আকাশগঙ্গার বাইরের পৃথিবী

বাসযোগ্য পৃথিবীর অনুসন্ধানের পরিধি আরও বাড়ল। আকাশগঙ্গার বাইরে এই প্রথমবারের মতো গ্রহের খোঁজ পেয়েছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। তা-ও আবার একটা নয়, একগুচ্ছ গ্রহ। ভিনগ্রহবাসীদের অস্তিত্বও মিলতে পারে এসব গ্রহের কোনোটিতে।
সূর্য যে ছায়াপথের সদস্য, তার নাম আকাশগঙ্গা (মিল্কিওয়ে)। নতুন আবিষ্কৃত গ্রহগুলোর অবস্থান এই ছায়াপথ থেকে ৩৮০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের একটি ছায়াপথে। আলো প্রতি সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে। এভাবে এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রান্ত হয়, তা-ই এক আলোকবর্ষ।
নতুন এসব গ্রহের সন্ধান পাওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ বিজ্ঞানী সিনিউ দাই ও তাঁর সহকর্মী এদুয়ার্দো গুয়েরাসের একটি নিবন্ধ আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সাময়িকী দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল প্রকাশ করেছে।
অধ্যাপক সিনিউ দাই জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ওই গ্রহগুলোর সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা। এগুলোর কোনোটার আকার চাঁদের সমান, আবার কোনোটা বৃহস্পতির সমান বড়। তাঁর দাবি, আকাশগঙ্গার বাইরে এই প্রথম কোনো গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেল।
নক্ষত্রের মতো দূরবর্তী মহাকর্ষীয় বস্তুর উজ্জ্বলতা বিশ্লেষণ কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বিজ্ঞানীরা গ্রহগুলো শনাক্ত করছেন। এই কৌশলকে বলা হয় মাইক্রোলেনসিং বিশ্লেষণ। বহুদূরের গ্রহ বা নক্ষত্র শনাক্ত করতে এটাই এখন পর্যন্ত সর্বাধুনিক এবং একমাত্র উপায়। এ ব্যাপারে এদুয়ার্দো গুয়েরাস বলেন, এই কৌশল কতটা কার্যকর ও শক্তিশালী, তার একটা উদাহরণ হতে পারে আকাশগঙ্গার বাইরে গ্রহের সন্ধান লাভ। কারণ ৩৮০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের ওই গ্রহগুলো কিছুতেই চোখে পড়ার কথা নয়। শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্রও সেগুলো ধরতে পারবে না।
বিজ্ঞানী আইনস্টাইন আগেই তাঁর আপেক্ষিকতার সূত্রে মাইক্রোলেনসিংয়ের উল্লেখ করে গেছেন। কোনো উজ্জ্বল বস্তু থেকে ছুটে আসা আলোর সামনে কোনো নিরেট বস্তু থাকলে এগুলো লেন্সের মতো কাজ করে। ফলে আলোকরশ্মিতে একধরনের চাকতির (ডিস্ক) মতো অবয়বের সৃষ্টি হয়। আশপাশে কোনো গ্রহ থাকলে এসব চাকতির উজ্জ্বলতায় তার প্রভাব পড়ে। এ ঘটনাকে মাইক্রোলেনসিং বলে। 
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তাঁদের সন্ধান পাওয়া ওই গ্রহগুলো ‘বন্ধনহীন’। অর্থাৎ তারা কোনো নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তন করছে না। ছায়াপথজুড়েই এগুলোর বিচরণ। সংখ্যায় এগুলো দুই হাজারের মতো হবে।
কয়েক দশক আগেও সৌরজগতের বাইরে কোনো গ্রহ আছে কি না, জানা ছিল না মানুষের। এরপর মহাকাশ বিজ্ঞানের উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে সৌরজগতের গণ্ডি পেরিয়ে আমাদের ছায়াপথ আকাশগঙ্গায় হাজারখানেক গ্রহ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের ধারণা, এই ছায়াপথে আরও লাখো কোটি গ্রহ রয়েছে, যেগুলোর খোঁজ আজও মেলেনি।