চা খান, পত্রিকা পড়ুন

নাসের আলীর চায়ের দোকানে চায়ের সঙ্গে পত্রিকা পড়ার সুযোগ মেলে। ছবি: লেখক
নাসের আলীর চায়ের দোকানে চায়ের সঙ্গে পত্রিকা পড়ার সুযোগ মেলে। ছবি: লেখক

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে খাঁপুর মোড়। এই মোড়টায় বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান। তবে নাসের আলীর দোকানটা একটু আলাদা। কারণ এই দোকানে টেলিভিশনে নাটক-সিনেমা দেখিয়ে ক্রেতা টানা হয় না। নাসের আলীর দোকানে মানুষ চা পান করতে আসেন পত্রিকা পড়ার টানে। দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাস বাড়ানোর জন্য তাঁর এই উদ্যোগ ১৪ বছরের।

গত ১৭ মার্চ তাঁর দোকানে গিয়ে কথা হলো বেশ কয়েকজন ক্রেতা ও পাঠকের সঙ্গে। তাঁরা বললেন, এলাকাটি প্রত্যন্ত। পত্রিকা বিক্রেতারা তেমন একটা আসেন না এদিকে। আগ্রহী মানুষেরা উপজেলা সদরে গিয়ে পত্রিকা পড়েন কিংবা কেনেন। তবে খাঁপুরের চা-বিক্রেতা নাসের আলীর জন্য পত্রিকা পড়ার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

৫৮ বছর বয়সী নাসের আলী জানালেন, ২০০৪ সাল থেকে তিনি তাঁর চায়ের দোকানে পত্রিকা রাখা শুরু করেন। সে সময় জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) দ্বিতীয় প্রধান সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইয়ের সম্পর্কে এলাকার লোকজন জানতে চাইত। তাঁর চায়ের দোকানে লোকজন এসে বিভিন্ন গল্প করত। নাসের আলী ভাবলেন, উপজেলা সদর থেকে পত্রিকা আনলে আসল খবর জানা যাবে।

সেই থেকে শুরু। এখন পত্রিকার সংখ্যা এবং পাঠকের সংখ্যাও বেড়েছে। প্রতিদিন দুই শতাধিক পাঠক এসে পত্রিকা পড়েন নাসেরের চায়ের দোকানে, এমনটাই জানালেন তিনি।

স্থানীয় একজন বললেন, দুপুরে পৌঁছায় প্রতিদিনের পত্রিকা। তখন থেকে শুরু হয় পাঠকের আনাগোনা। তবে বিকেল থেকে বাড়ে পাঠকের সংখ্যা। পাঠকের সংখ্যার দিকে নজর রেখে পত্রিকার সংখ্যা বাড়িয়েছেন নাসের আলী। প্রতিদিন রাজশাহীর স্থানীয় তিনটি পত্রিকা কিনে আনেন নাসের। এ ছাড়া দেশ এবং দেশের বাইরে কোনো বড় ঘটনা ঘটলে স্থানীয় পত্রিকার পাশাপাশি জাতীয় পত্রিকা কেনেন তিনি।

পল্লি চিকিৎসক দিলীপ কুমার প্রতিদিন বিকেলে এসে এই দোকানে পত্রিকা পড়েন। বললেন, ‘নাসের আলী আসলে মানুষকে পত্রিকা পড়িয়ে মজা পান।’ ভবানীগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ হাতেম আলীর কথায়, ‘নাসের আলীর মতো একজন চা-দোকানি নিজের টাকায় এত দিন ধরে মানুষকে পত্রিকা পড়িয়ে আসছেন, এটাই বড় কথা। তাঁর এই উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়।’

নাসের আলী নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। কিছুদিন গ্রামের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করলেও পরে সনদপত্র না থাকায় চাকরি স্থায়ী হয়নি। একসময় চা বিক্রি শুরু করেন। এই আয়ের টাকায় সংসার চলে তাঁর। সংসারে আছেন স্ত্রী এবং এক ছেলে। নাসের আলী ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে এখন একটি ওষুধ বিপণন পেশায় আছেন।

চায়ের দোকানে পত্রিকা রাখতে মাসে ৪০০ টাকার মতো খরচ হয় নাসের আলীর। কিছু টাকা বাঁচিয়ে পরিশোধ করেন পত্রিকার বিল। নাসের আলী বললেন, সংসারে অভাব থাকলেও মানুষকে পত্রিকা পড়ানোর কাজটি তিনি চালিয়ে যেতে চান।