মানুষ বাঁচুক মানবিক মর্যাদায়

সেলিনা হোসেন ও অদিতি ফাল্গুনী। ছবি: খালেদ সরকার
সেলিনা হোসেন ও অদিতি ফাল্গুনী। ছবি: খালেদ সরকার

পিয়াস মজিদ: সেলিনা হোসেনের জন্ম দেশভাগের বছর। ষাটের দশকে তাঁর সাহিত্যিক অভিযাত্রা, ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের বছর প্রথম গল্পের বই উৎস থেকে নিরন্তর প্রকাশিত হয়। ১৯৬৯ সালে বাঙালি জাতি যখন তার উৎস অনুসন্ধানে নিমগ্ন, ঠিক তখন একজন তরুণ কথাসাহিত্যিক তাঁর বইয়ের নাম দিচ্ছেন উৎস থেকে নিরন্তর। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। অন্যদিকে, ’৬৯-এর ত্রিশ বছর পর ১৯৯৯-এ আরেক তরুণ কথাসাহিত্যিক অদিতি ফাল্গুনীর প্রথম গল্পের বই ইমানুয়েলের গৃহপ্রবেশ প্রকাশিত হলো। সমাজ ও বৃহৎ জনজীবন ছিল এই বইয়ের গল্পগুলোর প্রধান উপজীব্য। আপনাদের দুজনের কাছেই জানতে চাই আপনাদের শুরুর সময়টি নিয়ে।

সেলিনা হোসেন: আমার মনে হয়, গত শতকের ষাটের দশকে যে সময়টি আমি পার করে এসেছি, তখনকার রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট আমার লেখালেখির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া আমি ছিলাম বাম ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত। শুধু সংগঠন করার জন্য করা নয়, নেপথ্যে ভাবনাটি ছিল রাজনীতির মধ্য দিয়ে দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মুক্তি। প্রগতিশীল রাজনীতির এ ধারাতেই বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। সে সময়টি ছিল আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের বীজ-বিন্দু, যাকে স্মরণে রাখতে হবে বারবার। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালে লিখিত কয়েকটি গল্প নিয়ে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আবদুল হাফিজের নির্দেশনায়, বাবা-মায়ের প্রশ্রয়ে প্রকাশিত হলো আমার প্রথম বই। নিজেকে আমি ভাগ্যবান মনে করি এ কারণে যে সাহিত্যিক প্রথম প্রভাতেই আমার বইকে স্বাগত জানিয়ে লিখিত ও মৌখিক আলোচনা করেছিলেন শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ও হুমায়ুন আজাদ।

অদিতি ফাল্গুনী: বাবার চাকরিসূত্রে আমি বেড়ে উঠেছি দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিচিত্র পরিবেশে। উত্তরবঙ্গের বিস্তৃত প্রান্তরে চলতে দেখেছি মহিষের গাড়ি, রাঙামাটিতে বৌদ্ধমন্দির ও লেকের সৌন্দর্য যেমন আস্বাদন করেছি, আবার একই সঙ্গে সেখানে সেনা আগ্রাসনে নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষজনের বিপর্যস্ত জীবন, বরিশালে ধানসিঁড়ির কোমল জনপদ আবার ঢাকায় আশির দশকে এরশাদবিরোধী গণ-আন্দোলনের সময় আমার মেডিকেলপড়ুয়া ভাইকে হলে পিটুনি খেয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখেছি। আমার শুরুর গল্পগুলোতে সরাসরি হয়তো সামরিক স্বৈরশাসনবিরোধী উত্তাপ খুঁজে পাওয়া যাবে না, তবে গভীর অন্তর্লীনে বৃহৎ জনমানুষের যাপিত জীবন ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা হয়তো মুদ্রিত হয়েছে।

পিয়াস: সেলিনা আপা, আপনার প্রথম উপন্যাস উত্তর সারথি বেরিয়েছে ১৯৭১-এ। অনেক স্মরণীয় গল্প লিখেছেন। তবু উপন্যাসের বড় ক্যানভাসেই যেন আপনি বেশি সক্রিয় ও স্বচ্ছন্দ। পক্ষান্তরে অদিতি ফাল্গুনী, গল্পের পাশাপাশি কয়েকটি উপন্যাসিকা বেরিয়েছে আপনার কিন্তু পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস এখনো প্রকাশিত হয়নি। আপনাদের উপন্যাস-যাত্রা সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।

