ভ্রাম্যমাণ

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

নিজেকে আমার কখনো ভ্রাম্যমাণ মানুষ বলে মনে হয়; আবার অনেক সময় মনে হয় ভ্রাম্যমাণ সাংবাদিক বলেও। শহরে টইটই করে ঘুরে বেড়াই। কোনো ঘটনা ঘটার পূর্বাভাস পেলে ছুটে যাই সে জায়গায়। তথ্য সংগ্রহ করি। স্থানীয় পত্রিকার অফিসে অতিথিদের চেয়ারে এসে বসি। এটাই আমার অফিস। সেখানে বসে খেটে প্রতিবেদন বানিয়ে জাতীয় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধিদের কাছে পাঠাই। বিনিময়ে কিছু নয়, সুযোগ হলে কোনো পত্রিকাতে যদি ওরা আমাকে সুযোগ করে দেয়!

 যেখানেই যাই ক্যামেরাটা আমার নিত্যসঙ্গী। এটা কিনতে ১৫ হাজার টাকা লেগেছে। ছাত্রাবস্থায় ১৫ হাজারের সংখ্যাটা বিশাল। তার ওপর যদি পরিবারের টানাপোড়েন থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। তাহলে ক্যামেরাটা কিনলাম কীভাবে?

 পাঁচটা বাচ্চাওয়ালা মুরগি ছিল মায়ের। ক্যামেরাটা কিনতে ডিম ও অর্ধেক বাচ্চা বিক্রি করেছি; বাবার ধানের গোলা থেকে তিন বস্তা ধান সরিয়ে ৪ হাজার টাকার মতো দিয়েছিলেন মা। নীলি নামের আমার সর্বংসহা একটা প্রেমিকা ছিল, এখনো আছে। সে হাতখরচ ও প্রসাধনীর খরচ বাঁচিয়ে ৩ হাজার টাকা আমার হাতে তুলে দিয়ে বলল, ‘দুই মাস আমার খুব কষ্ট হবে। তারপরও তোমার ক্যামেরাটা কেনা হোক, তোমার স্বপ্ন পূরণ হোক।’

 ভাগ্য ভালো যে বাকি টাকা সংগ্রহ করতে আমার তেমন বেগ পেতে হয়নি। মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুকুর জরিপের কাজটা পেয়েছিলাম। মাত্র ১৫ দিনের কাজ। ৮ হাজার টাকা পেলাম। ৩, ৪ আর ৮ হাজার মিলিয়ে কিনে ফেললাম আমার আকাঙ্ক্ষিত ক্যামেরা। সাংবাদিক হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম আমি।

এক বড় ভাইয়ের নির্দেশনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলাম রাজনৈতিক দলের কাউন্সেলিং সভায়। নিজেদের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ লেগে যায়। এক গ্রুপের কিছু সদস্য আমার ক্যামেরা ভাঙতে এসেছিল। দৌড়ে পালিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু শেষরক্ষা করতে পারিনি। দৌড়ানোর সময় বিদ্যুতের খুঁটি লেগে ঠাস! হাত থেকে ক্যামেরা ছিটকে পড়ে গেল রাস্তায়। নিমেষেই চুরমার।

 আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। ক্যামেরাটিতে তিন হাজারের ওপরে ছবি ছিল। তার চেয়েও বড় কথা, সংবাদের ছবি তো আছেই, আমার ব্যক্তিজীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি ছিল এতে, যা আমি আর কখনো ফিরে পাব না।

তন্ময় আলমগীর

গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