দেনার পাহাড় মাথায় নিয়েও তিনি শীর্ষ ধনী!

চীনের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি এখন এভারগ্রান্ডে গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জু জিয়াইন। ছবি: রয়টার্স
চীনের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি এখন এভারগ্রান্ডে গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জু জিয়াইন। ছবি: রয়টার্স

চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম আবাসন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এভারগ্রান্ডের মোট দেনার পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। কিন্তু এই দেনার পাহাড় মাথায় নিয়েই এভারগ্রান্ডে চেয়ারম্যান জু জিয়াইন এখন চীনের শীর্ষস্থানীয় ধনী ব্যক্তি!
বেইজিংভিত্তিক গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ‘হরুন রিপোর্ট’ প্রকাশিত এবারের বার্ষিক ‘চায়না রিচ লিস্ট’ প্রতিবেদনে জায়গা করে নিয়েছেন মোট ২ হাজার ১৩০ জন ধনকুবের। তাঁদের নেতৃত্বে রয়েছেন ৪৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আর্থিক সম্পদের মালিক জু জিয়াইন। প্রতিবেদনটির সব ধনকুবেরদের মোট সম্পদের আর্থিক মূল্য ২.৬ ট্রিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাজ্যের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় সমান!
এভারগ্রান্ডে চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান দেশটির শীর্ষ ধনী ব্যক্তি হওয়ায় ইতিবাচক-নেতিবাচক দুই রকম প্রভাবই পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তবে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে ঋণের পরিমাণ ২৪০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করেছেন এভারগ্রান্ডে কর্ণধার জু জিয়াইন। এরই মধ্যে ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের নতুন তহবিল গড়েছেন তিনি। এ ছাড়া ২.৮ বিলিয়ন ডলার দেনাও পরিশোধ করেছেন এ বছর। চায়নিজ সংবাদমাধ্যমের কাছে জিয়াইন চীনের ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প’। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মতো তিনিও আবাসন ব্যবসায় ভাগ্য ফিরিয়েছেন।
চীনের বহুমুখী প্রতিষ্ঠান ডালিয়ান ওয়ান্ডা গ্রুপের কর্ণধার ওয়াং জিয়ানলিনকে হটিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছেন ৫৯ বছর বয়সী জু জিয়াইন। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৩০ শতাংশ সম্পদ কমেছে জিয়ানলিনের। শীর্ষ ধনীর তালিকায় তিনি নেমে গেছেন পাঁচে। এদিকে চীনে সম্প্রতি স্থাবর সম্পত্তির দাম বাড়ায় গত বছরই ৩০ বিলিয়ন ডলারের মুখ দেখেন জিয়াইন। এ বছর এভারগ্রান্ডের শেয়ার বেড়েছে ৪৮০ শতাংশ হারে। প্রতিষ্ঠানটির ৭০ শতাংশ শেয়ারের মালিক জিয়াইনের সম্পদ গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৭২ শতাংশ হারে বেড়েছে!
চীনের বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গেও বেশ ভালো যোগাযোগ রয়েছে জিয়াইনের। দেশটির শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক উপদেষ্টা মহল ‘সিপিপিসিসি’র সম্মানিত সদস্যের পদও আগলাচ্ছেন তিনি। এ ছাড়া চীনের প্রধান প্রশাসনিক মহল ‘স্টেট কাউন্সিল’ তাঁকে ভূষিত করেছে ‘ন্যাশনাল মডেল ওয়ার্কার’—হিসেবে, যা দেশটির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বেসামরিক পুরস্কার।
উহান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন জিয়াইন। ২০০৮ সালে ওয়েস্ট অ্যালাবামা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে বাণিজ্যে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৯৬ সালে তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয় এভারগ্রান্ডে গ্রুপ। চীনের হাজারো মধ্যবিত্ত মানুষকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার জন্য ভীষণভাবে প্রশংসিত হয়েছে এ প্রতিষ্ঠান।
আবাসন ব্যবসার পাশাপাশি সাত বছর আগে চীনের ফুটবল ক্লাব গুয়াংজু এভারগ্রান্ডে কিনেও আলোচনায় এসেছিলেন জিয়াইন। তবে সমালোচিতও হয়েছেন। দুই বছর আগে নিয়মবহির্ভূতভাবে সিডনিতে ৪০ মিলিয়ন ডলারের একটি বাড়ি কিনে অস্ট্রেলীয় সরকারের কোপানলে পড়েছিলেন জিয়াইন। পরে বাড়িটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন, যদিও সেই বাড়ি বিক্রিতেও ১০ লাখ ডলার লাভের মুখ দেখেছিলেন কৌশলী এ ব্যবসায়ী। সূত্র: রয়টার্স।