সেলিনা: শুরুতে যখন কবিতা লিখতাম, তখনই মনে হতো আমার যা বলার কথা তা কেবল কবিতার ক্যানভাসে ধরা সম্ভব নয়। আরও বড় ক্যানভাস দরকার। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে গল্প লিখতে শুরু করলাম। মানুষের আন্তঃসম্পর্ক যে গল্পকারের বিষয় ছিল তা ক্রমে মানুষের জীবনকে আরও বড় পরিসরে দেখতে শুরু করে আশ্রয় নেয় উপন্যাসের অবয়বে। এভাবেই প্রকাশ পেল উত্তর সারথি। এর পরপর সত্তরের ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিল জলোচ্ছ্বাস উপন্যাসটি।

অদিতি: আমার পারিবারিক পাঠাগারে রুশ সাহিত্যের সমৃদ্ধ সংগ্রহ ছিল। ব্রাদার্স কারামাজভ, আন্না কারেনিনার মতো বিশাল ক্যানভাসের উপন্যাস পড়ে লেখকজীবনের শুরুতেই মনে হতো উপন্যাস লিখলে এই রকম বিস্তারেই লিখব। তবে আমার প্রথম গল্পের বইয়েই ছোট উপন্যাস-আয়তনের কয়েকটি গল্প ছিল। এরপর ধান্যবতীকথা নামে রাখাইন জনপদ নিয়ে একটি উপন্যাসের খসড়া দাঁড় করাই। এর কিছু অংশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, সম্পূর্ণ করতে আরও সময় নিতে চাই।

পিয়াস: মুক্তিযুদ্ধ আপনাদের দুজনের লেখাতেই বিশেষ মাত্রায় এসেছে। সেলিনা আপা হাঙর নদী গ্রেনেড, যুদ্ধ,গেরিলাবীরাঙ্গনা উপন্যাস লিখেছেন। অদিতি লিখেছেন গল্পগ্রন্থ অপৌরুষেয় ১৯৭১হাঙর নদী গ্রেনেড-এ আমরা দেখি এক মা তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে উৎসর্গ করেছেন মুক্তিসংগ্রামের মোহনায়। আর অপৌরুষেয় ১৯৭১-এ উঠে এসেছে পাকিস্তানি হানাদারদের আক্রমণে পৌরুষশক্তিহারা মানুষের কথা। মুক্তিযুদ্ধের চেনা বাস্তবের বাইরে একটু গভীরে গিয়ে শারীরিকভাবে প্রান্তীয় মানুষের কথা লিখতে গিয়ে কোন চিন্তা কাজ করেছে আপনাদের?

সেলিনা: মুক্তিযুদ্ধকে আমি একটি সার্বিক জনযুদ্ধ হিসেবে দেখেছি, যেখানে মুষ্টিমেয় যুদ্ধাপরাধী ছাড়া দেশের নারী-পুরুষ-শিশু—সবাই নানাভাবে অংশ নিয়েছেন। হাঙর নদী গ্রেনেড-এর বুড়ি একজন নিরক্ষর সাধারণ নারী, যে অনেক কিছু না বুঝলেও নিজের জীবন দিয়ে বোঝে স্বাধীনতার মর্ম। সে তার পা প্রতিবন্ধী পুত্র রইসকে উৎসর্গ করে আর সব মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে, স্বাধীনতার প্রয়োজনে। জনযুদ্ধের মাত্রাটি আমাদের অনুধাবনে আনতেই উপন্যাসে এ বিষয়ের অবতারণা করেছি।

 অদিতি: একসময় সংবাদপত্রের প্রতিবেদন লেখার কাজে যুদ্ধাহত রোগমুক্তি বিশ্রামাগারে গিয়ে আমি মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন এক বাস্তবের মুখোমুখি হই। সেখানে এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধার দেখা পাই, যাঁদের কেউ কেউ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হানাদারদের গুলিতে তাঁদের পৌরুষ হারিয়েছেন। মধু নামে এক মুক্তিযোদ্ধার ডায়েরি পড়ে জানতে পারি তাঁদের করুণ কাহিনি। এই সব নিয়েই অপৌরুষেয় ১৯৭১

পিয়াস: সাহিত্যে নারীর পরিসর নিয়ে আপনারা দুজনেই কাজ করেছেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রায় পঞ্চাশ বছরের যাত্রায় কতটুকু অগ্রগমন দেখেন আমাদের নারীদের?

