বাণিজ্য মেলার কিছু অভাবনীয় স্টল

দিনের পর দিন বাণিজ্য মেলায় একই ধরনের স্টল দেখে দেখে আমরা ক্লান্ত। বৈচিত্র্যময় স্টল দেওয়ার কথা বলে প্রতিবছর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো একই ধরনের স্টল বসিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বরাবরের মতোই নিজ স্বার্থে এগিয়ে এসেছে রস+আলো। আজ আমরা এমন কিছু ব্যতিক্রমী স্টল দেওয়ার কথা তুলে ধরব, যা কেউ ভাবেনি আগে। লিখেছেন আসফিদুল হক, এঁকেছেন রাকিব রাজ্জাক

টাকা পাচার স্টল

২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার বা ৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এই অর্থ দিয়ে অর্থমন্ত্রী প্রায় দুই অর্থবছরের বাজেট তৈরি করতে পারতেন। (সূত্র: প্রথম আলো, ৩ মে ২০১৭) বোঝাই যাচ্ছে, বৈধ উপায় না থাকার কারণে মানুষকে কত কষ্ট করে বিদেশে টাকা পাচার করতে হচ্ছে। আবার অনেকে টাকা পাচার কীভাবে করবেন, সে ব্যাপারে সঠিক দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন না। এ সমস্যা সমাধানে বাণিজ্য মেলাতেই একটা আস্ত স্টল রাখা উচিত। কীভাবে নিরাপদে টাকা পাচার করা যায়, এ ব্যাপারে বস্তুনিষ্ঠ পরামর্শ দেওয়া হবে এই স্টলে। পাশাপাশি মেলায় নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা পাচার করার জন্য বুকিং দিলেই একটি লটারিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকবে, যে লটারির প্রথম পুরস্কার হবে বিদেশে একটি ফ্ল্যাট অথবা গাড়ি।

প্রশ্ন ফাঁস স্টল

সম্প্রতি প্রশ্ন ফাঁসের বাম্পার ফলন হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর প্রশ্ন ফাঁস আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে যাবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা চাকরির পরীক্ষা—সবখানে এখন প্রশ্ন ফাঁসের ধুম। অভিভাবকেরাও এখন আগের থেকে সচেতন, তাঁরাও অনেক খুঁজেটুজে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র হাজির করেন সন্তানদের সামনে। তবে এসব ঝামেলা এড়ানোর জন্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষ বাণিজ্য মেলায় আগামী এক বছরের সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে একটি স্টল দিতে পারে। এখানে এসে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা নির্ধারিত মূল্য বা বিশেষ ছাড়ে আগাম প্রশ্নপত্র কিনতে পারবেন। ফলে প্রশ্ন ফাঁসকারীরা পাবেন তাঁদের ন্যায্যমূল্য, পাশাপাশি যাঁরা প্রশ্ন কিনবেন, তাঁদের থাকবে না টাকা হারানোর ভয়।

টাবিচা স্টল

টাবিচা হচ্ছে টাকার বিনিময়ে চাকরি কর্মসূচি। কদিন আগে আমরা জানলাম, রাজশাহীর পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনের সরকারদলীয় সাংসদ আবদুল ওয়াদুদ (দারা) চাকরি দেওয়ার নামে এলাকার অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। (সূত্র: প্রথম আলো, ১১ জানুয়ারি ২০১৮)। খোদ সরকারদলীয় সাংসদ যখন টাকার বিনিময়ে মানুষকে চাকরি দেওয়ার প্রকল্প চালু করেন, তখন অন্যদের কথা চিন্তা না করাই ভালো। সাংসদের মতো আরও যাঁরা টাকা নিয়ে মানুষকে চাকরি দেন, বাণিজ্য মেলায় তাঁরা একটা স্টল দিতেই পারেন। এই স্টলে এসে চাকরিপ্রার্থীরা নিলামে অংশ নেবেন। যে প্রার্থী বেশি টাকা দেবেন, চাকরি পাবেন তিনিই। এর ফলে ঘুষগ্রহীতা ও দাতা উভয়েই একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরিসংক্রান্ত লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবেন।

ডিজিটাল নৌকা স্টল

শিম্পাঞ্জি যেমন ২০ সেকেন্ডেই একটি ঘটনা ভুলে যায়, আমরাও তেমনি এক ঋতু থেকে অন্য ঋতুতে গেলে আগের ঘটনা মনে রাখি না। তাই শীতকাল এলে আমাদের মনে থাকে না বর্ষার সময় এই নদীমাতৃক শহরগুলোতে আমরা কেমন করে দিন পার করেছি। এ কারণে বাণিজ্য মেলায় জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় একটি বিশেষ স্টল দেওয়া উচিত। সেই স্টলে শহরে চলাচলের উপযোগী বিশেষায়িত উভচর নৌকা বিক্রি হবে। এই নৌকাগুলোর নিচে থাকবে চাকা, ওপরে থাকবে পাখা, যাতে করে শুকনো জায়গায় গড়িয়ে, প্রয়োজনবোধে উড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া নৌকায় রাখতে হবে ফ্রি ওয়াই-ফাই সুবিধা। কারণ এই বিশেষায়িত নৌকাগুলো চালাতে হবে পরিবহনভিত্তিক অ্যাপের মাধ্যমে।