উদ্ভাবনের আনন্দ

শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রকল্প বর্ণনা করছেন
শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রকল্প বর্ণনা করছেন

রান্নাঘরে গ্যাসের লাইন ফুটো হয়ে কিংবা গ্যাসলাইন বিস্ফোরণের কারণে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার খবর মাঝেমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর উত্তরায় একটি ভবনের সপ্তম তলার ফ্ল্যাটে এমনই একটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। মুহূর্তে তছনছ হয়ে গেছে সাজানো-গোছানো একটি পরিবার। অগ্নিদগ্ধ হয়ে দুই সন্তানের করুণ মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন গৃহকর্ত্রী, তাঁর আরেক সন্তান ও গৃহকর্মী।

এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে সহায়ক হতে পারে দাহ্য গ্যাস শনাক্তকারী ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা ঘরের পরিবেশে দাহ্য গ্যাসের মাত্রা বেড়ে গেলেই সতর্কসংকেত দেয়। ব্যবস্থাটি তৈরি করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। ২ এপ্রিল রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক প্রদর্শনীতে দেখানো হলো এই ব্যবস্থা। বাতাসে দাহ্য গ্যাসের মাত্রা বেড়ে গেলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে উঠছে সতর্ককারী বাতি, বেজে উঠছে সাইরেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস ক্লাবের উদ্যোগে ‘প্রজেক্ট ম্যানিফেস্টেশন’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

দাহ্য গ্যাস শনাক্তকারী ওই ব্যবস্থা ছাড়াও প্রদর্শনীটিতে ছিল আরও অর্ধশত সম্ভাবনাময় উদ্ভাবন। একটি উদ্ভাবনের নাম ‘অটোমেটেড ইরিগেশন সিস্টেম উইথ পাম্প স্টেশন সিকিউরিটি’। এই ব্যবস্থার উদ্ভাবক দলের সদস্যরা জানালেন, অনেক সময়ই মাটির আর্দ্রতা নিরূপণ না করেই জমিতে সেচ দেওয়া হয় অথবা বন্ধ রাখা হয়। এতে ফসলের যেমন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, একইভাবে জ্বালানি ও পানির অপচয় হয়। তাঁদের উদ্ভাবিত ব্যবস্থাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাটির আর্দ্রতা যাচাই করবে। সেচের প্রয়োজন পড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেচপাম্প চালু হয়ে যাবে, আবার কাঙ্ক্ষিত আর্দ্রতা নিশ্চিত হওয়ার পর পাম্প বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে বাঁচবে জ্বালানি, কমে আসবে পানির অপচয়। আবার পাম্পটি যে ঘরে থাকবে, তাতে নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে ভোলেননি শিক্ষার্থীরা। অপরিচিত কেউ ওই ঘরে ঢুকলেই সাইরেন বেজে উঠবে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা চলে যাবে কৃষকের মুঠোফোনে।

আরেক দল শিক্ষার্থী উদ্ভাবন করেছেন স্বয়ংক্রিয় মাটি পরীক্ষার ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষক নিজেই তাঁর মাটির গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর মাত্রা জেনে নিতে পারবেন। ফলে মাটি কোন ফসলের জন্য বেশি উপযোগী, নাইট্রোজেনসহ অন্য উপাদানগুলো কী পরিমাণে রয়েছে, কতটুকু সার প্রয়োগ প্রয়োজন—কৃষকের জন্য সবই নির্ণয় করা সহজ হবে বলে জানালেন উদ্ভাবক দলের সদস্যরা।

আয়োজকেরা জানালেন, তাঁদের প্রদর্শনীতে আরও আছে এমপিউ সেনসর ব্যবহারের মাধ্যমে পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর উন্নতি-অবনতি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা, সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে গাড়ির স্বয়ংক্রিয় থামার ব্যবস্থা, বাতাসের মান নির্ণয়ব্যবস্থা ইত্যাদি।

নিজের তৈরি রোবট নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এই শিক্ষার্থী
নিজের তৈরি রোবট নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এই শিক্ষার্থী

আবর্জনা ও বাতাসের মান নির্ণয়ের একটা ব্যবস্থাও চোখে পড়ল। ডাস্টবিনসহ নানা জায়গায় ময়লার স্তূপ জমে থাকা আমাদের দেশের চেনা দৃশ্য। এর থেকে রেহাই দিতে পারে আবর্জনা ও বাতাসের মাননির্ণয় ব্যবস্থা। ডাস্টবিনে ময়লার স্তূপের উচ্চতা নির্ণয় করে এটি যেমন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেবে, একইভাবে কয়েক দিনের আবর্জনা জমে দুর্গন্ধ ছড়ালে এবং পরিবেশ দূষণ করলে বাতাসের মান নির্ণয় করে সতর্কসংকেত পাঠাবে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খলিলুর রহমান বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এসব উদ্ভাবন সম্ভাবনাময়। তবে গণমানুষ পর্যন্ত এসব উদ্ভাবন পৌঁছাতে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা খুব জরুরি।

এসইউবিএমসির যাত্রা শুরু

স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ মার্কেটিং ক্লাবের (এসইউবিএমসি) যাত্রা শুরু হয়েছে সম্প্রতি। গত ২৯ মার্চ তারা ‘দি চেঞ্জ ইন মার্কেটিং ল্যান্ডস্কেপ’ শিরোনামে একটি কর্মশালার আয়োজন করেন। রাজধানীর কলাবাগানে, স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মো. আনোয়ারুল কবির এবং ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। এ ছাড়া বিশেষ আলোচক ছিলেন প্রথম আলোর ইয়ুথ প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মুনির হাসান এবং ব্র্যান্ড কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপক এ বি এম জাবেদ সুলতান। একটি পণ্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে মার্কেটিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ, আধুনিক যুগে কীভাবে বদলে গেছে মার্কেটিংয়ের ধরন...এসব নানা দিক নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষক ও আমন্ত্রিত অতিথিরা।