আনারসের বাজারে

সাইকেলে ঝুড়ি বোঝাই করে বাজারে আনা হয়েছে আনারস। ছবি: আদনান মুকিত
সাইকেলে ঝুড়ি বোঝাই করে বাজারে আনা হয়েছে আনারস। ছবি: আদনান মুকিত

মাঝরাতে মধুপুর পৌঁছাই। সকালে উঠেই বাজারে এলাম নাশতা করতে। চওড়া পাকা সড়কের পাশের এই জায়গার নাম জলছত্র। ঢাকা শহর বা তার বাইরে যারা আনারস কেনায় অভ্যস্ত, তারা জলছত্র নামের সঙ্গে পরিচিত। বাজারে এই সময়ে জলছত্রের আনারসের দাপট থাকে সবচেয়ে বেশি। আকার ও স্বাদ দুই দিক থেকেই এই আনারস ক্রেতাদের কাছে টানে। দাপুটে এই আনারসের বাজারও দেখার মতো।

সড়কের দুই ধারে শুধু আনারস আর আনারস। নানা বাহনে চড়ে আনারস আসছে এই বাজারে। দুই চাকার সাইকেলে দুটি করে ঝুড়ি। সেখানে সাজিয়ে আনা হচ্ছে ১০০ করে আনারস! মহিষ ও ঘোড়ার গাড়িতে চেপে আসছে গাছপাকা আনারস। ভ্যানেও সেজেগুজে আনারস আসছে ক্রেতাদের সামনে। বাহন থেকে নামিয়ে তা সাজানো হচ্ছে রাস্তার পাশে। কোনোটা আবার গাড়িতে থাকতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন জানান, ভরা মৌসুমে (আষাঢ়-ভাদ্র) বাজারের গণ্ডি ছাড়িয়ে পুলিশ ফাঁড়ি থেকে শুরু করে ২৫ মাইলের মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত হয় আনারসের বাজার। ব্যস্ততাও বেড়ে যায় সবার।

১ অক্টোবর সকালেও দেখা গেল পাইকাররা আসছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। ট্রাক ও পিকআপ বোঝাই করে আনারস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। টাঙ্গাইল থেকে আসা আনারস ব্যবসায়ী মো. ইমদাদুল বললেন, ‘উজ্জ্বল রং আর আকারে বড় আনারস বেছে কেনার চেষ্টা করছি। কারণ, এই আনারস ঢাকায় বিক্রি হবে। সেখানে বড় আনারসের দাম ভালো পাওয়া যায়।’

জলছত্রের আনারস বাজার
জলছত্রের আনারস বাজার

‘কিন্তু বড় আনারস দেখার শোভা, খাইতে মজা ছোটটা।’ জলছত্র বাজার লাগোয়া খাবারের হোটেল কিছুক্ষণের এক কর্মী জানালেন তথ্যটা। তাঁর সঙ্গে গল্প করে আরও জানা গেল, বড় আনারস পাকাতে অনেক সময় রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। স্থানীয় মানুষেরা খাওয়ার জন্য বেছে বেছে ছোট আনারস কিনে নেন। আমরাও ছোট আনারস কিনে আনলাম। অনুরোধে হোটেলের কর্মী ছেলেটাই আনারস কেটে দিলেন। নিজের উৎসাহে তাতে ছিটিয়ে দিলেন লেবুর রস আর লবণ! ভরপেট নাশতার পর দলের সবাই মিলে আনারসের স্বাদ নিলাম। লেবু-লবণের কল্যাণে নতুন স্বাদে আবিষ্কার করলাম আনারস।

বাজারে বড় আকারের আনারস বিক্রি হয় শ-প্রতি ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। ছোট আনারসের দাম আরও কম। পুরো মধুপুর উপজেলায় চাষ হয় আনারস। আর তাই এখানেই বসে বড় হাট। প্রতিদিন আনারস বেচাকেনা চললেও শুক্র ও মঙ্গলবার হাট বসে এখানে। সেদিন আরও বেশি পরিমাণে থাকে আনারস। ভরা মৌসুম শেষ হলেও এখনো সকাল-বিকেল সবাই ব্যস্ত আনারস তোলা, বাজারে আনা আর বেচাকেনায়। জলঢুপি ও জায়ান্ট কিউ দুই জাতের আনারস দেখালেন একজন বিক্রেতা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাজারে আসতে দেখা গেল আনারস। তবে বিক্রির সময় মূলত সকাল থেকে দুপুর। এরপরও বেচাকেনা চলে, তবে সেটা পরিমাণে কম। এখন সারা বছরই কমবেশি আনারস পাওয়া যায় এই বাজারে। তাই বছরের যে সময়ই যেতে চান আনারসের দেখা মিলবে। আনারসবাগান ছাড়াও মধুপুর জাতীয় উদ্যান ঘুরে আসতে পারবেন।