ছোট ভাইয়ের বড় কোরবানি

আমার ছোট ভাই হাবিবুর রহমান কিরণ। বয়স বিশ পেরিয়ে একুশ ছুঁই ছুঁই করছে। আমাদের জন্য তাঁর আত্মত্যাগের আবেগময় গল্প ছোট; তবে তার মাহাত্ম্য অনেক বড়।

গত বছর কোরবানি ঈদের নামাজ পড়ে ঘরে ঢুকলাম। কোরবানি আমিই করি। প্রস্তুতি নিতে গিয়ে কিরণকে ডাকতে লাগলাম। এ সময় আম্মা এসে হাজির। আম্মা জানালেন, ‘কিরণের মন খারাপ। তোর বাবা ছোট গরু কিনছে সে জন্য।’ শুনে আমি হাসলাম। কিরণের পক্ষে সাফাই গাইলাম। কিরণের বয়সে আমিও তা-ই করতাম।

২০০২-০৩ সালের ঘটনা। আমার দাদা মরহুম আবদুল বারিক বাজারের সবচেয়ে ছোট গরুটাই কিনতেন। তখন আমাদের এলাকার সমবয়সীরা বলত, এই গরু খেলে কাশি হবে। এই কষ্টে দাদাকে মনে মনে কত বকেছি। কারণ, আমাদের ফ্যামিলিতে দাদার কথার বাইরে কেউ কথা বলত না। বাবা-চাচাদের বড় গরু কেনার ইচ্ছা থাকলেও দাদার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সে হিসেবে কিরণের এ বয়সে কোরবানি মানেই হচ্ছে বড় একটা গরু আর সেটার ছবি তুলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করা।

ঈদুল আজহার মর্মবাণী ত্যাগ। আল্লাহপাকের প্রতি অপার আনুগত্য এবং সর্বোচ্চ ত্যাগ। এসব কিরণের মাথায় আসার বয়স হয়নি। এটাই স্বাভাবিক। কোরবানি কী—সেটা না বুঝে উঠতেই বড় কোরবানি দিয়ে দিল কিরণ। থাকার কথা মা-বাবার সঙ্গে, ভাই-বোনদের সঙ্গে; তারুণ্যের উল্লাসে উজ্জীবিত হয়ে হারিয়ে যাওয়ার কথা। আর সে কিরণ ঈদের দিন ডিউটি করছে। আত্মত্যাগের আবেগময় গল্পের মহানায়ক।

গতরাতে যখন ঈদের কথা জানতে চাইলাম, কিরণ আমাকে জানাল—এই দেশে ঈদ নেই, ডিউটি করতে হবে। কোরবানির সংজ্ঞা আমার আর জানা নাই। মা-বাবা, ভাই-বোন সবার মুখে হাসি ফোটাতে নিজের দেশ বিসর্জন দিয়ে মরুভূমির দেশে হয়তো কোনো এক ঘুপছি ঘরে নিজে নিজে বলছে আর শুনছে, ‘ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক।’