দুঃসহ স্মৃতি

দূরে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের কালো ধোঁয়া। ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন মোহাম্মদ রুবেল; ছবিটি তিনিই তুলেছেন।
দূরে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের কালো ধোঁয়া। ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন মোহাম্মদ রুবেল; ছবিটি তিনিই তুলেছেন।

একটি আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নেপালে গিয়েছিলাম ৯ মার্চ। সেই সুযোগে হিমালয়ের দেশ ঘুরেও বেড়িয়েছি।

১২ মার্চ সোমবার। নেপালে তখন বেলা দেড়টা। আমাদের ফ্লাইট তিনটায়। আমরা একটু আগেভাগেই প্রবেশ করেছিলাম নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ৫ নম্বর ফটকের কাছে অপেক্ষা করছিলাম ইউএস-বাংলা ২১২ উড়োজাহাজের জন্য। এটা বাংলাদেশ থেকে আসবে আর ফিরতি ফ্লাইটে আমরা ঢাকায় ফিরব। এমনই কথা ছিল। সঙ্গে ছিলেন আরও ছয়জন। নেপালে কয়েকটা দিন। কিন্তু মনে হচ্ছিল, কত দিন পর যেন দেশে ফিরছি, নিজের শহর চট্টগ্রামে ফিরছি। তিনটায় ফ্লাইট, তারপর বাংলাদেশ, আবার ব্যস্ততা।

এসব ভাবতে ভাবতে বিমানবন্দরের উত্তর দিকে উড়োজাহাজটা দেখতে পেলাম। নিশ্চিত হলাম, এটাই বাংলাদেশের উড়োজাহাজ। সঙ্গে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পেলাম। মনে হচ্ছিল, চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেল। খুব অসহায় বোধ হতে লাগল।

আমরা চিৎকার করে বলতে থাকি, ‘এটা আমাদের বিমান, এটা আমাদের বিমান।’ পুরো বিমানবন্দরে যেন পিনপতন নীরবতা। দূর থেকে ভেসে আসছে সাইরেনের আওয়াজ। আমরা একজন অন্যজনের দিকে তাকাতে পারছিলাম না, দুই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। নিজেকে সামলে অন্যদের সান্ত্বনা দিতে থাকলাম। আর ভাবছি, এ বিমানে দেশের কতজন না আছে, কী হলো এটা? আমার দেশের মানুষগুলোর জন্য তখন কিছুই করতে পারছিলাম না।

নিয়মনীতির বালাই তখন মাথায় ছিল না, ব্যাগ থেকে ক্যামেরাটা বের করে বিমানবন্দরের ভেতর রানওয়েতে ঢুকতে গেলাম। কিন্তু পুলিশ আটকে দিল। তখন বিমানবন্দরের ভেতর থেকেই কিছু ছবি তুলি।

সেদিন উদ্বেগজনক অবস্থায় ত্রিভুবন বিমানবন্দরে পার হয় পাঁচ ঘণ্টা। পাঁচটা ঘণ্টা পর অন্য একটি উড়োজাহাজে আমাদের ঢাকায় পাঠানো হয়। কিন্তু এই সময়টুকু, কিংবা এরপরও, এই যে এখনো—আমাদের ভেতরের অবস্থা কী, তা বোঝানো যাবে না। চোখের সামনে এত মানুষের এমন অসহায়, মর্মান্তিক অবস্থা দেখা দুঃসহ বেদনার।

মোহাম্মদ রুবেল
চট্টগ্রাম