ফ্ল্যাটের স্বপ্নপূরণে গৃহঋণ

.
.

বাড়ি হোক কিংবা ফ্ল্যাট—মাথা গোঁজার নিজের ঠিকানা তো বিলাসিতা নয়। একেবারে অতি প্রয়োজন। বাড়ি না হোক মনের মতো একটি ফ্ল্যাটের স্বপ্ন তো দেখা-ই যায়। কিন্তু ফ্ল্যাটের বিশাল অঙ্কের টাকা একসঙ্গে জোগাড় করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। তাই নিজের ঠিকানা তৈরিতে গৃহঋণে ঝুঁকছেন গ্রাহকেরা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে চালু রয়েছে নানা নামে গৃহঋণ বা হাউজিং লোন।
ঋণদাতা একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পেশাজীবী ও চাকরিজীবীর সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে বাড়ছে গৃহঋণের চাহিদাও। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে গৃহায়ণ খাতে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা গ্রাহকপ্রতি বাড়িয়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা করেছে। আগে এর পরিমাণ ছিল ১ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঋণ ও মূলধন অনুপাত করা হয় ৭০: ৩০। অর্থাৎ ১ কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনতে চাইলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান দেবে ৭০ লাখ, আর গ্রাহককে জোগান দিতে হবে ৩০ লাখ টাকা। ব্যাংকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নিয়ম পরিপালনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ নিয়মের বাইরে। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্ল্যাট ক্রয় বা বাড়ি নির্মাণে ব্যাংকের চেয়ে বেশি ঋণ–সুবিধা দিতে পারে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসির গ্রুপ চিফ মার্কেটিং অফিসার জানে আলম রোমেল বলেন, গৃহ নির্মাণ খাতে প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ ২০ বছর মেয়াদে ঊর্ধ্বে ৬ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ–সুবিধা দিয়ে থাকে। বর্তমানে ঋণের সুদ হার ৯ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আইডিএলসি যেকোনো ঋণ আবেদন দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রক্রিয়া করে থাকে।

ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা সদর এলাকার মধ্যে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ–সুবিধা দিয়ে থাকে। সর্বনিম্ন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ–সুবিধা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। ঋণের সুদ হার সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ পর্যন্ত। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি এলাকার জন্য সুদ হার ১২ শতাংশ আর দেশের অন্যান্য এলাকার জন্য এ সুদ হার ১০ শতাংশ।

বিএইচবিএফসির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন মেয়াদি ঋণের মধ্যে প্রতি ১ লাখ টাকার ঋণের জন্য মাসিক কিস্তির পরিমাণ সর্বনিম্ন ৮৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ১৭৫ টাকা।

এর বাইরে ডেলটা ব্র্যাক হাউজিং (ডিবিএইচ), ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস, আইপিডিসিসহ বেশ কিছু বেসরকারি মালিকানাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গৃহঋণ দিয়ে থাকে।

ডিবিএইচের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার বিধান ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, গৃহঋণ খাতে প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। এ খাতে প্রতিষ্ঠানটি প্রচলিত রীতিতে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে। এর বেশি ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিশেষ অনুমোদন নিতে হয়। ঋণের সুদের হার সোয়া ৯ থেকে সর্বোচ্চ সোয়া ১০ শতাংশ।

ব্যাংকের মধ্যে বিদেশি মালিকানাধীন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ইসলামী, আইএফআইসি, ব্র্যাক, ইস্টার্নসহ বেসরকারি খাতের বেশ কিছু ব্যাংক ফ্ল্যাট ক্রয় বা বাড়ি নির্মাণে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ গৃহঋণ–সুবিধা দিয়ে থাকে।

সাধারণ মানুষের জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে স্বল্প সুদে ঋণ–সুবিধা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ একটি ঘূর্ণমান তহবিল গঠন করেছিল। তবে ২০১০ সালের পর সেই তহবিলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব দীর্ঘদিন ধরে এ তহবিলটি পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়ে আসছে।

এদিকে এবার চট্টগ্রাম নগরে আজ থেকে শুরু হওয়া আবাসন মেলায় অংশ নিচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি, লঙ্কাবাংলা, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডেলটা ব্র্যাক হাউজিং, আইডিএলসি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। এতে গ্রাহকেরা ঋণসংক্রান্ত বিষয়াদি জানতে পারবেন।