বন্ধু

জীবনের ইঁদুর দৌড়ে দৌড়াচ্ছি সেই কবে থেকেই! মনে পড়ে, একই ট্র্যাকে দাঁড়িয়ে দৌড় শুরু করেছিলাম একই হুইসেলে। প্রাইমারির বাধা পেরিয়ে হাইস্কুল, তারপর কলেজ। কখন যে পরিবর্তিত হতে থাকে একেকজনার ট্র্যাক, একদমই খেয়াল করা হয়নি। হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে দেখি, সবকিছু কেমন ঝাপসা হয়ে গেছে!
ঝুমবৃষ্টিতে ফুটবল, কড়কড়ে রৌদ্র বিকেলে ক্রিকেট, চৈত্রের দুপুরে গোত্তা খাওয়া ঘুড়ি, স্কাউটিংয়ের কুচকাওয়াজ, কলেজ কমনরুমে ক্যারম খেলতে খেলতে নেমে আসা শীতকালীন সন্ধ্যা, ফার্স্ট ইয়ারে মেয়েটার চুলে জড়ানো রজনীগন্ধা, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখা, চৌদ্দ আনা সুখের ভাগাভাগি, হঠাৎ জ্বলে ওঠা বিরামহীন স্বপ্ন, অসময়ে মরে যাওয়া প্রিয় বন্ধুর মুখ, সম্পর্কের জটিলতায় হারিয়ে যাওয়া সরলতা...
সব, সবকিছু ক্রমশ অস্পস্ট হয়ে আসে।
সমানতালে চলতে মাঝপথে অনেকেই সতীর্থ হয়েছে। আবার অনেকেই ঝরে পড়েছে। আর আমি, কতগুলো লংজাম্প, হাইজাম্প শেষ করে কত কতজনকে পেছনে ফেলে এসেছি! আমাকেও ফেলে গেছে অনেকেই। এখন পেছনে তাকালে আর কাউকেই দেখা যায় না। সামনে তাকালেই অচেনা পথে কতগুলো অচেনা মুখ! পৃথিবী দীর্ঘ হলে থেমেই যেতাম। গোলাকার বলেই সম্ভবত ঢলে পড়া থেকে বাঁচতে দৌড়াই।
বন্ধু, তোমরা যারা আমায় ফেলে গেলে, তাদের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু যাদের আমি ফেলে এসেছি, তারা আমায় ক্ষমা করো। তখন অত জোরে না দৌড়ালে পরিস্থিতি হয়তো আমায় ক্ষমা করত না।
শুভাশীষ শুভ
চট্টগ্রাম