বাদামি রঙের দিনগুলো

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

কিছুদিন আগেও এমন শৈশব চিন্তা ছিল না। সম্ভবত তখন পর্যন্ত নিজেকে ‘শিশু’ ভেবে এসেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ছে। ঢাকার এই কোলাহলময় পরিবেশে এসে সেই শান্ত সুদূরে হারিয়ে যেতে ভালো লাগে।

বাড়ি গ্রামে হওয়ার কারণে ছোটবেলা কেটেছে অদ্ভুত সুন্দরভাবে। গাছে উঠেছি, সাঁতরে খাল পার হয়েছি, বাজিয়েছি আম-আঁটির ভেঁপু। গানের মাস্টারকে ফাঁকি দিয়ে ঘুড়ি ওড়াতে গিয়েছি (এই ফাঁকিবাজির কারণেই অতি অকালে আমার গান শেখার ইতি হয়েছিল এবং আমি হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম)।

যখন ছোট ছিলাম, আমার ছোট কাকা বৃত্তি পেয়ে চীনে পড়তে চলে গেলেন। আমি আর আমার বন্ধুদের জন্য এ এক অতি রোমাঞ্চকর ঘটনা। তিনি অনেক চিঠি আর ছবি পাঠাতেন। এ কারণে ছোটবেলায় আমার চিন্তাভাবনার একাংশ দখল করে থাকত পুতুলের মতো সুন্দর দেখতে চায়নিজ বাচ্চারা। চায়নিজ ম্যাগাজিনের পাতা ওলটাতে কত কী যে হাবিজাবি ভাবতাম!

এবার ক্লাস টুয়ের একটা গল্প বলি। তখনকার ইংরেজি বইতে বৃত্ত, ত্রিভুজ, বর্গ ইত্যাদি দিয়ে একজন লোকের আদল তৈরি করা ছিল। লোকটার হাতে চতুর্ভুজ আকৃতির একটি স্যুটকেস। তো একদিন ক্লাসে হোমওয়ার্ক দিল, নিজে ওরকম একটি ছবি এঁকে ক্লাসে আনতে হবে। আঁকার জন্য মোটামুটি সহজ একটা ছবি। কাজেই আঁকতে কারও কোনো ঝামেলা হলো না। ঝামেলা হলো, যখন ছবিতে রং করতে গেলাম। বইতে বাদামি রং ব্যবহার করা হয়েছে, আর আমাদের কারও কাছেই বাদামি রঙের কোনো ক্রেয়ন নেই! অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বাদামি রং করার জন্য কোনো রং পেনসিল পাওয়া গেল না। শেষে কোনো উপায় না পেয়ে একজন অদ্ভুত একটি উপায় বলল।

চুলার পোড়ামাটি!

গ্রামাঞ্চলে সাধারণত প্রায় সব বাড়িতেই মাটির চুলা বা উনুনে রান্না করা হয়। একসময় চুলার মাটি পুড়ে বাদামি হয়ে যায়। সেই বাদামি মাটি দিয়ে ছবি রং করেই শেষমেশ আমরা আমাদের হোমওয়ার্ক করেছিলাম!

আহা, আবার যদি সেই বাদামি রঙের দিনগুলোতে হারিয়ে যেতে পারতাম...!

ফাইজুন নাহার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়