'এমন মহাবিশ্বও আছে যেখানে আপনি হাস্যকর'

বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন ১৪ মার্চ। দুরারোগ্য এবং বিরল এক রোগ নিয়ে তিনি হুইলচেয়ারে বসে কাটিয়েছেন অর্ধশতাব্দী। এ সময়ে তিনি বিস্ময়কর সব আবিষ্কার করেছেন, ঘুরে বেড়িয়েছেন সারা পৃথিবী। কথা বলতে পারতেন না, তাই লিখতেন হুইলচেয়ারের সঙ্গে যুক্ত বিশেষ কম্পিউটারে, যা শোনা যেত সফটওয়্যারের সাহায্যে। ২০১৪ সালের জুন মাসে এইচবিও চ্যানেলের ‘পিপল হু থিংক গুড’ নামের এক সিরিজের প্রথম অতিথি হিসেবে স্টিফেন হকিং সাক্ষাৎকার দেন ব্রিটিশ উপস্থাপক জন অলিভারের কাছে। হকিংয়ের রসবোধের প্রমাণ মেলে এই কথোপকথনে। নির্বাচিত অংশ অনুবাদ করলেন ইব্রাহিম মুদ্দাসসের

জন অলিভার: আপনাকে অভিনন্দন, আমাদের প্রথম অতিথি হওয়ায়। এটাই কি আপনার জীবনের পাওয়া সবচেয়ে বড় সম্মানের বিষয়?
স্টিফেন হকিং: হ্যাঁ।
অলিভার: বেশ। আপনার কণ্ঠটা বোঝা একটু কঠিন। আচ্ছা, আপনি বলুন, আপনার রসবোধ কি খুব ভালো?
হকিং: হ্যাঁ, আমি তেমনটাই ভাবি।
অলিভার: আমি এখন কার সঙ্গে কথা বলছি, আপনার সঙ্গে নাকি আপনার কম্পিউটারের সঙ্গে, যে আপনার হয়ে কথা বলার ভান করছে?
হকিং: আমিই কথা বলছি।
অলিভার: ঠিক আছে, কিন্তু আমি তা কীভাবে বুঝব, প্রফেসর? কারণ, কোনো কম্পিউটার বুদ্ধিমান হয়ে গেলে পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষটির কণ্ঠ দখল করবে, এবং এর চেয়ে ভালো উপায় আর কী হতে পারে?
হকিং: আপনি একটা ইডিয়ট।
অলিভার: তা ঠিক। তবে কে বলছে এই কথা, স্টিফেন হকিং নাকি মেশিন?
হকিং: আমরা দুজনই।
অলিভার: আচ্ছা, ঠিক আছে। এটা মোটামুটি ভরসা দেয়। এবার অন্য প্রসঙ্গ। ২০০৬ সালে আপনি বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশের এত এত বিশৃঙ্খলা, মানবসভ্যতা কীভাবে আরও ১০০ বছর টিকবে?’ এক মাস পরে আপনি বললেন, ‘আমি আসলে উত্তরটা জানি না, ভয়ংকর ভবিষ্যতের ব্যাপারটা সবাইকে ভাবার জন্যই প্রশ্নটা করেছিলাম।’ তারপর আট বছর কেটে গেছে, এখন কি আপনি কোনো উত্তর খুঁজে পেয়েছেন?
হকিং: না, আমি এখনো উত্তরটা জানি না। যদিও নিউক্লিয়ার ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কা কমেছে। তারপরও আরও নানান ধরনের বিপদ আছে।
অলিভার: ব্যাপারটা খুবই হতাশাজনক। আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে স্মার্ট মানুষ, আপনার কাছেই যদি উত্তর না থাকে, আমরা তো তাহলে পুরোপুরি অন্ধকারে থেকে যাব। আচ্ছা, ধরুন, আপনি একজন মধ্যম পর্যায়ের মাদক ব্যবসায়ী। শহরের ১২টা ব্লকের মাদক নিয়ন্ত্রণ করেন। আপনার একজন সাপ্লায়ার টিটো; গভীর রাতে সে আপনাকে আধা কেজি কোকেইন দিতে এল। টিটো আসতে দেরি করেছে, তার কাছে মাদকদ্রব্যও নেই। তার বক্তব্য, সে লাফ দিয়েছিল, কিন্তু তা অনেক উঁচু মনে হচ্ছিল। আপনি তখন কী করবেন?
হকিং: আমি মাদক নিই না।
অলিভার: উম্ম্, এটাই সবচেয়ে স্মার্ট উত্তর। কারণ, কোনো মাদকসম্রাট এই জিনিস নেয় না। আচ্ছা, আমাদের এই মহাবিশ্ব ছাড়াও হয়তো অসংখ্য সমান্তরাল মহাবিশ্ব আছে। তাহলে এমন কোনো মহাবিশ্ব কি আছে, যেখানে আমি আপনার চেয়ে বেশি স্মার্ট?
হকিং: হ্যাঁ, আছে। এবং এমন মহাবিশ্বও আছে যেখানে আপনি হাস্যকর।
অলিভার: আপনি যদি সত্যিই স্মার্ট হয়ে থাকেন, তাহলে বলুন আমি কোন সংখ্যা ভাবছি...?
হকিং (অলিভার বাক্য শেষ করার আগেই): ১৩।
অলিভার: আমি ১৩-ই ভাবছিলাম! এটা একটা ‘ঝড়ে বক মরা’ অনুমান ছিল। পারলে বলুন, আমি এখন কী ভাবছি?
হকিং: আপনি ভাবছেন, আপনি আপনার পরিবারের জন্য একটা বিশাল হতাশা।
অলিভার: না, আমি তা ভাবছিলাম না। আমি ভাবছিলাম, আমি তো তাদের (পরিবার) জন্য আমার সর্বোচ্চটা করি, তারা কেন তা বোঝে না! এখন কিছু ঝটপট ‘হ্যাঁ-না’ উত্তরের প্রশ্ন করা যাক। অন্য কোনো গ্রহে কি প্রাণের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব?
হকিং: হ্যাঁ।
অলিভার: এটা কি সম্ভব যে আমি অন্য কোনো সমান্তরাল মহাবিশ্বে হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী শার্লিজ থেরনের সঙ্গে প্রেম করছি?
হকিং: না।
অলিভার: অসীম সংখ্যক মহাবিশ্বের কোনোটাতেই না?
হকিং: না।
অলিভার: বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনার সবকিছুকেই বাতিল করে আপনি এ কথা বলছেন?
হকিং: হ্যাঁ।
অলিভার: তাহলে আরেকটা সম্ভাবনা ধরা যাক। এমন কোনো মহাবিশ্ব কি আছে, যেখানে আমি তাঁর প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছি বলেই
তা হয়নি?
হকিং: না। দেখুন, আপনার প্রশ্নের উত্তর টাইপ করতে আমার কষ্ট হচ্ছে।
অলিভার: ওকে, বুঝতে পারছি। আমি আসলে জানতে চাইছিলাম, কোনো ধরনের আশা আছে কি না...। আচ্ছা, টাইম ট্রাভেল যদি সম্ভব হতো, আপনি কি অতীতে গিয়ে আমাকে এই সাক্ষাৎকারটা দিতে রাজি হতেন?
হকিং: হ্যাঁ।
অলিভার: আপনি সত্যিকার একজন স্মার্ট মানুষ, স্টিফেন হকিং। সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।