শান্তিপুরে লাউ নিয়ে প্রীতি হাউকাউ

খবর: হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার শান্তিপুর জামে মসজিদের জমিতে উৎপাদিত একটি লাউ নিলামে তোলা হয় ১৪ মার্চ দুপুরে। এক কেজি ওজনের ওই লাউটির নিলামের ডাক দেন পাশের মর্দনপুর গ্রামের কবির মিয়া। লাউটির দাম ৬০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এ নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে শুরু হয়ে যায় দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ। সংঘর্ষে আহত হন উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৫০ জন। তাঁদের মধ্যে ২৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

(সূত্র: প্রথম আলো, ১৪ মার্চ ২০১৮)

এক কেজি ওজনের ‘বিশাল’ এক লাউ শান্তিপুরের মানুষকে রাগী বানায়নি, বানিয়েছে বৈরাগী। সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে চোখ বোলালে পাওয়া যায় উল্টো চিত্র! যা মানতে পারছেন না গ্রামবাসীরা। সরেজমিনে জানা যায়, ১৪ মার্চ লাউটি নিয়ে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে এক প্রীতি হাউকাউ টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। যেটি পণ্ড হয় পুলিশের অযাচিত হস্তক্ষেপে। পণ্ড হওয়ার আগ পর্যন্ত লাউ নিয়ে হাউকাউয়ে প্রায় ৫০ জন গ্রামবাসী রক্তদান করেন অকাতরে। হাউকাউ বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে এই ঘটনা বিরল।

লাউ নিয়ে প্রীতি হাউকাউ টুর্নামেন্টের পুরস্কার ছিল বিখ্যাত সেই লাউটি। ফাইনালে যারা জিতবে তারাই হবে লাউয়ের গর্বিত মালিক। টুর্নামেন্টের একমাত্র শর্ত ছিল, কেউ কারও প্রতি সদয় হতে পারবে না। তবে পরস্পরের দিকে বাক্যবাণ ছুড়ে দিয়েও যখন জয়-পরাজয় নির্ধারণ করা যাচ্ছিল না, তখন টুর্নামেন্টটি আরও প্রীতিময় হয়ে ওঠে। স্থানীয় অস্ত্র ব্যবহার করে দুই গ্রামের বাসিন্দারা ঝাঁপিয়ে পড়েন একে-অপরের বিরুদ্ধে।

পুলিশের অযাচিত হস্তক্ষেপে টুর্নামেন্ট পণ্ড হলেও দুই গ্রামবাসী থেমে থাকেননি। গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা ঘোষণা করেন, শিগগিরই শান্তিতে লাউ পদক দেবেন তাঁরা। লাউ কমিটির সভাপতি বলেন, ‘মিয়ানমারের অং সান সু চির মতো কাউকে পেলে পদকটি প্রদান করার ইচ্ছা আছে আমাদের। পদকটি দিতে পারলে আমরা ভারমুক্ত হই। আমাদের এই প্রীতি টুর্নামেন্টের যে বদনাম হয়েছে, তা ঘোচাতে আমরা বদ্ধপরিকর।’ শান্তিবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, শান্তিতে নোবেলের ধারণাটিও শান্তিপুর থেকেই এসেছিল। শান্তিপুরের শান্তির এমন নজির নতুন নয় বলেও জানান তাঁরা।

তবে প্রশ্ন উঠেছে, বিখ্যাত সেই লাউটির কী হলো? বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, লাউটি শেষমেশ ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন শান্তিপুর গ্রামের জনৈক ব্যক্তি। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাদের টুর্নামেন্টের বারোটা বাজাইছে। লাউ নিয়ে বাসায় আসতে না আসতেই শুনি, বাইরে পুলিশের আওয়াজ। তাঁরা নাকি আমাকে নিরাপত্তা দেবে। কী মুশকিল!’

এই বক্তব্যের সত্যতা মেলে স্থানীয় থানার পুলিশের কাছে। নাম না প্রকাশের শর্তে এক পুলিশ সদস্য জানান, ‘এই লাউ নিয়ে অনেক হাউকাউ হয়েছে। আমাদের চাকরি যায় যায়। তাই লাউয়ের মালিকের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের এখন প্রধান দায়িত্ব।’

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত লাউটি খাওয়া হয়েছে কি না, জানা যায়নি। খাওয়া না হলে সেটি কীভাবে রান্না হবে, সেটাও থেকে যাচ্ছে ধোঁয়াশার মধ্যে।