দেশের যে অফিসে গুগল ফেসবুকের চেয়ে বেশি সুবিধা

>

কর্মস্থল নিয়ে আমরা যদি ১০টা কথা বলি, তার সাড়ে ৯টাই থাকে গুগল-ফেসবুক নিয়ে। গুগলে মাগনা খাবার, ফেসবুকের কর্মীরা ঘরে বসে কাজ করেন, কাজের সময়ে অ্যাপলে ঘুমানো যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ আমাদের দেশেই কিন্তু এর চেয়ে বেশি সুবিধার অফিস আছে। সেখানে গুগলের চেয়ে বেশি খাওয়ার সুযোগ আছে। ফেসবুকের চেয়ে বেশি সময় ঘরে থাকা যায়। যখন-তখন যায় ঘুমানো। স্বপ্নের সেই বাংলাদেশি অফিসের কথাই জানাচ্ছেন মেহেদী হাসান

অফুরন্ত খাবার

গুগলের অফিস ঘুরে এসে কেউ বর্ণনা করলে শুরু করেন খাবার দিয়ে। সেখানে থরে থরে সাজানো থাকে মুখরোচক সব খাবার। সুস্বাদু খাবারে ভর্তি ফ্রিজ থাকে গুগল অফিসের মোড়ে মোড়ে। যখন ইচ্ছা, যত ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা খাবার খাওয়া যায়। আবার চাইলে ঘরেও নিতে পারেন কর্মীরা।

অথচ আমাদের দেশেই এমন অনেক অফিস আছে, যেখানে থরে থরে ফাইল সাজানো থাকে। মোড়ে মোড়ে শোভা পায় আলমারি ভর্তি কাগজপত্র। সেসব কাগজে স্বাক্ষরের বিনিময়ে ঘুষ খাওয়া যায়। যখন ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা, যত ইচ্ছা খাওয়া যায়। কেউ কিছু বলে না। আর যদি বলে, তখন তার চাকরিটাই খাবার হয়ে যায়।

বিনোদনেও বেতন

বলা হয়, গুগলের জুরিখ অফিসে কর্মীদের খেলাধুলার জন্য বেতন দেওয়া হয়, কাজের জন্য নয়! কারণ, সেখানে প্রতিষ্ঠানটির একটি গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ আছে। কর্মীরা সেখানে খেলাধুলা করেন, মন প্রফুল্ল রাখেন, আর বাই প্রোডাক্ট হিসেবে গুগলের জন্য নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে ভাবেন। অথচ বাংলাদেশে কিছু অফিসে এর থেকে বেশি সুবিধা আছে। অফিসগুলোর কর্মীরা গ্রাহকের টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন। সে জন্য মাসে মাসে বেতনও পান।

ঘরে বসে কাজের সুযোগ

ফেসবুকের কর্মীরা সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াও সপ্তাহে এক দিন ঘরে বসে কাজ করতে পারেন। আর সুপারভাইজার উদার হলে ছুটির সংখ্যা আরও বাড়ানো যায়। অথচ আমাদের দেশের সেই অফিসগুলোর কর্মীরা সপ্তাহে এক দিন অফিসে যান হাজিরা দিতে। সুপারভাইজার কিছুই বলেন না। বলবেন কীভাবে? তাঁরা তো মাসের পর মাস দেশের বাইরে থাকার সুযোগ পান।

কাজের ফাঁকে ঘুম

গুগল-ফেসবুকে অফিসের নকশা এমনভাবে করা হয়, যেন কর্মীরা নিজের ঘরের পরিবেশ পান। কাজ করতে করতে ক্লান্ত হলে, হালকা ঘুমিয়ে নেওয়ার জায়গা আছে সেখানে। বাংলাদেশের সেই অফিসগুলোতেও কিন্তু ঘুমানোর ব্যবস্থা আছে। আসলে কর্তারা সেখানে যান ঘুমানোর জন্যই। প্রয়োজনে কেউ যদি সেবা নিতে যান, তবে কর্তার ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় থাকেন।

অল্পস্বল্প গল্প

মার্কিন অনেক প্রতিষ্ঠানে ‘এইটটি-টোয়েন্টি রুল’ বলে একটা কথা আছে। কর্মীকে কাজের ২০ শতাংশ সময় দেওয়া হয় পরস্পরের সঙ্গে গল্প করার জন্য। এতে নাকি প্রতিষ্ঠানেরই লাভ। ব্যক্তিগত গল্পের ফাঁকে যদি প্রতিষ্ঠানের জন্য কোনো আইডিয়া বেরিয়ে আসে!

বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেখানে কিন্তু সুবিধা আরও বেশি। সেখানে কর্তা-কর্মী গল্প করেই সময় কাটিয়ে দেন; ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পা নাচিয়ে, চা-পান খেতে খেতে। গ্রাহকসেবা চুলোয় গেলেও বলার কেউ নেই। এমন অফিস থাকতে কেন যে অনেকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে যান!

বাঁচলেও লাখ টাকা, মরলেও লাখ টাকা

কথাটা হাতির বেলায় বেশ যায়। গুগলের কর্মীদের জন্যও তা প্রযোজ্য। গুগলে কর্মরত অবস্থায় কারও মৃত্যু হলে তাঁর নামে থাকা শেয়ার তৎক্ষণাৎ তাঁর স্ত্রীকে দিয়ে দেওয়া হয়। আর স্বামীর অর্ধেক বেতন পান পরবর্তী ১০ বছর পর্যন্ত। সন্তানদের জন্যও মাসে মাসে ভাতার ব্যবস্থা থাকে।

আমাদের দেশের অফিসগুলোতে মৃত্যুর প্রয়োজন নেই। জীবদ্দশায় স্ত্রীর নামে স্বামী লিখে দেন গাড়ি-বাড়ি, ব্যাংকে জমা হতে থাকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা।

বি.দ্র.: কোন অফিসে এসব সুবিধা আছে?—এ ধরনের প্রশ্ন করে আমাদের বিব্রত করবেন না! ধন্যবাদ।