সিনেমার নকল স্বর্গ

সিঙ্গাপুরের ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে প্রবেশমুখেই দেখা যাবে এ গ্লোব। ছবি: লেখক
সিঙ্গাপুরের ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে প্রবেশমুখেই দেখা যাবে এ গ্লোব। ছবি: লেখক

প্রায় সব দেশের পর্যটকই বেড়াতে যান সিঙ্গাপুরে। রোমাঞ্চের দারুণ সব উপকরণ যেন সাজিয়ে রাখা পৃথিবীর অন্যতম নিরাপদ এ পর্যটন নগরীতে। বেড়াতে গিয়ে ১৫ অক্টোবর প্রায় পুরোটা দিন কাটিয়ে এলাম স্যান্তোসার ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে। সিঙ্গাপুরের এ জায়গাটি পর্যটকদের সব থেকে বেশি আকর্ষণ করে। কেননা এখানে রয়েছে হলিউডের জনপ্রিয় সব সিনেমার আবহে পর্যটকদের জন্য চূড়ান্ত রোমাঞ্চের আয়োজন।

অচেনা শহরের ম্যাপ
স্টুডিওর প্রবেশ মূল্য ৭৬ সিঙ্গাপুরি ডলার। প্রবেশমুখে আপনি পাবেন একটি অচেনা শহরের ম্যাপ। সেটি দেখে এগিয়ে যেতে হবে মজার রাজ্য ইউনিভার্সেল স্টুডিওতে। কোন কোন সিনেমার চরিত্রগুলোর সঙ্গ উপভোগ করতে চান, সেটি দেখে নেওয়া যাবে মানচিত্রে। সঙ্গে থাকবে দিনের কোন কোন সময়ে দেখা যাবে সেসব।

ডিজনি ল্যান্ডের আদলে বানানো স্থাপনা
ডিজনি ল্যান্ডের আদলে বানানো স্থাপনা


সিসিমপুর
মার্কিন টিভি সিরিজ ‘সিসেম স্ট্রিট’ আমাদের দেশে ‘সিসিমপুর’ নামে পরিচিত। টেলিভিশনে দেখা সিরিজের চরিত্রগুলোর সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে সিসেম স্ট্রিট রাইডে চড়লে। আমাদের ভাষায় বললে, হালুম, ইকরি-মিকরি, শিকু, টুকটুকি—সবাই থাকবে সেখানে। অভ্যর্থনা জানাবে আপনাকে, চেষ্টা করবে চমকে দিতে। সঙ্গে করে এদের কাউকে কাউকে নিয়েও আসতে পারবেন। সে জন্য খরচ করতে হবে বাড়তি অর্থ।

ট্রান্সফরমারদের যুদ্ধে
থ্রিডি চশমা পরে এ রাইডে চড়তে হয়। রোবটদের যুদ্ধের মাঝখানে পড়ে ট্রান্সফরমার-এর নায়ক স্যামের যে অবস্থা হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা হবে আপনার। শক্ত করে স্টিয়ারিং চেপে না থাকলে, রোবটের থাবায় আছড়ে পড়তে হবে অন্ধকারে।

মমির প্রতিশোধ
এ রাইডে চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পিরামিডের ভেতরে। সেখানে দেখা হয় মমিদের সঙ্গে। অন্ধকার এ রাজ্যে দেখা মেলে দ্য মামি রিটার্নস ছবির মমিদের সঙ্গে। কখনো গায়ে এসে লাগে আগুনের আঁচ, মাথার ওপর খসে পড়তে চায় পুরোনো কফিন।

পুশ ইন বুটস সিনেমার আবহে করা একটি রাইড
পুশ ইন বুটস সিনেমার আবহে করা একটি রাইড


ভয়ংকরতম রোলার কোস্টার
ফাইনাল ডেস্টিনেশন সিনেমায় নাটকীয় রোলার কোস্টার দুর্ঘটনা এবং ভয়াবহ মৃত্যু দেখার পর কে চড়ে এতে? তার ওপর যদি বারবার সতর্ক করা হয়, ‘খবরদার! হৃদ্যন্ত্র দুর্বল হলে চড়বেন না’—তাহলে তো কথাই নেই। ডিজিটাল লকারে সব জিনিস তুলে রেখে চড়লাম বিশ্বের সব থেকে লম্বা ভয়ংকর ডুয়াল রোলার কোস্টারে। অতিকায় এক দানব যেন একবার অনেক উঁচুতে, একবার ওপর থেকে নিচে ছুড়ে দিচ্ছিল। একাধারে রোমাঞ্চকর এবং ভয়ংকর এ রাইড।

