নন্দ ঘোষ

১.
‘ছার, আপনে ম্যাডামের দিকে একটু নজর রাইখেন, আপনে বাইরে যাওনের পর পেরায়ই এক লোক বাসাত আইসা লম্বা সময় ম্যাডামের সাথে থায়েন।’
বাসার দারোয়ানের এই কথায় হার্ডব্রেকে থমকে গেলেন অনিক সাহেব। সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরেছেন। গেটের কাছে দাঁড় করিয়ে সালাম দিল দারোয়ান। তারপরই মুখ কাঁচুমাচু করে বলে ফেলল কথাটি। দারোয়ানের কথায় মাথাটা বিগড়ে গেল অনিক সাহেবের। রেগে লাল হয়ে দারোয়ানকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘এই ঘটনা প্রমাণ করতে না পারলে তোমার খবর আছে! চাকরি খেয়ে দেব তোমার বলে রাখলাম!’ বলেই বাসায় ঢুকলেন তিনি।
সেদিন রাতে অনিক সাহেবের প্রেশার বেড়ে গেল। মনটা কেমন খচ্‌খচ্‌ করছিল দারোয়ানের ওই কথা শোনার পর থেকেই। প্রায় নির্ঘুম রাত কাটিয়ে পরদিন অফিসে গেলেন।
সেদিন দুপুরেই তাঁর মোবাইল ফোনে দারোয়ানের কল, ‘হ্যালো ছার, ওই ভদ্রলোক বাসায় আইছেন।’
দারোয়ানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিয়ে দ্রুত অফিস থেকে বেরোলেন তিনি। নিজেই ড্রাইভ করে বাসার একটু আগে গাড়ি পার্ক করে হেঁটে ভেতরে ঢুকলেন। সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত চাবি দিয়ে প্রধান দরজা খুলে লিভিংরুম পেরিয়ে বেডরুমের দরজায় নক করলেন। রুমের ভেতর থেকে ভেসে এল এক পুরুষের বিরক্ত-কণ্ঠ। বিদেশি সিরিয়াল হলে এই জায়গায় পর্ব শেষ হয়ে যেত। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করতে হতো দর্শককে।
কিন্তু এই গল্পে তেমন কিছু ঘটল না। ঠিক ১৯ মিনিট পর দরজা খুলে যিনি বেডরুম থেকে বের হলেন, তাঁকে ভালো করেই চেনেন অনিক সাহেব। তাঁর নাম রউফ এইচ খান। রউফ সাহেব খুব স্বাভাবিক গলায় হেসে প্রশ্ন করলেন, ‘অনিক সাহেব যে! কী ব্যাপার? আজ কি বাসায়ই লাঞ্চ করবেন?’

২.
ইদানীং প্রচণ্ড অস্থিরতায় দিন কাটে অনিক সাহেবের। রাত কাটে প্রায় না ঘুমিয়ে। তিনি যে চাকরিটা করতেন, সেটার মান বিচার করতে গেলে বলা যায় বিরাট ব্যাপার! এই মাপের আরেকটা চাকরি তাঁর পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয় কিছুতেই। তাঁর বসের নাম রউফ এইচ খান। প্রচণ্ড ক্ষমতাধর এই লোকটা তাঁর কোম্পানির চেয়ারম্যান কাম এমডি। রউফ এইচ খান চাইলে তিনি এই শহর ছাড়তেও বাধ্য হবেন। এ কারণেই রউফ সাহেব তো দূরের কথা, নিজের স্ত্রীর কাছেও কোনো কৈফিয়ত চাওয়ার সাহস হয়নি অনিক সাহেবের। তাই অনেক ভাবনা-চিন্তার পর সিদ্ধান্ত নিলেন, দারোয়ান ব্যাটাকে তাড়াতে হবে, সে সব জেনে ফেলেছে। তার হাতেই মানসম্মান ঝুলছে! তাকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই!

গল্পের এখানেই সমাপ্তি।

পুনশ্চ ১: শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় ফেসবুকে। এ কারণে পরীক্ষা চলাকালীন সাময়িকভাবে ফেসবুক বন্ধ রাখার কথা ভাবছে মন্ত্রণালয়।
পুনশ্চ ২: এই গল্পে দারোয়ান বেচারার নাম ছিল নন্দ ঘোষ। আর সবাই তো জানেন, যত দোষ নন্দ ঘোষ!