থাইল্যান্ডের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটলে

আঁকা: তুলি
আঁকা: তুলি

গত ২৩ জুন থাইল্যান্ডের থাম লুয়াং গুহায় প্রবেশের পর নিখোঁজ হয় মু পা (ওয়াইল্ড বোর) ফুটবল দলের ১২ খুদে সদস্য ও তাদের সহকারী কোচ। টানা ৯ দিন কেটে যায় গুহার নিকষ অন্ধকারে। ৮, ৯ ও ১০ জুলাই শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে উদ্ধার করা হয় সবাইকে। একই ঘটনা বাংলাদেশে ঘটলে কী হতো? ভেবেছেন মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

১. ফেসবুকে অনেকেই রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলত, ‘ওদের ওখানে যেতে বলছে কে? থাকুক কিছুদিন গুহায়। শিক্ষা হওয়া দরকার আছে।’

২. মোটিভেশনাল স্পিকাররা ‘গুহায় নিজেকে শান্ত রাখা’র ১০টি পরামর্শও দিয়ে ফেলত।

৩. উদ্ধার অভিযানে নামার আগে কোনো এক মন্ত্রীর পিএসের মামাতো ভাইয়ের পরিচিতের ফুফাতো শালার বন্ধুর বেয়াই ফোন করত উদ্ধারকর্তাদের। তার পরিচিতকে যেন সবার আগে উদ্ধার করা হয়, সে ব্যাপারে প্রথমে অনুরোধ পরে হুমকিও দিয়ে বসত।

৪. আটকে পড়াদের মধ্যে কোনো ফেসবুক সেলিব্রিটি থাকলে তাকে সবার আগে উদ্ধারের জন্য ফেসবুকে ইভেন্ট খোলা হতো।

৫. উদ্ধারকার্যে কোটা পদ্ধতি মানা হবে কি না তা নিয়ে শুরু হতো তুমুল বিতর্ক। কোটা পদ্ধতিতে উদ্ধারের দাবির পক্ষে-বিপক্ষে মানববন্ধনও হতো।

৬. কোনো কোনো অতি বুদ্ধিমান আটকে পড়া কোনো ছেলের অভিভাবকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা খেয়ে সেই ছেলেকে আগে উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে বলে আশ্বস্ত করতেন।

৭. গুহার ভেতর ভীষণ অন্ধকার, এই বিবেচনায় ‘তিন শ টাকার অ্যানার্জি লাইট এক শ টাকায়’—এমন অফার নিয়ে আশপাশে দোকান বসে যেত।

৮. বিমা কোম্পানিগুলো আটকে পড়াদের স্বজনের কাছে দৌড়াত জীবনবিমা করার জন্য।

৯. আটকে পড়াদের উদ্ধারের জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যাংক লোন পাস করে ফেলত কোনো ঝানু ঋণখেলাপি।

১০. গুহার বাইরে ইউটিউব ভিডিওর জন্য বিশাল আয়োজন করে বসত উঠতি কোনো ইউটিউবার।

১১. ‘গুহায় আটকে গেলে ১০ করণীয়’ শিরোনামে ফিচার লিখত অনলাইন পোর্টালগুলো।

১২. উদ্ধারকার্যে ব্রিটিশ বেনিয়াদের কেন ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নিয়ে আপত্তি তুলে মানববন্ধন করত বিশেষ কিছু রাজনৈতিক দল।

১৩. উদ্ধারকারীদের কাছে নিজ নিজ ব্র্যান্ডের খাবার পাঠানোর তদবির করত খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। পরদিন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিত, গুহায় আটকে পড়ারা আস্থা রেখেছেন আমাদের তৈরি খাবারে। আপনিও রাখুন।

১৪. উদ্ধারকাজে স্যাটেলাইটের ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য দিত সরকারি দল।

১৫. উদ্ধারকাজে যে স্যাটেলাইট কোনো ভূমিকাই রাখছে না, তা নিয়ে পাল্টা বক্তব্য দিত বিরোধী দল।

১৬. শেষমেশ উদ্ধার করতে হতো কমপক্ষে ১৫ জনকে। কেননা কিশোরদের আটকে পড়ার খবর শুনে কোনো কোনো পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল একজন সাংবাদিক আর ক্যামেরাম্যান পাঠিয়ে দিত গুহার ভেতর।

১৭. কিশোরদের উদ্ধার করার পর কেউ কেউ বলত, ‘ওরা গুহায় যায়ই নাই। সব সাজানো নাটক।’