সেলিনা: স্বাধীনতার এত বছর আমরা শিক্ষায়-স্বাস্থ্যে-আর্থিক সংগতিতে অনেক এগিয়েছি। সমাজ ও রাষ্ট্রে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। তবে এই ২০১৭-তে এসেও পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির হাত থেকে পুরোপুরি রেহাই পাইনি আমরা। এ অবস্থার পরিবর্তন পুলিশ দিয়ে, আইন করে সম্ভব নয়। প্রয়োজন সব নাগরিকের দৃষ্টিভঙ্গির রূপান্তর, নারী-পুরুষ সমতার ধারণায় শ্রদ্ধাবোধ সঞ্চার। আমার সাম্প্রতিক একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি। বরগুনার বামনা উপজেলার প্রত্যন্ত জায়গায় আমরা মেয়েদের জন্য একটি হোস্টেল তৈরি করেছি। মেয়েরা যেই হোস্টেলে থাকতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই স্থানীয় কিছু বখাটে ছেলে হোস্টেলের মুখে দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগ করল। অর্থাৎ তারা মেয়েদের লেখাপড়া করতে দিতে চায় না। এ কোন মানসিকতা?

অদিতি: অফিস-আদালত, মাঠঘাট থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের মঞ্চে নিরাপত্তা রক্ষায় নির্ভীক নারীদের উপস্থিতি দেখে আশান্বিত হই। আবার নিজের অভিজ্ঞতায় পথ চলতে গিয়ে বুঝি, নারীর পথ এখনো অনেক বন্ধুর। লেখার প্রয়োজনে যদি একা কোথাও যাই, এই সমাজে হাজারটা প্রশ্ন নেবে আমার পিছু—আপনি বিয়ে করেছেন কি না, করলে আপনার স্বামী আপনাকে একা ছাড়ল কেন, ছেলেমেয়ে কোথায়?—এ রকম হাজারটা প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে এখনো কাজ করতে হয় প্রান্ত থেকে নগরের নারীকেও।

পিয়াস: লেখার প্রয়োজনে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান আপনারা। জনজীবনের সঙ্গে নিবিড় পরিচয় লেখক হিসেবে আপনাদের নতুন কোনো বিশেষ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করে কি?

সেলিনা: প্রায়ই করে। উপন্যাসের প্রয়োজনে টেকনাফ থেকে ট্রলারে করে মাঝসমুদ্রে যেতে চেয়েছি জেলেদের সঙ্গে। একজন ধর্মপরায়ণ বয়স্ক মানুষ ছিলেন ওই ট্রলারের দায়িত্বে। ভাবলাম আমাকে ওঠাবেন না, কিন্তু যখন বললাম, ‘চাচা, আমি ট্রলারে যেতে চাই আপনাদের সঙ্গে। একটি উপন্যাস লিখব’। তৎক্ষণাৎ তিনি আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন, ‘আসেন মা, আসেন’। তো, এই রকম অনেক ইতিবাচক অভিজ্ঞতা হয়েছে পথ চলতে গিয়ে। এমন অতিসাধারণ ভালো মানুষদের সহযোগিতা ছাড়া আমরা এত দূর আসতে পারতাম না।

অদিতি: সেলিনা আপার মতো আমারও ইতিবাচক অভিজ্ঞতা অনেক। চট্টগ্রামে কর্মসূত্রে ছিলাম যখন, ঢাকা থেকে প্রায়ই বাসে যাতায়াত করতে হতো। ঢাকা-চট্টগ্রাম বাসযাত্রায় পাশের সিটের কোনো পুরুষযাত্রী আমার সমস্যা করতে পারে ভেবে বাসের ড্রাইভার-হেলপার মিলে আমার পাশের সিটটিও আমাকে দিয়ে বলেছেন, ‘আপা, কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবেন আপনি দুটি সিটই নিয়েছেন’। আশ্চর্য, তাঁরা কিন্তু বাড়তি সিটটির জন্য আমার কাছে অতিরিক্ত ভাড়াও দাবি করেননি।

পিয়াস: সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের কথাসাহিত্যে কোনো বিদ্রোহের ঘটনা বা কোনো মহিরুহের জীবনকে কেন্দ্র করে উপন্যাস লেখার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে লেখকের কথাসাহিত্যিক দক্ষতার চেয়ে ঘটনাটি বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে—এমন বলেছেন কেউ কেউ। আপনাদের মত কী?

