আমরা এমনি এসে ভেসে যাই...

অর্ধশত বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
অর্ধশত বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা

আনন্দ, উচ্ছ্বাস, কান্না, আক্ষেপ, ক্যামেরার ক্লিক, ফেলে আসা দিনের স্মৃতিচারণ, আড্ডা-গান-সেলফি সবই ছিল। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক—সব মিলিয়ে এক মিলনমেলা। সবাই যেন ভাসছিলেন মহামিলনের আনন্দে।
এই চিত্র গত ২০ জানুয়ারি জামালপুরের মাদারগঞ্জ এ এম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানের। প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবকদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছিল বিদ্যালয়ের মাঠ। সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই মাঠে প্রবেশ করতে শুরু করেন ছাত্রছাত্রীরা। মেতে ওঠেন আলাপচারিতায়। কুশল বিনিময়, দীর্ঘদিন পর সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় আনন্দে আত্মহারা তাঁরা।
সকাল সোয়া ১০টায় দাতাদের নামফলক উন্মোচন, এরপর জাতীয় পতাকা, পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। উপস্থিত ছিলেন মাদারগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান, পৌর মেয়র মির্জা কবীর, পৌর কাউন্সিলর মোখলেছুর রহমান, অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক মো. হেবজুল বারী খানসহ অনেকে।
দুপুর ১২টার দিকে নতুন চেহারা পেল উৎসব প্রাঙ্গণ। শীতের বাতাসের সঙ্গে যান্ত্রিক শব্দ ভেসে আসতেই ছাত্রছাত্রীরা করতালিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তোলে। মাঠে পৌঁছালেন প্রিয় লেখক, সাংবাদিক আনিসুল হক। সঙ্গে গীতিকার কবির বকুল। অন্য মাত্রা যোগ হলো অনুষ্ঠানে। আনিসুল হক মঞ্চে উঠে বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের মাদক থেকে দূরে থাকার জন্য শপথ করান। নিজের লেখা মা উপন্যাসের আজাদের মর্মস্পর্শী গল্প শোনান তিনি। বললেন, ‘আমি একটি উপন্যাস লিখছি। ইতিমধ্যে দুই খণ্ড লিখেছি, যার কারণে বঙ্গবন্ধুর জীবনী বারবার পড়তে হচ্ছে।’
২ দশমিক ৩৮ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা মাদারগঞ্জ এ এম পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ১৯৬৮ সালে তার যাত্রা শুরু করে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এসে প্রথম সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব করা হলো। অনুষ্ঠানটির প্রধান অতিথি মির্জা আজম এমপি মাদারগঞ্জ উপজেলার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন।
এই বিদ্যালয়ের ১৯৭২ সালের ব্যাচের ছাত্র ছিলেন ডা. হেবজুল বারী। প্রায় ৪৫ বছর পর আবার স্কুল প্রাঙ্গণে পা রেখে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছিল তাঁর। এদিক-ওদিক তাকিয়ে খুঁজছিলেন স্কুলবেলার বন্ধুদের। অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শুরুর কথা তুলে ধরেন। বলেন, আজ যে জায়গায় এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে আছে, একসময় এখানে ছিল ঘন জঙ্গলঘেরা কৈবর্তবাড়ি। মরহুম আশেক মাহমুদ তালুকদারের কনিষ্ঠ সন্তান সামছুজ্জোহা তালুকদারই প্রথম স্বপ্ন দেখেন এই জমিতে স্কুল গড়ার। আর এই স্বপ্নের কথা জানান তাঁরই বড় দুই ভাই আফতাব উদ্দিন তালুকদার ও সামছুল হুদা তালুকদার। তাঁদের বাবা আশেক মাহমুদ তালুকদারের নামে নামকরণের মধ্য দিয়ে ১৯৬৮ সালে তাঁদের এই স্বপ্নের বীজ ফসলে পরিণত করেন।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ৮৭তম ব্যাচের ছাত্র এ কে আজাদ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন পরিষদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক নজরুলসংগীতের শিল্পী শহীদ কবির পলাশ।
সন্ধ্যায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথমে আনিক বোসের নেতৃত্বে নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন শিল্পগোষ্ঠী। এরপর শুরু করেন শহীদ কবীর পলাশ। একে একে কনকচাঁপা, রিংকু, লিজা ও পুলক অধিকারী তাঁদের অনবদ্য পরিবেশনায় কনকনে শীতেও সবাইকে মাতিয়ে রাখেন গভীর রাত পর্যন্ত। আর অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন দিলরুবা সাথী।