বাংলাদেশের মিষ্টি, একটু বেশিই মিষ্টি

খুলনার ফুটপাতে চায়ের দোকানে বিলেতের পর্যটক পল স্মি। ছবি: লেখক
খুলনার ফুটপাতে চায়ের দোকানে বিলেতের পর্যটক পল স্মি। ছবি: লেখক

পল স্মির বাড়ি ইংল্যান্ডের কোভেন্ট্রি শহরে। তবে যেকোনো ভিনদেশে অচেনা পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া তাঁর জন্য কোনো ব্যাপারই না। এই যেমন এবারের ঈদের দিনে তিনি ছিলেন খুলনার খালিশপুরে। বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে গত ১৭ আগস্ট তিনি এসেছেন বাংলাদেশে। এর আগে ঘুরেছেন অন্তত ৮০টা দেশ।

পল গ্যাস টারবাইন প্রকৌশলী। কাজ করেছেন রোলস রয়েস এনার্জি সিস্টেমস এবং আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে। পেশার সুবাদে থাকতে হয়েছে আমেরিকা ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে পৃথিবী ঘুরেছেন। একপর্যায়ে মনে হয়েছে, চাকরি করে পৃথিবী ভ্রমণ করা যায় না। বছর দুই হলো চাকরি ছেড়ে দিয়ে কাঁধে ব্যাগ ফেলে নেমে গেছেন পথে।

বাংলাদেশে আসার আগে পল ছিলেন থাইল্যান্ডে। পরিকল্পনা ছিল এশিয়া মহাদেশের দেশগুলো ঘুরে ফেলবেন। কিন্তু বাংলাদেশে কীভাবে আসবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে ‘কোচ সার্ফিং’ অ্যাপের মাধ্যমে খুঁজতে শুরু করেন একজন হোস্ট, যে তাঁকে বাংলাদেশ ঘুরিয়ে দেখাবে। ইতিবাচক সাড়া পেলেন বাংলাদেশের সাংবাদিক তরিক রহমানের কাছ থেকে। এর আগেও বেশ কয়েকটি দেশের পর্যটকদের বাংলাদেশ ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন তরিক।

পল স্মির ঈদ কেটেছে খুলনার খালিশপুরে
পল স্মির ঈদ কেটেছে খুলনার খালিশপুরে

ঈদের দিন পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে পল এসে হাজির হন খালিশপুরে এই প্রতিবেদকের বাড়িতে। সঙ্গে তরিক রহমান, সংস্কৃতিকর্মী শরিফুল ইসলাম, তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে অহনা এবং মেডিকেলশিক্ষার্থী সিঁথি। তখন চলছিল মাংস রান্নার প্রস্তুতি। মাছ বেছে বেছে ইলিশ-পোলাও খেয়েছেন পল, খেয়েছেন তালের রসের পিঠা, চালের গুঁড়া ও ঝাল দিয়ে বানানো পিঠা। কোন পিঠাটি বেশি ভালো লেগেছে—জানতে চাইলে বললেন, ‘মিষ্টিটা।’ বারান্দায় গিয়ে খালিশপুর শ্রমিক ময়দান দেখিয়ে জানতে চান, ‘কী হয় এখানে?’

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চড়ে পলকে নিয়ে যাওয়া হয় পিপলস জুট মিলে। বেশ কিছুদিন আগে নাম বদলে এ পাটকলের নাম এখন খালিশপুর জুট মিলস। তাঁকে জানাই, ইদানীং লাভের মুখ দেখেছে এই পাটকল। পাটকলের এই শহরটির প্রাচীন ইতিহাসের খানিকটা জানানো হয় তাঁকে।

পলের বাবার জন্ম আয়ারল্যান্ডে। সেই সূত্রে পলের রয়েছে একটি ইউরোপীয় পাসপোর্ট। পকেট থেকে সেটি বের করে নিজের ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখো তো, ছবিটার সঙ্গে আমাকে মেলাতে পারো কি না। টাকা বাঁচানোর জন্য চুল-দাড়ি কাটছি না।’ রসিকতা করে বললাম, ফুটপাতে আয়না ও চেয়ার পেতে কাজ করেন একদল নরসুন্দর। তাঁদের কাছে বসলে খরচ কম।

পল আমাদের সঙ্গে যান আমাদের আড্ডার জায়গাগুলোতে। তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্ত শুনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কর্মী খয়বার হোসেন বলেন, ভ্রমণের খুব ইচ্ছে ছিল তাঁর। কিন্তু কপালে লেখা নেই বলে খুলনা ছেড়ে কোথাও যাওয়া হয়নি। বিষয়টি ইংরেজিতে অনুবাদ করে বলা হলো পলকে। পল টুপি খুলে খয়বারের কপালে নিজের কপাল ঘষে দিয়ে বলেন, ‘আমার ভ্রমণের সব অভিজ্ঞতা তোমার কপালে দিয়ে দিলাম।’ হাসতে হাসতে বললেন, ‘কপাল মুছো না যেন।’

এরই মধ্যে ঢাকা, কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও কক্সবাজার ঘুরে এসেছেন পল স্মি। যাবেন চট্টগ্রাম ও সিলেটেও। বাংলাদেশের কী কী ভালো লেগেছে তাঁর—জানতে চাইলে বলেন, ‘মানুষগুলো অসাধারণ। দেশটা সুন্দর। সবাই এত বেশি আন্তরিক যে বলে বোঝানো যাবে না। প্রতিটি দিনই নাকি উৎসবের মতো মনে হচ্ছে তাঁর। তবে বাংলাদেশের মিষ্টিগুলো একটু বেশিই মিষ্টি (টু সুইট!)।’