সেলিনা: আমি এই অভিযোগ মানি না। মানি না এই কারণে, আমি যখন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে উপন্যাস লিখি, তখন রবীন্দ্রজীবন আমার উপজীব্য ছিল বটে কিন্তু একই সঙ্গে আমি ঐতিহাসিক চরিত্রগুলো পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াস পাই। পূর্ণছবির মগ্নতা উপন্যাসে রতন, ফটিক, চন্দরা নতুন করে তৈরি হয়েছে আমার চরিত্র হিসেবে। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি থেকে বেরিয়ে তারা আমার কলমে স্বাধীনভাবে বিকাশের পথ খুঁজেছে। এটাই একজন সৃজনশীল লেখকের কাজ। ঐতিহাসিক মহাযুদ্ধ কিংবা নারী-পুরুষ সম্পর্ক—বিষয় যাই হোক, লেখকের দক্ষতায় তা শিল্পরূপ পায়।

অদিতি: তলস্তয় রেজারেকশন লেখার সময় কত বছর ধরে কাজ করেছেন, উকিলের কাছ থেকে নথিপত্র সংগ্রহ করেছেন, সাইবেরিয়ার শ্রমশিবিরে ঘুরে বেড়িয়েছেন; তারপর যখন নিজের মতো করে উপন্যাসের কাঠামো তৈরি করেছেন, তখন বিষয়টি কিন্তু গৌণ হয়ে যায় না। কোন মাত্রায় লেখক তা ব্যবহার করছেন সেটিই দেখার বিষয়।

পিয়াস: এখন আপনারা কী লিখছেন?

সেলিনা: কার্তিক বিহুতে প্রেম নামে একটি উপন্যাস লিখছি। কার্তিক তো মঙ্গার সময়, যে সময়টি হয়তো সেভাবে ভালোবাসার নয় কিন্তু আমি এই উপন্যাসে দেখাচ্ছি বিরুদ্ধ বাস্তবে বসবাস করেও মানুষ কী করে তৈরি করে ভালোবাসার বারান্দা। হরিণঘাটার পটভূমিতে অটিজম, তথাকথিত বামন মানুষ উপন্যাসটিতে উঠে আসবে প্রেমের অনুষঙ্গে।

অদিতি: আমার বেশ কিছু অসমাপ্ত উপন্যাসিকা আছে। এগুলো শেষ করে আনার কথা ভাবছি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যা, ভারতে মৌলবাদের উত্থান এসবের সঙ্গে টিএস এলিয়টের মার্ডার ইন দ্য ক্যাথিড্রাল, মীরা বাঈয়ের মৃত্যু ইত্যাদি অনুষঙ্গ একসঙ্গে করে মানব-ইতিহাসের রক্তাক্ত প্রবাহকে উপন্যাসের আকার দেওয়ার কথা চিন্তা করছি।

পিয়াস: সারা বিশ্বে এখন রক্ষণশীল শক্তির অশুভ দাপট দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। চিন্তার স্বাধীনতার বিপক্ষে সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী শক্তি জোট বেঁধেছে বাংলাদেশ-ভারতসহ বিভিন্ন জায়গায়। নারীর বিকাশকেও বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে এরা। লেখক হিসেবে আপনারা কীভাবে দেখছেন এই পরিস্থিতি?

 সেলিনা: মর্মান্তিক ও দুঃখজনক পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে। শুভবুদ্ধির মানুষের প্রবল প্রতিরোধ ছাড়া এই অবস্থার অবসান হবে না। তবে আমি আশাবাদী কারণ যে বছর রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে মৌলবাদীরা বোমা হামলা করল, এর ঠিক পরের বছরই হাজার হাজার মানুষ ভয়ভীতি তুচ্ছ করে এসেছে নূতনের আবাহনে। এভাবেই অন্ধকার কাটবে।

অদিতি: আইএস কিংবা আরএসএসের মতো গোষ্ঠীগুলো মানবসভ্যতার অগ্রগতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমাদের এখানে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে কেউ কেউ। আবার ভারতে কবিতা লেখার কারণে কবিরা মৌলবাদীদের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন। তবে আমরা দেখেছি ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকে মানুষের সঙ্গে মানববিরোধী অচলায়তনের দ্বন্দ্ব-যুদ্ধ বরাবরই চলেছে। শেষতক মানুষের মঙ্গলচিন্তারই জয় হয়েছে।

পিয়াস: নতুন বাংলা বছরের মুখোমুখি আমরা। নববর্ষের প্রত্যাশা কী?

সেলিনা: অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশই প্রধান প্রত্যাশা। মানুষ যেন তার মানবিক মর্যাদায় বেঁচে থাকতে এবং সম্মুখযাত্রার স্বপ্ন দেখতে পারে তেমন একটি নিরাপদ সমাজ ও স্বদেশই কাম্য।

অদিতি: মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতির ভিত্তিতে সমতলের-পাহাড়ের সব নারী-পুরুষের সার্বিক মুক্তিই নতুন বছরের কামনা।