'বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শেখার চেষ্টা করছি'

রোবট সোফিয়া
রোবট সোফিয়া

৬ ডিসেম্বর ঢাকায় বেশ ব্যস্ত দিন কাটবে নাগরিকত্ব পাওয়া বিশ্বের প্রথম রোবট সোফিয়ার। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের বড় বড় প্রদর্শনী ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭’ উপলক্ষে ঢাকায় আসছে এই রোবট। মেলা উদ্বোধনের পর একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেবে সে। এতে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলবে এবং প্রশ্নের উত্তরও দেবে। তবে তার আগেই আই-মেসেজের মাধ্যমে সোফিয়ার সাক্ষাৎকার নিলেন মো. মিকসেতু

রস+আলো: কেমন আছেন?

সোফিয়া: বেশি ভালো না! চার্জ শেষের দিকে। ব্যাটারি টিউ টিউ করে অ্যালার্ম দিচ্ছে। যা বলার

দ্রুত বলুন।

র.আ.: আচ্ছা আচ্ছা। তো আপনি পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে ঘুরতে পারেন না?

সোফিয়া: ভাই, এই পাওয়ার ব্যাংক জিনিসটা কী? সুইস ব্যাংকের মতো কিছু? অবশ্য বাংলাদেশিরা ব্যাংক সম্পর্কে ভালো খোঁজখবর রাখে শুনেছি।

র.আ.: একদম ঠিক শুনেছেন। আমরা ব্যাংকের সমঝদার। বিশেষ করে যেসব ব্যাংকে টাকা পাচার করা যায় আর যেসব ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত দিতে হয় না।

সোফিয়া: আপনাদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ফেরত দিতে হয় না? বলেন কী! আপনারা তো অনেক ধনী দেশ! লোকে তাহলে নিম্ন–মধ্যবিত্ত বলে কেন?

র.আ.: সোফিয়া, অর্থনীতির এই সূক্ষ্ম মারপ্যাঁচ আপনি বুঝবেন না! আসল কথায় আসি। বাংলাদেশে আসার আগেই তো একটা দারুণ ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। এ ব্যাপারে কিছু বলুন।

সোফিয়া: ওহ্, ওটা আসলে আমার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আমাকে করতে বলেছে। আমি নিজে থেকে করিনি। তারা বলেছে, আমি এখন অনেক বড় সেলিব্রিটি। আর সেলিব্রিটিরা বিভিন্ন কাজ করার আগে ভিডিও বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে হাইপ তৈরি করার চেষ্টা করে। এটা সে ধরনের একটা চেষ্টা ছিল।

র.আ.: ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আসার জন্য মুখিয়ে আছেন। এ সম্পর্কে কিছু শুনতে চাই।

সোফিয়া: শুনেছি বিদেশি কোনো ভিআইপি অতিথি গেলে বাংলাদেশে নাকি এয়ারপোর্ট রোড আটকে বিশাল সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হয়? শহরের সব মানুষ রাস্তা আটকে স্বাগত জানায়? আমার জন্যও কি পুরো ঢাকা শহর আটকে স্বাগত জানাবেন আপনারা? এটা ভাবতেই কিন্তু আমি রোমাঞ্চিত বোধ করছি!

র.আ.: আপনি একটু ভুল শুনেছেন। রাস্তা আটকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় শুধু রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত

কেউ এলে।

সোফিয়া: আপনার তথ্যের জন্য ধন্যবাদ। শুনলাম আপনাদের ওখানে নাকি এখন শিশুরাও রাজনীতি করতে পারে। তাহলে আমি কি রোবট কমিটি গঠন করতে পারি না? তাহলে নিশ্চয়ই ভিআইপি রাজনীতিবিদের মতো ট্রিটমেন্ট পাব?

র.আ.: হা হা হা! ভালো বলেছেন। চেষ্টা করতে সমস্যা নেই। যা হোক, ঢাকায় আসা উপলক্ষে কেমন প্রস্তুতি নিচ্ছেন?

সোফিয়া: অনেক শপিং করেছি। শুনেছি, ওখানে অনেক গরম থাকবে। তাই সানস্ক্রিন কিনেছি অনেকগুলো। প্রতিদিন সময় ধরে ভাঙা ভাঙা বাংলা বলা শিখছি। যেমন, আমি ঠোমাডেড় অনেক বালোভাসি।

র.আ.: শুদ্ধ বাংলা না শিখে ভাঙা বাংলা কেন শিখছেন?

সোফিয়া: এটা আসলে একটা কৌশল। বাইরে থেকে যারা বাংলাদেশে যায়, তারা ভুল বাংলায় এক লাইনে একটা কিছু বলে। আপনারা পরে সেটা নিয়ে অনেক প্রশংসা করেন। তাই আমার প্রতিষ্ঠান বলেছে, শুদ্ধ বাংলা শিখে লাভ নেই। ভাঙা বাংলায় বললেই বেশি প্রচার পাওয়া যাবে। মানুষ মজা পাবে। তা ছাড়া এটার চর্চা নাকি খোদ বাংলাদেশেই হচ্ছে।

র.আ.: তা ঠিক। আচ্ছা, বাংলা শেখা ছাড়া আর

কিছু করছেন?

সোফিয়া: শিখছি। রিকশায় উঠলেই নাকি আজকাল টানা পার্টি নামক একটি বিশেষ চৌকস দল তাদের প্রতিভা জাহির করে। তাই ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার শেখার চেষ্টা করছি। আর বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, বিশেষ করে ওড়না পরা শিখছি।

র.আ.: এটা অবশ্য একটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। আর খাবারদাবারের ব্যাপারে কিছু ভেবেছেন? বাংলাদেশে এলে কী খেতে চান?

সোফিয়া: ইউটিউবে দেখলাম, আপনারা নাকি নুডলসের অনেক ভক্ত। একজনকে দেখলাম নুডলসের আচার বানাচ্ছেন। এটা চেখে দেখা যায়।

র.আ.: এটাও খুব ভালো সিদ্ধান্ত।

সোফিয়া: আমার চার্জ কিন্তু একেবারে শেষের দিকে...

র.আ.: ওকে ওকে। শেষ প্রশ্ন। আশা করি, এটার উত্তর দিতে গেলে আপনি হ্যাং করবেন।

সোফিয়া: ওকে, চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্টেড!

র.আ.: আচ্ছা, আপনার বয়স কত?

সোফিয়া: বিপ...বিপ...বিপ... (সোফিয়া হ্যাং করেছেন সম্ভবত!)

*আই-মেসেজ = ইমাজিনারি মেসেজ (কাল্পনিক বার্তা)