে। তাদের নানা উদ্যোগের একটি ‘এক টাকায় আহার’। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁরা এক টাকার বিনিময়ে অসহায় মানুষের হাতে খাবার তুলে দেন। সেটাই রমজানে হয়ে যায় এক টাকার ইফতারি কিংবা এক টাকায় সাহ্‌রি। আক্ষরিক অর্থে এক টাকা হচ্ছে শুভেচ্ছা মূল্য।

এক টাকার আহার প্রকল্পের ঢাকা জেলা প্রধান সুলতানা জান্নাত বলেন, ‘বিদ্যানন্দ সংগঠনের পক্ষ থেকে গত বছর মোট ৭৫ হাজার অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে ইফতারি খাওয়ানো হয়েছিল। এবার আমাদের লক্ষ্য এক লাখ মানুষকে ইফতারি খাওয়ানো।’

প্যাকেট করে ইফতারি তুলে দেওয়া হবে অসহায় মানুষের হাতে। ছবি: সংগৃহীত
প্যাকেট করে ইফতারি তুলে দেওয়া হবে অসহায় মানুষের হাতে। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিদিন ঢাকার মিরপুরে চলে দিনভর ইফতারের আয়োজন। প্যাকেট করা খাবার বিকেল নাগাদ গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর রূপনগর বস্তি, কড়াইদ বস্তিতে। এই দুই জায়গায় চলে এক টাকার বিনিময়ে ইফতারের আয়োজন।

পুরো রমজান মাসেই চলবে এই ইফতার আয়োজন। ইফতারির পাশাপাশি ঢাকার বেশ কয়েকটি জায়গায় চলছে তাদের এক টাকায় সাহ্‌রির খাবার খাওয়ানোর কার্যক্রম। সুলতানা জান্নাত জানালেন, ঢাকায় তাঁদের সঙ্গে প্রায় ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। এক টাকায় ইফতারি কিংবা সাহ্‌রির খাবারের জন্য প্রথম দিকে তাঁরা নিজেরাই অর্থ জোগান দিতেন। এখন ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী অর্থ সহায়তা করেন। তাই তাঁদের কার্যক্রমও বিস্তৃত হয়েছে। ঢাকার বাইরে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, রাজশাহীতেও এক টাকার বিনিময়ে ইফতারের সুযোগ পাচ্ছেন অনেক অসহায় মানুষ।