ডোডো রহস্য

প্রায় সাড়ে তিন শ বছর আগে সর্বশেষ পাখিগুলো দেখা গিয়েছিল। উড়তে পারত না ধূসর-বাদামি রঙের ‘ডোডো’ নামের এই পাখি। ভারত মহাসাগরে পূর্ব আফ্রিকার দ্বীপদেশ মরিশাস ছিল এদের আবাস। বিলুপ্ত এই ডোডোরই অজানা কাহিনি উন্মোচনের দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেলফিন অ্যাংস্ট কয়েকটি জাদুঘর ও ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা ডোডোর কিছু হাড় পরীক্ষার সুযোগ পান। তিনি ও তাঁর দল বিভিন্ন সূত্র থেকে ২২টি ডোডোর হাড় সংগ্রহ করে সেগুলোর ওপর গবেষণা করেন। নেচার পাবলিশিং গ্রুপের অনলাইন জার্নাল সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে এ–সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

মরিশাসে ১৬৬২ সালে সর্বশেষ দেখা মেলে ডোডোর। গবেষণায় জানা গেছে, বছরের আগস্ট মাসের দিকে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতো ডোডোর। বাচ্চাগুলো খুব দ্রুত বেড়ে উঠত। পরবর্তী মার্চ মাসের মধ্যেই এগুলো পালকে ঢেকে যেত। মরিশাসে প্রতিবছর নভেম্বর মাস থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা থাকে। এই ঝড় মোকাবিলা করে টিকে থাকতেই হয়তো বাচ্চাগুলোর বেড়ে ওঠা ত্বরান্বিত হয়েছিল বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে প্রজননের জন্য পাখিগুলোর প্রাপ্তবয়স্ক হতে বেশ কয়েক বছর সময় লেগে যেত।

ডেলফিন অ্যাংস্ট বলেন, ‘আমাদের এই গবেষণার আগে এ পাখি সম্পর্কে খুব কমই জানতাম আমরা। প্রথমবারের মতো আমরা জানতে পেরেছি, বছরের নির্দিষ্ট একটা সময়ই ডোডোর প্রজনন হতো এবং এর পরপরই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতো।’

ডোডোর বিলুপ্তির জন্য মানুষের দায়টাই সবচেয়ে বেশি বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। মরিশাসে মানুষ পৌঁছানোর পর এক শতকের কম সময়ের মধ্যে পাখিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। উড়তে না পারায় মাটিতেই বাসা বানাত ডোডো। কাজেই এসব বাসায় পাড়া ডিম চুরি হয়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক।

ডেলফিন অ্যাংস্ট বলেন, ‘এই পাখির বাস্তুসংস্থান বিষয়ে আমরা খুব বেশি কিছু জানি না। কাজেই তাদের বিলুপ্তির পেছনে মানুষের দায় কতটা, তা বলা কঠিন। তবে মরিশাসে মানুষ পৌঁছানোর পরই ডোডোর বিলুপ্তি ঘটে।’

ডোডোর ওপর এই গবেষণার সহযোগী লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের জুলিয়ান হুমে বলেন, ডোডোকে কেন্দ্র করে এখনো অনেক রহস্য রয়ে গেছে। সাম্প্রতিকতম এই গবেষণায় কেবল পাখিগুলোর প্রজনন আর বেড়ে ওঠার তথ্যই পাওয়া গেছে।