সিনিয়র

‘আপনি তো অনিন্দ্য সুন্দরী’—পরপর দুবার বাক্যটা লিখে কেটে দিলাম। একজন মেয়েকে সুন্দরী বলব, তাতে এত সংকোচ কেন? ঠিক সংকোচ নয়, এই অবস্থাকে ভয় বলা যায়। কারণ, তিনি আমার সিনিয়র। মনে হচ্ছিল, এটা দেখার পর চ্যাটিংয়েই তিনি উত্তম-মধ্যম দিয়ে বসবেন।

যাঁকে আমার এত ভয়, তাঁর সঙ্গে প্রথম দেখা প্রায় ছয় মাস আগে। আমাদের কলেজেই। প্রথম দেখাতে ভালো লাগা বলে যে ব্যাপারটি থাকে, আমার বেলায়ও সেটাই হয়েছিল। কিন্তু সেই ভালো লাগা নিমেষেই মলিন হয়ে গেল পরিচয় জেনে। আমার বান্ধবীর কাছে জানলাম, তিনি আমার চেয়ে এক বছরের সিনিয়র।

বিষয়টা সেদিনই চুকে গিয়েছিল। কিন্তু জল গড়াল ফেসবুকে। একদিন আমার এক পোস্টে বেশ পজিটিভ মন্তব্য করলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাসেঞ্জারে নক করলাম। ‘হাই-হ্যালো’ দিয়ে শুরু হলো আলাপ। আলাপের এক ফাঁকেই ওই বাক্য লিখে কেটে দিয়েছিলাম।

তারপর সাহস জুগিয়ে সংশোধিত বাক্যবন্ধটি জানিয়ে দিলাম—দিদি, আপনি তো অনেক সুন্দর। বিষয়টা তিনি কীভাবে নেবেন সেটা ভেবে সঙ্গে সঙ্গেই হাসির ইমোও পাঠালাম। যদিও অনুভূতিটা স্মাইল ছিল না। মনে হচ্ছিল দু-চারটা লাভ ইমো দিয়ে দিই।

রিপ্লাই পেলাম খুব তাড়াতাড়ি, ‘তাই নাকি, তোমার ভালো লেগেছে?’

 ‘হুম দিদি, খুব বেশি ভালো লেগেছে। সেদিন আপনাকে নিয়ে আমার বন্ধুদের অনেক কথা বলেছিলাম।’

‘তাই! তো কী বলেছিলে?’

‘না দিদি, বলা যাবে না। অনেক কিছুই বলেছিলাম।’

‘না বললে কিন্তু রাগ করব।’

 ‘বলেছিলাম যে আপনি অনেক সুন্দর, আর যদি আপনি এক বছরের জুনিয়র হতেন তাহলে...।’ এটুকু বলেই ভয় কিংবা লজ্জায় হোক, আবারও দুইটা হাসির ইমো দিলাম।

তিনি বুঝে নিয়ে বললেন, ‘তাই নাকি? এক বছরের জুনিয়র নই তো কি সমস্যা, এক বছরের সিনিয়র তো!’

এরপর আর আমার কথা সরে না। সেই রাতে কথা হয়েছিল অনেক রাত পর্যন্ত। আর এখন তো আমরা শুধু কথা বলি না, ঝগড়াও করি!