তেল দিন বুঝেশুনে

রাজনৈতিক নেতারা যা-ই করুন, কর্মীরা সব সময় তাঁদের নেতাদের তেল দিয়ে চুপচুপে করে রাখেন। ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা বেশির ভাগ তেল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন আজকাল। অন্যরা এই তেল দেওয়াকে কীভাবে নিল, সেটা তাঁরা ভাবেনও না। তাঁদের কথা ভেবে তেল দেওয়ার আরও কিছু নমুনা দিলেন মো. মিকসেতু

স্ট্যাটাস ১

ত্যাগী ছাত্রনেতা, রাজপথের লড়াকু সৈনিক, প্রাণপ্রিয় নেতা, সদা হাস্যোজ্জ্বল হাসান ভাই আজ সকালে হালিম মামার দোকানে বাকিতে পরোটা আর ডালভাজি খেয়েছেন। এরপর পাশের টং দোকানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাকিতে এক কাপ রং চা-ও খেয়েছেন তিনি। একজন বিশাল বড় নেতা হওয়ার পরও সাধারণ ছাত্রের মতোই হালিম মামার দোকানে পরোটা-ভাজি খাওয়া এবং টং দোকানে চা খাওয়ায় ভাইকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন 

সেলফি ১

বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব, স্যারদের নয়নের মণি, ভিসি স্যারের আস্থা, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আদর্শ, ফাদার অব অধ্যবসায়, বিদ্যার সাগর বিলকুল বিল্লু ভাই আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় নিজ ডিপার্টমেন্টের ক্লাসরুমে বসে ক্লাস করেন। তাঁর উপস্থিতিতে ক্লাসে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। ক্লাস টিচার শুরুতেই অ্যাটেনডেন্স দিয়ে বলে দিয়েছেন, ‘যারা যারা ক্লাস করতে না চাও, বাইরে যেতে পারো।’ স্যারের কথা শুনে অ্যাটেনডেন্স দিয়েই ভাই বাইরে চলে আসেন। মাত্র তিন মাস পর নিয়মিত ক্লাস করা ভাইয়ের সঙ্গে আজ আনন্দঘন মুহূর্তে তোলা সেলফি। এগিয়ে যান ভাই।

স্ট্যাটাস ২

মেধাবী ছাত্রনেতা, প্রাণের বড় ভাই, আমাদের অভিভাবক, মাথার ওপর ছায়া হয়ে থাকা ছামছু ভাই আজ সকাল ১০টায় ভার্সিটির ৪২০ নাম্বার কক্ষে তাঁর ব্যাকলক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। ভাইয়ের আরও ১২টা ব্যাকলক বাকি। ভেবে এখনই কান্না পাচ্ছে, আর মাত্র ১১টা ব্যাকলক পাস করলেই ভাই আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন! এই বিচ্ছেদ, এই বিরহব্যথা কীভাবে সহ্য করব, ভাই! ছামছু ভাই প্লিজ, ব্যাকলকগুলো দেবেন না। আপনি কি জানেন ভাই, আপনি চলে গেলে শুধু আমরা না, ভার্সিটির ব্যাকলক পরীক্ষাগুলোও অভিভাবকহীন হয়ে যাবে।

সেলফি ২

এই শীতে মানুষ যেখানে ঠান্ডা পানির ভয়ে লেপ-কম্বলের তলে ঘাপটি মেরে থাকে, তখন আমাদের অদম্য সাহসী, অকুতোভয়, নির্ভীক সৈনিক, যোগ্য নেতা, আলোর দিশারি আলেকজান্ডার ভাই আজ বেলা একটায় ঘুম থেকে ওঠেন। এ সময় ঠান্ডা পানির পরোয়া না করেই তিনি ব্রাশ নিয়ে বেসিনের সামনে চলে যান এবং চোখেমুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা মেরে ব্রাশ করে ফেলেন। ভাইয়ের সাহসের কাছে হেরে গিয়েছে হলের ঠান্ডা পানি। পানি চিনেছে একজন ত্যাগী নেতাকে। আর তাইতো পানি তার ঠান্ডা কমিয়ে ভাইয়ের কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। ভাই আগামী সপ্তাহের মধ্যেই গোসল করবেন বলে জানিয়েছেন। ভাইয়ের এই অদম্য সাহসী চিন্তাভাবনাকে লাল স্যালুট। ভাইয়ের পরিবর্তে আমরা অনেকেই গোসল করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভাই একজন সুযোগ্য নেতার মতো সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন বলে জানিয়েছেন। ভাইয়ের প্রয়োজনে আমরা জীবন দিতেও প্রস্তুত, আর এ তো সামান্য ঠান্ডা পানিতে গোসল। জয় হোক আলেকজান্ডার ভাইয়ের।