'চোর' বলছি!

আম্মু বাসার বাইরে গেলেই আমার অভিযান শুরু হতো। স্টিলের আলমারি, খাটের তলা আর ফ্রিজের পেছনটা কোনো জায়গা খোঁজা বাদ রাখতাম না। ঘরের প্রতি ইঞ্চি জায়গা তন্নতন্ন করে খুঁজে বের করতাম হরলিকসের বয়াম।

মিশন সফলভাবে শেষ করতে সময় লাগত দশ মিনিট। হাতের মুঠোয় দুধের গুঁড়ো, মনে ‘সমগ্র বাংলাদেশ পাঁচ টন’ সমান আনন্দ নিয়ে, নাকের ডগা আর সমস্ত মুখে সাক্ষী রেখে বসে বসে বিটিভি ‘গিলতাম’। বাংলা ছবির গানের অনুষ্ঠান ‘ছায়াছন্দ’ অথবা ‘মাটি ও মানুষ’-এর পুনঃপ্রচার। যা হতো, তাই দেখতে আনন্দ লাগত। গুছানো ঘর নষ্ট করার মধ্যেও যে একধরনের আনন্দ আছে সেটা এখন বুঝি।

তারপর আম্মু বাসায় ফিরত।

ফ্রেশ হতে হতে তাঁর কাছে জানতে চাইতাম, আত্মীয় বাড়িতে কী নাশতা খেতে দিল, আমার কথা কিছু জিজ্ঞেস করল কি না। এমন একটা খুশি খুশি মুহূর্তে আম্মু খপ করে হাত ধরে ফেলত। ‘তুই চুরি করে হরলিকস খেয়েছিস?’

তারপর, শুরু হতো ঝাড়ি, ‘মিচকে শয়তান মাইয়াডার জ্বালায় ঘরে একটা কিছু রাখতে পারি না।’ কপাল খারাপ থাকলে একটা-দুইটা চড়-থাপ্পড় তো থাকতই। মাঝেমধ্যে কান ধরে ওঠবস করতে হতো।

এখন সেসব দিনের কথা পৌরাণিক যুগের মনে হয়। এই আমি এখন আর পিরিচে জিহ্বা লাগিয়ে ট্যাংক খাই না। তবুও কেন জানি, আজও সেই চুরির দাগ থেকে মুক্তি পাইনি! এখনো আচারের বয়ামে তেলের উচ্চতা আমার প্রতি আম্মুর বকার ব্যস্তানুপাতিক।

ইদানীং একটা ভয় হয়, শেষমেশ না আবার নাতি-নাতনির চকলেট চুরির দায় আমার ঘাড়ে বর্তায়!