জীবন

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

সদা হাসি-খুশি ছেলেটা হঠাৎ করেই নিষ্প্রভ হয়ে গেল। যে ছেলেটা দুই দিন আগেও হাসি-খুশি থাকত, প্রাণোচ্ছল আড্ডা দিত, বন্ধুদের জ্বালিয়ে মারত, সেই ছেলেটিকে এমন নিষ্প্রভ কোনো অবস্থাতেই মানাচ্ছে না। আমি ফাহিমকে বললাম, ‘এত মন খারাপ করার কী আছে? বাস্তবতা তো তোকে মেনে নিতেই হবে, তাই না?’

ফাহিম আস্তে করে বলল, ‘বাস্তবতা আমি মেনে নিয়েছি।’

‘তাহলে তোর এই অবস্থা কেন? একজন মানুষ তোকে পছন্দ না-ই করতে পারে। তার সিদ্ধান্তকে তোর রেসপেক্ট করা উচিত।’

‘আমি তার সিদ্ধান্তকে রেসপেক্ট করি।’

‘তাহলে সমস্যাটা কোথায়?’

‘বুঝছ না সমস্যাটা কী? নিপা আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল। ওর সঙ্গে কত মধুর সময় কাটিয়েছি। উঠতে-বসতে মেয়েটাকে খ্যাপাতাম। সব সময় আমাকে কেয়ার করত। এখন চোখাচোখি হলেই সে চোখটা নামিয়ে ফেলে।’

ফাহিমের কথা শুনে আমার নিজেরও মন খারাপ হয়ে গেল। আমারই বা কী বলার আছে? আর নিপা মেয়েটাই বা কী! ফাহিম তাকে প্রপোজ করেছে। এটাকে তো সে স্বাভাবিকভাবে নিতেই পারে।

আমি ফাহিমকে সান্ত্বনার স্বরে বললাম, ‘দুদিন যাক। এমনিতেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’ ফাহিম কিছু বলল না। নিষ্পলক দৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল।

আমি বললাম, ‘চল, বাইরে গিয়ে হেঁটে আসি। মনটা ফ্রেশ হবে।’

ফাহিম উঠে পড়ল।

রাত একটা। পুরো ক্যাম্পাস ঘুমিয়ে পড়েছে। রাস্তায় ঝিঁঝি পোকা আর শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে। আমরা রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। আকাশে গোল চাঁদ। চারপাশে জ্যোৎস্না থই থই করছে। এমন সময় দৃষ্টি আটকে গেল। রাস্তার পাশের ঝোপঝাড়ে একপাল জোনাকি মিটিমিটি করে জ্বলছে আর নিভছে।

আমরা দুজনেই স্থির হয়ে গেলাম। কিছু সময় পর ফাহিম বলল, ‘অনেক সুন্দর লাগছে, তাই না দোস্ত?’

 ‘হ্যাঁ, অনেক সুন্দর।’

কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকে ফাহিম আবার বলল, ‘জীবনটা এত সুন্দর কেন দোস্ত?’

আমি একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললাম, ‘জানি না রে।’

আমি কেন, পৃথিবীর কেউ জানে না। জীবনের রহস্য প্রকৃতির রহস্যের মতো। সবাই জানার চেষ্টা করে। কিন্তু কেউ জানবে না।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট