মাইক হারুন

প্রার্থীর প্রচারণায় হারুন জমাদ্দার। ছবি: ছুটির দিনে
প্রার্থীর প্রচারণায় হারুন জমাদ্দার। ছবি: ছুটির দিনে

নির্বাচন এলেই ডাক পড়ে তাঁর। কালো রঙের ব্লেজারে রঙিন ব্যাজ, মাথায় লাল হেলমেট আর রিকশার দুই পাশে প্রার্থীর প্রতীক টানিয়ে বেরিয়ে পড়েন পথে। হেলেদুলে প্রচারণা চালান স্বরচিত গানে গানে। টানা ৩২ বছর ধরে নির্বাচনে মাইক দিয়ে প্রচারকের কাজ করছেন হারুন জমাদ্দার। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মিঠাখালী গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব এই মানুষটি এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন ‘মাইক হারুন’ নামে।

এর মধ্যে সাতটি জাতীয় সংসদ, তিনটি পৌরসভা ও চারটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসহ ইউনিয়ন পরিষদ, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি, বাজার কমিটি, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। অক্ষরজ্ঞানহীন হারুন নতুন নতুন ছড়াগান লিখে প্রচারণায় এনেছেন ভিন্নতা। এ কারণে প্রচারণায় হারুন অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রমী।

হারুন জমাদ্দার বলেন, ‘শৈশবে মাইকে নির্বাচনের প্রচারণা শুনে ইচ্ছা হতো কাজটি করার। সে সুযোগ আসে মঠবাড়িয়া শহরের সেলিম মাইক সার্ভিসের মালিক ফজলুল হকের সঙ্গে পরিচয়ের পর।’

ফজলুল হকের মাইকের দোকানে বসে প্রায়ই আড্ডা দিতেন। দোকানে প্রার্থীদের লোকজন মাইক ভাড়া নিতে আসতেন। হারুনও মাইকের সঙ্গে যেতেন প্রচারণায়। এভাবেই শুরু। ১৯৮৫ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পর্যন্ত ৭০টির বেশি নির্বাচনে তিনি প্রচারণা চালিয়েছেন।

শুরুটা শখের বশে হলেও প্রচারণা এখন তাঁর পেশা। প্রতিবছর ঘুরেফিরে কোনো না কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রার্থীদের প্রচারণায় প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকেন হারুন। শুধু নির্বাচন নয়, সব ধরনের প্রচারণায় তাঁর ব্যাপ্তি ঘটেছে।

মঠবাড়িয়া পৌর শহরের জনতা মাইকের মালিক নুরুজ্জামাল বলেন, ‘হারুনের বলার অনন্য বৈশিষ্ট্য দ্রুত মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। ভোটারদের মুগ্ধ করার মতো প্রচারণার কারণে প্রার্থীদের কাছে হারুনের কদর রয়েছে।’

তবে ডিজিটাল প্রচারণায় কণ্ঠ ধারণ করে মাইকে প্রচার করা হয়। এ কারণে প্রচারকদের দুর্দিন চলছে। এ প্রসঙ্গে হারুন জমাদ্দারের সরল উত্তর, ‘ওই প্রচারে মানুষ মজা পায় না। সারাক্ষণ এক কথা ঘুরেফিরে শোনানো হয়। আমার প্রচারে মানুষ আমাকে দেখে, কথা শোনে। নতুন নতুন ছন্দে নানা রকমের কথা শুনে মানুষ আনন্দ পায়।’