ফেসবুক পোস্টে সচেতন করেন মানুষকে

অজ্ঞান পার্টি থেকে সাবধান! ছবি: সংগৃহীত
অজ্ঞান পার্টি থেকে সাবধান! ছবি: সংগৃহীত

কখনো তিনি সবজি বিক্রেতা। ঢাকার কারওয়ান বাজারে কাঁচাবাজারের ডালির ভেতরে ঘুমিয়ে রয়েছেন। কখনো চাকরি না পাওয়া বেকার যুবক। সাক্ষাৎকার দিয়ে বের হচ্ছেন। বগলে ফাইল, মাথায় হাত, চোখের কোণে পানি। কখনো মলম পার্টির সদস্য। বাসযাত্রীর মুখে রুমাল ধরছেন। কখনো রিকশাচালক। ভাড়া নিয়ে যাত্রী তাঁর গালে চড় তুলেছেন। কখনো ছিনতাইকারী। বাসযাত্রীর হাত থেকে মুঠোফোন ছিনতাইয়ের চেষ্টা করছেন। আবার তিনিই মাদকসেবীর ভূমিকায়। এসবই তাঁর অভিনয়। আর এই তিনি হচ্ছেন সাঈদ রিমন। পেশায় একজন প্রকৌশলী।
রিমন প্রায় ৫০০ দৃশ্যে তাঁর অভিনয়ের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। প্রতিটি পোস্টে লিখে দিয়েছেন জনসচেতনতামূলক বার্তা। তাঁর এই সচেতনতামূলক পোস্ট ব্যবহার করে পুলিশ বিভাগ দেশের বিভিন্ন শহরে বিলবোর্ড তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীদের দেওয়ার জন্য তৈরি করছে ৫০ হাজার স্টিকার। এমনকি পর্যটন পুলিশের ফেসবুক পেজেও ব্যবহার করা হয়েছে রিমনের ফেসবুক পোস্ট।

সাঈদ রিমনের পোস্ট নাটোরের
সাঈদ রিমনের পোস্ট নাটোরের

মানুষের জীবনকে বিপদমুক্ত ও স্বচ্ছন্দ করার জন্য সচেষ্ট থাকেন সাঈদ রিমন। বয়স ২৯ বছর। ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বস্ত্র প্রকৌশলে স্নাতক হয়েছেন। সাঈদ রিমনের বাড়ি বরিশালের বরগুনা জেলায়। বর্তমানে গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় বস্ত্র প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছেন। স্ত্রী সাদিয়া শিক্ষকতা করেন। স্বামীর ফেসবুকে এ রকম অভিনয় আর পোস্ট তাঁর ভালোই লাগে। কারণ তাঁর স্বামী যা করেন মানুষের সচেতনতার জন্যই করেন। বললেন, ‘অফিস ও সংসারের সব দায়িত্ব পালন করার মাঝখানে কখন তিনি এসব ছবি তোলেন, এটা দেখেই মাঝেমধ্যে অবাক হতে হয়।’

মুঠোফোন ছিনতাইকারীর ভূমিকায়
মুঠোফোন ছিনতাইকারীর ভূমিকায়

৯ অক্টোবর গাজীপুরে কথা হয় সাঈদ রিমনের সঙ্গে। এ কাজ কেন করেন? রিমন বলেন, ‘এ কাজ করতে গিয়ে পদে পদে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। ছবি তুলতে গিয়ে অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। একবার একটি টেলিভিশন চ্যানেল আমার “পকেটমার” পোস্টটি একটি প্রতিবেদনের মধ্যে প্রচার করে। দেশের একটি জাতীয় দৈনিক আমার চাকরি না পাওয়া বেকার যুবক সাজার পোস্টটি একটি প্রতিবেদনে ব্যবহার করেছে। এ নিয়ে মানুষের কাছে নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে। তবে একটু বিড়ম্বনা হলেও মানুষ যাতে উপকৃত হয়, সে জন্যই এ কাজ করে যাচ্ছি।’
বর্তমানে সাঈদ রিমনের ফেসবুক (facebook.com/rimon.sayeed) বন্ধুর সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তাঁর অন্যতম ফেসবুক বন্ধু রাজশাহীর আরাফাত প্রথম আলোকে বলেন, সাঈদ রিমনের নতুন পোস্টের জন্য প্রতিদিন তিনি অপেক্ষা করেন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হয় দেখি তো আজ সাঈদ কী সেজেছেন।

সাঈদ রিমন যখন পত্রিকার হকার
সাঈদ রিমন যখন পত্রিকার হকার

নাটোর জেলা পুলিশ নাটোর শহরের ভেতরে প্রায় ২৫টি জায়গায় সাঈদের ফেসবুকের পোস্ট ব্যবহার করে বিলবোর্ড লাগিয়েছে। এগুলোতে সাঈদ রিমনকে মলম বা অজ্ঞান পার্টির সদস্য হিসেবে একজন বাসযাত্রীর নাকে রুমাল ধরতে দেখা যাচ্ছে। আরও তিনটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে খাবার খাইয়ে ও মলম লাগিয়ে কীভাবে যাত্রীদের অজ্ঞান করে তাঁর সর্বস্ব লুট করে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ছবির পাশে লেখা রয়েছে ‘এভাবে যাত্রীদের অজ্ঞান করা হয়’। ওপরে মোটা হরফে লেখা রয়েছে, ‘অজ্ঞান পার্টি/মলম পার্টি হইতে সাবধান’। ছবির নিচ দিয়ে লেখা রয়েছে, ‘সতর্কতা: অজ্ঞানকারী পার্টির শিকার ব্যক্তিরা ২-৩ দিন পর্যন্ত অজ্ঞান থাকে এবং অনেক সময় মৃত্যুর মুখে পতিত হয়।’
আরেকটি বিলবোর্ডে লেখা আছে, ‘অপরিচিত লোকের দেওয়া কোনো খাবার পরিহার করুন, যাত্রাপথে কারও মিষ্টি কথায় আকৃষ্ট হবেন না এবং অযাচিতভাবে বন্ধুত্ব থেকে সতর্ক থাকুন, যাত্রীবেশে আপনার পাশের ব্যক্তি অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় সদস্য হতে পারেন, অপরিচত ব্যক্তি/হকার/ফেরিওয়ালা বা ক্যানভাসারের দেওয়া কোনো খাবার খাবেন না (যেমন: পান, আচার, ডাব, কোমল পানীয়, উত্তেজক হারবাল ঔষধ, বিড়ি, সিগারেট, মুড়ি, চানাচুর ইত্যাদি)।’