কমন ভ্রমণসঙ্গী

বাঁচতে হলে ঘুরতে হবে। তাই তো মাঝেমধ্যে আমরা ব্যস্ত জীবন ছেড়ে চলে যাই প্রকৃতির একদম কাছে। যাওয়ার সময় সঙ্গে থাকে ভ্রমণসঙ্গী। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্রমণসঙ্গীদের মধ্যে কারও কারও বৈশিষ্ট্য প্রায় সবার সঙ্গেই ‘কমন’ পড়ে। মিলিয়ে দেখুন আপনার বেলায়। লিখেছেন রাফি আদনান

* গ্রুপের নির্দিষ্ট একজনের মাথায় ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা আসে এবং ‘জীবনে বেঁচে থাকতে ঘোরাঘুরির বিকল্প নেই’-টাইপ মোটিভেশনাল লেকচার দিয়ে বন্ধুমহলকে প্রভাবিত করেন।

* দূরপাল্লার ভ্রমণের কথা শুনে সবাই এক কথায় লাফিয়ে ওঠেন। ‘এবার ট্যুর মিস হবে না, কোনোভাবেই হবে না’ এমন সংকল্পের কথা বলে ভ্রমণের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেন তাঁরা ১০ গুণ। খোঁজ নিলে জানা যাবে, এই শ্রেণির ব্যক্তিরা আগেও বেশ কয়েকবার একই কথা বললেও অসুস্থতা, ছুটির অভাব, অর্থাভাব ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ কারণে ট্যুর মিস করেন এবং এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

* ভ্রমণ-পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাসের টিকিট কাটায় যে অভাগা ব্যক্তি নেতার ভূমিকা পালন করেন, তাঁর জন্য সমবেদনা। গ্রুপের বাকিরা কোনো কাজ না করেও বাসের সিট খারাপ হলে, বাস আস্তে চললে অথবা দ্রুত চললে, পথে যানজটের কবলে পড়লে ওই নেতাকে দোষারোপ করেন।

* বিশেষ এক ব্যক্তি থাকেন, যিনি ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে বরাবরই অনাগ্রহ প্রকাশ করেন এবং একেবারে শেষ মুহূর্তে তাঁর আবেগ মাথাচাড়া দেয়। টিকিট কাটার পর সবাইকে জানান, তিনিও যাবেন। তাঁর আগ্রহ দেখে বাকিরা ঝামেলা পোহালেও সহ্য করে যান চুপচাপ।

* ‘মানুষ যে ক্যান লং জার্নিতে এত ঢং করে’ বছরজুড়ে এমন বাণীদাতারা বাসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে হয় ঘুমিয়ে পড়েন, নাহয় তাঁদের মাথাব্যথা, কানেব্যথা, বমিসহ বিশেষ বিশেষ ভ্রমণজনিত শারীরিক সমস্যায় ভোগেন।

* প্রতিটি ঘোরাঘুরির গ্রুপে অন্তত একজন সদস্যের খোঁজ পাওয়া যায়, যাঁর কাছে থাকে ক্ষমতাশালী পাওয়ার ব্যাংক। ঘোরাঘুরির মাঝপথে এই ব্যক্তিটি হয়ে ওঠেন সবার কাছে বিশেষ জনপ্রিয়।

* কয়েকজন স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তি দূরপাল্লার ভ্রমণে বাসটাকে ভেবে বসেন ভ্রাম্যমাণ রেস্তোরাঁ। ভ্রমণের শুরু থেকে শেষ আছে কিন্তু তাঁদের টিফিন বাক্স, চিপসের প্যাকেট ইত্যাদির শেষ থাকে না।

* স্বাধীন বাংলাদেশে কিছু পরাধীন মানুষ বসবাস করছেন। প্রেমিক-প্রেমিকার অগোচরে ঘুরতে যাওয়ার ফলে আনন্দময় ভ্রমণের প্রায় পুরো সময় তাঁরা থাকেন বিষণ্ন। ফোন হাতে কেউ ক্যামেরা অন করলেই তাঁদের প্রথম কথা হয়, ‘ছবি তুলিস না, প্লিজ!’ অথবা ‘তুললেও আমাকে ট্যাগ করিস না, প্লিজ!’

* আমাদের ভ্রমণগুলোতে একজন উসাইন বোল্টও থাকেন। গতিহীনতা যাঁর ভীষণ অপছন্দের। যানজট কিংবা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বাস ধীরে চললেই তাঁরা বিরক্ত হন।

* অন্তত একজন এই দলে থাকেন, যাঁর পূর্বপুরুষ স্বয়ং শায়েস্তা খাঁ। সুলভমূল্যে এসি বাস, পানির দরে ফাইভ স্টার সার্ভিস না পেয়ে ভ্রমণটাকে ‘ভুয়া’ আখ্যা দিতে তাঁরা দেরি করেন না।

* ভুলোমনা ছাড়া ঘোরাঘুরি জমেই না! গন্তব্যস্থলে গিয়ে এ ধরনের ব্যক্তি আবিষ্কার করেন, তাঁরা মোবাইল ফোনের চার্জার, ব্রাশ কিংবা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় জিনিস বাসায় রেখে এসেছেন।

* ভ্রমণে থাকেন ‘ভাল্লাগতেছে না’ রোগাক্রান্ত এক সঙ্গী। আকাশ, বাতাস, পাহাড়, সমুদ্র দেখার আগে তাঁরা হতাশ থাকেন। বলেন, ‘কিছুই ভাল্লাগতেছে না, একটা ট্যুর দরকার।’ ট্যুর শেষে তাঁরা আবারও হতাশ হয়ে পড়েন। বলেন, ‘কিছুই ভাল্লাগতেছে না...’।