তাঁরাও যখন মোটিভেশনাল স্পিকার

আপাতদৃষ্টিতে আমরা যাঁদের অসফল ভাবি, তাঁরা যদি মোটিভেশনাল বক্তৃতা দিতেন, কেমন হতো? ভেবেছেন সোহাইল রহমান

ছোটবেলায় আমার একদম লেখাপড়ায় মনোযোগ ছিল না। সবাই বলত, এভাবে চলতে থাকলে আমি কখনোই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারব না। শিক্ষকেরা বলতেন, ‘কাশেম, তুমি তো পেছনে পড়ে যাবা। অন্যদের থেকে এগিয়ে যেতে হলে দ্রুত লেখাপড়ায় মনোযোগ দাও!’ কিন্তু আমি তাঁদের কথা শুনে লেখাপড়া শুরু করিনি। তবে আজ, এত দিন পর উপলব্ধি করতে পারছি যে আমার শিক্ষকেরা ভুল বলেছিলেন। আজ আমি শুধু নিজের পায়েই দাঁড়াইনি, বরং নিজের দুই পা দিয়ে অসংখ্য মানুষকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছি প্রতিনিয়ত। আমি সবাইকে ভুল প্রমাণ করে শুধু আমার দুই পা দিয়ে প্যাডেল ঘুরিয়ে বহু মানুষকে পিছিয়ে পড়া থেকে রক্ষা করছি।

কাশেম আলী

রিকশাচালক, উত্তরা, ঢাকা

আমাদের পাশের বাসায় থাকত একটা মেয়ে, ক্লাসে প্রথম হতো। নাম ছিল আমিনা। অন্যদিকে আমার রেজাল্ট ছিল সবচেয়ে খারাপ। সুতরাং আমাকে বলা হতো, ‘পড়াশোনা যে করো না, জীবনে কী করে খাবা? আমিনার মতো হও, সুখে থাকবা।’

অথচ আজ সব দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। আমি দিনরাত অনেক পরিশ্রম করি। আমাকে ছাড়া কয়েকটি পরিবার প্রায় অচল। আমি ঘর মোছা, কাপড় কাচা, থালাবাসন ধোয়া থেকে কত কাজই না পারি। অন্যদিকে আমিনা কিছু না করে বসে বসে জীবন কাটাচ্ছে। এর ফলে ও গেঁটে বাত, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত। আর আমি কর্মমুখর ও সুস্থ!

জমিলা বানু

কাজের বুয়া, মিরপুর, ঢাকা

এসএসসিতে আমি ফেল করেছিলাম। একবার নয়, পরপর দুবার। স্কুলের শিক্ষকেরা ছি ছি করেছিলেন। আদুভাই বলে খেপিয়েছিল ছাত্ররা। হেসেছিলেন পাশের বাসার আন্টিরা। তারপর পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। সেই এসএসসি ফেলের খবর কেউ মনে রাখেনি। আমি নিজের যোগ্যতা, আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রমে আজ এমন জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি যে সেই স্কুলের প্রত্যেক ছাত্র, প্রত্যেক শিক্ষক, প্রত্যেক অভিভাবক আজ আমাকে এক নামে চেনেন, এক নামে জানেন। প্রতিদিন চটপটি কিনতে আমার সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।

জহির আলী

মালিক, জহির ভাইয়ের মজাদার চটপটি ও ফুচকা