জলের যুদ্ধ
এটি ওয়াটার ওয়ার্ল্ড ছবির যুদ্ধ। ঠিক যেন গ্যালারিতে বসে লাইভ সিনেমার অভিজ্ঞতা। চরিত্রগুলো মারপিট করছে জলের ভেতর, কাছাকাছি বসলে গা ভিজে যায়। কখনো গ্যালারিতে ছুটে এসে দর্শকদের দিকে বন্দুক তাক করে গুলি করে, তবে বন্দুক থেকে গুলির বদলে বেরোয় রং।

ডাইনোসরের তাড়া
জুরাসিক পার্ক ছবির জল ও জঙ্গলের রাজ্যে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হবে এখানে। দেখা হবে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি ডাইনোসরের সঙ্গে। কোথাও নিজেরা জলকেলি করছে, কোথাও-বা আপনাকে ভেজাবে। এ জলযানে চড়ার আগে পাঁচ ডলারে রেইনকোট সংগ্রহ করে নিতে হবে। নয়তো ফোন, ওয়ালেট, পাসপোর্টসহ সব ভিজে যাবে।

তিন তরুণীর পরিবেশনা
তিন তরুণীর পরিবেশনা


জিরাফ, জেব্রা ও সিংহের সঙ্গে দেখা
মাদাগাস্কার ছবি শেষ। তারকা হয়ে গেছে অভিনেতারা। শিশু-বুড়ো সবার প্রিয় জিরাফের এখন অখণ্ড অবসর। ঠ্যাংয়ের ওপর ঠ্যাং তুলে ডাবের পানি খেয়ে সময় কাটান তিনি। নৌকায় চড়ে দেখা করে আসতে পারেন তাঁর সঙ্গে। বিশ্বের প্রথম এ মাদাগাস্কার রাইডে দেখা হবে অ্যানিমেটেড ছবি মাদাগাস্কার-এর জিরাফ, জেব্রা ও সিংহদের সঙ্গে। দুষ্টু জিরাফ মশাই ডাবের পানি কুলি করে দিতে চেষ্টা করবে আপনাদের গায়ে।

গাধার হাঁচি
শ্রেক ছবির ছোট্ট একটি অংশ ফোরডি গ্লাস পরে দেখতে হবে আপনাকে। সে এক চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা, যেখানে রাজকুমারী ফিয়োনার পেছনে ছুটে চলা শ্রেকের সঙ্গে বসে থাকার অভিজ্ঞতা হবে আপনার। কারণ, আপনাকে বসতে দেওয়া হবে একটি জীবন্ত আসনে। শ্রেকের গাধাটাও বোকা, এত জোরে হাঁচি দেবে যে, পর্দা থেকে আপনার গায়ে এসে লাগবে তার নাকের জল।
ইউনিভার্সেল স্টুডিওর বেশির ভাগ রাইডই রোলার কোস্টার ঘরানার। একেকটির অভিজ্ঞতা একেক রকম। ‘হিউম্যান’ নামের সব থেকে ভয়ানক রোলার কোস্টারে পাশের আসনে পাই এক চীনা তরুণীকে। বন্ধু ভয় পায় বলে একাই উঠেছিলেন তিনি। রাইডগুলোর শেষে থরে থরে সাজানো চরিত্রগুলোর রেপ্লিকা ও স্যুভেনির সংগ্রহ করা যাবে। পাঁচ ডলার থেকে শুরু সেসবের দাম। স্মৃতি হিসেবে বাড়ি নিয়ে আসা যাবে। বিকেলে স্টুডিওর বিভিন্ন মঞ্চে ছিল লাইভ পারফরম্যান্স, নাচ, গান। স্টুডিও ঘোরার জন্য সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় রাখতে হবে। সারা দিনের ব্যাপার বলে খাবারের স্টল, এটিএম বুথ, প্রাথমিক চিকিৎসা, বিশ্রামাগার, ইলেকট্রনিক লকার, ভিজে গেলে নিজেকে শুকিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা, মুদ্রা বদলের সুবিধা রয়েছে সেখানে।