নস্টালজিয়া

.
.

আঠারো বছর আবেগের বয়স। বিবেক কাজ করে না। আঠারোয় আমি প্রেমে পড়েছিলাম এক সৌম্যদর্শন চিকিৎসকের। তার বয়স ছিল তখন পঞ্চাশ। সে ছিল তিন সন্তানের জনক।
আমি বই পড়তে ভালোবাসতাম। মহাশ্বেতা দেবী, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ধনঞ্জয় বৈরাগী, সমরেশ বসু, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, আশাপূর্ণা দেবী, বঙ্কিম, শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথে মুখ গুঁজে থাকতাম। সেই আমি প্রেমে পড়লাম। সে ছিল আমাদের হাউস ফিজিশিয়ান। তাকে আমি বড় বড় চিঠি লিখতাম কাব্য করে। চিঠির শেষে লিখতাম রবিঠাকুরের দুটো লাইন—
আমি সকল নিয়ে বসে আছি
সর্বনাশের আশায়
ইতি
এই আমি।
আমার কাব্যময় চিঠিগুলো সে পড়ত কি না জানি না। ছয় মাস পেরিয়ে গেল, তার দিক থেকে কোনো সাড়া নেই। আমি তখন তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি।
বাবা আমাকে নিয়ে বিকেলে নদীর ধারে বেড়াতে গেলেন। আমরা নদীর পাড়ে বসলাম। বাবা জানতেন জল আমি ভালোবাসি। মজার মজার কৌতুক বলে বাবা আমাকে হাসালেন। আমি তখন একবার হাসতে ধরলে থামতে পারতাম না। বাবা মমতামাখা চোখে আমার হাসি থামার অপেক্ষা করতেন। তারপর আরও একটা কৌতুক, আবার খিলখিল।
বাবা তাঁর পকেট থেকে কতগুলো চিঠি বের করলেন। বললেন, এগুলো ডাক্তার তাঁকে দিয়েছে। বাবা আমাকে বোঝালেন, তাঁর সবটুকু মমতা, ভালোবাসা, যুক্তি দিয়ে গভীর ভালোবাসায়। আমি বুঝলাম। আমি অঝোরে কাঁদলাম। বাবা আমায় কাঁদতে দিলেন। শুধু একটা হাত দিয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলেন।
জীবনের প্রথম লেখা প্রেমপত্র বাবার কাছ থেকে চেয়ে নিলাম। আজও ত্রিশ বছর ধরে যত্ন করে গয়নার বাক্সে তোলা আছে সে চিঠি। আমার প্রথম ভালো লাগা, প্রথম প্রেম।
ভালোবাসা, আ-হা ভালোবাসা।
সেগুনবাগিচা, ঢাকা।