যাওয়া-আসায় বাংলা চ্যানেল জয়

কোচ জিতেন্দ্র খাসনিসের সঙ্গে সাম্পানা রমেশ সেলার (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত
কোচ জিতেন্দ্র খাসনিসের সঙ্গে সাম্পানা রমেশ সেলার (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফের ফিশারিজ জেটিঘাট থেকে বঙ্গোপসাগরের বাংলা চ্যানেল ধরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ—দূরত্ব ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার। সাগরের নীল জল কেটে এই দূরত্ব নৌযানে পাড়ি দিতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। রোমাঞ্চপ্রিয় সাঁতারুদের কেউ কেউ সেই দূরত্বই পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন।

বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া সাঁতারুর সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে একবার পাড়ি দিয়ে ফের সাঁতরে ফিরে আসার মতো দুঃসাহসিক অভিযান কমই হয়। ভারতের ১৭ বছর বয়সী সাম্পানা রমেশ সেলার গত ৩০ মার্চ সে কাজটিই করলেন। যাওয়া-আসা মিলিয়ে ৩২ দশমিক ২ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে তাঁর সময় লেগেছে ৯ ঘণ্টা ১০ মিনিট।

২ এপ্রিল এই সাঁতারের আয়োজক এভারেস্ট একাডেমি সাম্পান্না রমেশ সেলারকে সংবর্ধনা দেয় ঢাকার একটি হোটেলে। সেখানেই কথা হলো সাম্পান্নার সঙ্গে। সাম্পান্না বলছিলেন, ‘বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া আমার জন্য খুব উপভোগ্য ছিল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটিই আমার প্রথম একক দূরপাল্লার সাঁতার। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী বছরের শুরুর দিকে টানা চারবার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ফিরতে চাই বাংলাদেশে।’

বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে ২৭ মার্চ বাংলাদেশে আসেন সাম্পান্না ও তাঁর কোচ জিতেন্দ্র খাসনিস। ৩০ মার্চ সকাল ৫টা ৪০ মিনিটে সাম্পান্না সাঁতার শুরু করেন সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জেটি থেকে। বিরামহীন সাঁতারে টেকনাফের ফিশারিজ জেটি পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগে ৫ ঘণ্টা। সেখানে পৌঁছে মিনিট দশেক বিশ্রাম নেন। এ সময় পানি ও ফলের রস পান করেন তিনি। ১০ মিনিটের বিশ্রাম শেষে ফের সাঁতরে ছোটেন সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দিকে। ফিরতি সাঁতারে তাঁর সময় লাগে ৪ ঘণ্টা।

বাংলা চ্যানেল সাঁতরাচ্ছেন সাম্পানা
বাংলা চ্যানেল সাঁতরাচ্ছেন সাম্পানা

কোচ জিতেন্দ্র খাসনিস বললেন, ‘সাম্পান্না সবে একাদশ শ্রেণির ছাত্র। পরীক্ষা থাকা সত্ত্বেও আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এই সময়টা বেছে নেন বাংলা চ্যানেল জয় করতে। তারপরও আন্তর্জাতিকভাবে ১৬ বছর এবং তার কম বয়সী সাঁতারুর জন্য উন্মুক্ত সাগরে দূরপাল্লার সাঁতার নিষিদ্ধ। সাম্পান্না সতেরোতে পা দিতেই দেরি না করে আমরা ছুটে আসি এই বাংলায়।’ এই কোচ চান সাম্পান্নাকে দ্রুত সময়ে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ দ্রুততম সাঁতারুরূপে গড়ে তুলতে, অলিম্পিক জেতাতে।

সাম্পান্নার বাবা অমল আধাভ সেলার জেলার উপকমিশনার। মা রুপালি রেপালি একজন গৃহিণী। বড় বোন নিধি সেলারও একজন তুখোড় সাঁতারু। মূলত বড় বোনের দেখাদেখি আর মা-বাবার উৎসাহে সাঁতারে আগ্রহী হন সাম্পান্না। জিতেন্দ্র খাসনিসের তত্ত্বাবধানে নিধি যখন সাঁতারের প্রশিক্ষণ নিতেন, চার বছর বয়সী ছোট্ট সাম্পান্নাও খেলার ছলে জলে পড়ে থাকতেন। পানি দেখামাত্রই ঝাঁপিয়ে পড়ার স্বভাব ছিল তাঁর। তাঁর এমন আগ্রহ দেখে সাম্পান্নার প্রশিক্ষণের ভার নেন তিনি। শনি ও রোববার স্কুল ছুটি, সারা দিন কাটে সাঁতারে। ১০-১২ কিলোমিটার সাঁতার চলত সাম্পান্নার। নিজ দেশ ভারত তো বটেই, এরই মধ্যে মালয়েশিয়ায় একবার ও সিঙ্গাপুরে দুবার লেক সাঁতারে অংশ নেন। বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া ছিল উন্মুক্ত সাগরজলে সাম্পান্নার প্রথম কোনো দূরপাল্লার সাঁতার।