কত রং মুঠোর ভেতর

ঘটনা ১

সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছে তাঁর। স্বাভাবিকভাবেই অফিসে লেট হবে। রাস্তায় তাড়াহুড়া করে হাঁটতে গিয়ে জুতোটা গেল ছিঁড়ে। মুচি খুঁজতে গিয়ে মানিব্যাগ ফুড়ুৎ। মুচি না পেয়ে লাথি মেরে জুতো ফেলে খালি পায়ে বাসে উঠলেন তিনি। খালি পকেটে হাত দিয়ে হালকা অপমান গায়ে মেখে সামনের স্টপেজে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পা-টা গেল মচকে। ডাক্তারের সামনে বসে বউয়ের ঝাড়ি খেতে খেতে মনে পড়ল মানিব্যাগের এক কোনায় পেনড্রাইভ ছিল। পেনড্রাইভে ছিল মহা দরকারি কিছু ফাইল। খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাসায় আসার পর বিকেলের দিকে অফিস থেকে জানানো হলো, অফিস কামাইয়ের কারণে বস দেখা করতে বলেছেন। মেজাজ তুঙ্গে তাঁর। বউয়ের সঙ্গে সন্ধ্যাবেলায় একপশলা ঝগড়া হলো। রাত নয়টা বাজে। বাসায় কেউ নেই। হঠাৎ ফোনে রিং। বস কিংবা বউ ফোন করেছে নিশ্চয়ই। খোঁড়া পায়ে লাফিয়ে উঠে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সুকণ্ঠি গলায় একজন বলে উঠল, ‘হাসতে পারছেন না আজকাল? এক্ষুনি ১ চাপুন, আর জোকস বক্সে রেজিস্ট্রেশন করুন। প্রতিদিন পান নিত্যনতুন জোকস। প্রাণ খুলে হাসুন। জীবন তো একটাইইই!’

ঘটনা ২

‘বাবু’র সঙ্গে তার দুই বছরের সম্পর্ক। ১৬৩তম ব্রেকআপের পর মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে সে। বাবুর রাগ কমলে ফোন দেবে, তার নিজের আবার ইগো অনেক বেশি। বাবুর অবশ্য ততটা নয়। কিন্তু আজকে বাবু ফোন দিচ্ছে না। রাগটা সন্দেহে রূপান্তরিত হলো। পাক্কা ১৭ মিনিট ভেবে, ১৩ মিনিট ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে, ২১ মিনিট পর ফোন দিয়ে বাবুর ফোন ওয়েটিং পেল সে। সর্বনাশ! হার্টবিট বেড়ে গেল তার। ফোনে ২১ বার চেষ্টা করে বুক চেপে ধরে শুয়ে পড়ল সে। ৫-১০ মিনিটের ভেতর ‘ওয়েটিংয়ের কারণ ব্যাখ্যা’সহ বাবুর ফোন না পেলে বাংলা সিনেমার বাবাদের মতো কিছু একটা হয়ে যেতে পারে তার। বুক চেপে ধরে অপেক্ষায় থাকে সে ফোনের। ৯ মিনিট পর ফোন বেজে উঠল। ঢিবঢিব বুকে ফোন রিসিভ করে কানে লাগাল সে। ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে এল মিষ্টি একটা কণ্ঠ, ‘দেশের কোথায় কী ঘটছে জানতে চান? ২৪ ঘণ্টার আপডেট নিউজ এখন আপনার হাতের মুঠোয়! অফারটি চালু করতে ১ চাপুন...’

ঘটনা দুটি আমাদের মোবাইল ফোন অপারেটরদের ভালোবাসার সামান্য নমুনা। এদের ভালোবাসার সীমা পৃথিবী ছাড়িয়ে মঙ্গলে গিয়া পৌঁছেছে। খুব শিগগির মঙ্গল থেকে এলিয়েনরা এসে হাত-পা ছড়িয়ে কান্নাকাটি শুরু করবে আর বলবে, ‘ভাই, থাম! আর জ্বালাইস না! আর ফোন দিস না, আমরা আর পলায়া থাকব না। ফিরে আসছি তোদের নেটওয়ার্কে! নে এখন, আজাইরা ফোন করা ছাড়া আর যা খুশি কর!’