জীবন হাতে নিয়ে জীবিকা

মৃত্যুকূপে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন মো. শাকিল। ছবি: ছুটির দিনে
মৃত্যুকূপে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন মো. শাকিল। ছবি: ছুটির দিনে

নিপাট সাদাসিধা চেহারার মানুষ মো. শাকিল। বয়স ২৪ বছর। প্রথম দেখায় তেমন সাহসী মনে হয় না। তবে তাঁর কাজের কথা শোনার পর মানতেই হলো শাকিল শুধু সাহসী নন, বরং দুঃসাহসী। এই তরুণ মোটরসাইকেলের খেলা দেখান। প্রাণ হাতে করে মৃত্যুকূপে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে মোটরসাইকেল চালান। চলন্ত মোটরসাইকেলে কখনো শুয়ে পড়েন, দুই হাত মেলে দাঁড়িয়ে যান, আবার কখনো বা শুধু দুই পায়ে নিয়ন্ত্রণ নেন। গা ছমছম করা শাকিলের এমন কসরত দেখে আনন্দ পান কূপের চারপাশের উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা দর্শক।

সার্কাস বা প্রদর্শনীর এই খেলা ‘মৃত্যুকূপ’ নামে পরিচিত। এটি আসলে গাছের গুঁড়ি, কাঠের পাটাতন, বাঁশ ও লোহার আংটা দিয়ে তৈরি গোলাকার বিশেষ এক খাঁচা। এর ভেতরে কাঠের পাটাতন মাটি থেকে ২০-২৫ ফুট ওপরে উঠে গেছে। কূপের জমিন থেকে এই দেয়াল বেয়ে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল বা গাড়ি চালিয়ে ওপরের দিকে উঠতে হয়।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের মিরসরাইতে যে দলটি এসেছে সেটির নাম ‘দ্য রাশিয়ান মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার খেলা প্রদর্শনী’। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে ঘুরে মেলা-পার্বণে দেখানো হয় এই বিশেষ খেলা। দলের মোটরসাইকেলচালক মো. শাকিল।

রোমাঞ্চপ্রিয় মো. শাকিল
রোমাঞ্চপ্রিয় মো. শাকিল

মিরসরাইয়ে এই আসর বসেছে গত ১৬ মার্চ। ২৯ মার্চ সকালে মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় মো. শাকিলের সঙ্গে। শাকিল শখের বসেই শুরু করেন মোটরসাইকেলের একই খেলা বা স্টান্ট দেখানো। তবে এখন এটিই তাঁর পেশা। উপার্জন যা হয়, তাতেই চলে জীবন। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে শাকিল বড়। শাকিল বলেন, ‘নিজের খরচ নিজেই চালাতে পারি আর গ্রামে বাবা-মাকে টাকা পাঠাই।’

কীভাবে জড়ালেন মৃত্যুকূপে? শাকিল সে গল্পই বলছিলেন। ২০১১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে শাকিলদের এলাকায় এমন একটি দল গিয়েছিল। তখন তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন, ফল বেরোনোর অপেক্ষায়। বন্ধুদের সঙ্গে দেখতে গিয়ে মুগ্ধ হন, রোমাঞ্চ অনুভব করেন। তখন সে দলের সঙ্গেই ভিড়ে যান, চলে আসেন ঢাকায়। শাকিল বলেন, ‘পরে পরীক্ষায় পাস করেছিলাম, কিন্তু আর পড়াশোনা করা হয়নি।’

শুরুতে তিনি সহকারী ছিলেন। বেতন পেতেন মাসে ৩ হাজার টাকা।  দিনে দিনে দক্ষ হয়ে ওঠেন। অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বেতনও বাড়ে। এখন মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন শাকিল। বললেন, ‘প্রদর্শনী চলার সময় অনেক দর্শক আমার খেলা দেখে খুশি হয়ে ৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত উপহারও দেন।’

বছরে ছয় মাস এই দলের সঙ্গে কাজ করেন শাকিল। বাকি সময়টা বাড়িতেই কাটান। বিপজ্জনক খেলা দেখাতে গিয়ে একবার দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন। বেশ আহত হন তখন।  তাই মাঝেমধ্যে ভাবেন, ভালো কোনো চাকরি পেলে ছেড়ে দেবেন ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি।