ছবি হবে আমাদের গল্পে

আমজাদ হোসেন ও অমিতাভ রেজা। ছবি: খালেদ সরকার
আমজাদ হোসেন ও অমিতাভ রেজা। ছবি: খালেদ সরকার

ফাহমিদুল হক: এই আলাপচারিতায় উপস্থিত আছেন দুই প্রজন্মের দুজন স্বনামধন্য চিত্রপরিচালক। একজন গোলাপী এখন ট্রেনে, নয়নমণি, ভাত দে ইত্যাদি চলচ্চিত্রের নির্মাতা আমজাদ হোসেন; আরেকজন আয়নাবাজির পরিচালক অমিতাভ রেজা। প্রথম প্রশ্ন আমজাদ হোসেনের কাছে—আপনাদের সময়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে কী কী সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ ছিল?

আমজাদ হোসেন: শুরুর দিকে মহিউদ্দিন, ফতেহ লোহানী, কাজী জহির, জহির রায়হান—তাঁরা সবাই ‘এনলাইটেনড’ মানুষ ছিলেন। জহরত আরা, রওশন আরা—এ রকম নারীরা আসার পর গোটা পরিবেশই শিক্ষিতের পরিবেশ হয়ে ওঠে। এমন এক প্রেক্ষাপটে এখানে প্রবেশ করি আমি। প্রথমে আমার পরিচয় ছিল লেখক-চিত্রনাট্যকার। কিন্তু চলচ্চিত্রের নানা কিছু শিখেছি পরিচালক মহিউদ্দিন, ফতেহ লোহানী, সম্পাদক বশীর আহমেদ—এঁদের কাছ থেকে। জহির রায়হানের প্রায় সব স্ক্রিপ্টে কাজ করেছি। প্রথম দিকের ছবি প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ছিল না। আমাদের গড়ে উঠতে অনেক কষ্ট হয়েছে।

জহির রায়হান পরিচালিত জীবন থেকে নেয়া ছবিতে রাজ্জাক ও সুচন্দা
জহির রায়হান পরিচালিত জীবন থেকে নেয়া ছবিতে রাজ্জাক ও সুচন্দা

অমিতাভ রেজা: আমি একটু বলতে চাই, আপনার কাজগুলোতে একটা রাজনৈতিক চিন্তার প্রতিফলন দেখা যায়।

আমজাদ: সে ক্ষেত্রে একটা শব্দই বলা যায়—শ্রেণিসংগ্রাম। শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস জানা না থাকলে চরিত্রগুলো বিকশিত করা বা চরিত্রগুলোর মুখে যথাযথ সংলাপ বসানোর মতো বুদ্ধি পরিচালকের থাকবে না। আবার অনেক রাজনৈতিক ছবি হয়েছে, যেখানে দৃশ্য থেকে দৃশ্যে চরম রাজনৈতিক বক্তব্য ছিল, যেমন জীবন থেকে নেয়া। কিন্তু গোলাপী এখন ট্রেনে ছবিতে আমি রাজনৈতিক বক্তব্য উচ্চকিত করিনি।

ফাহমিদুল: জহির রায়হান, আলমগীর কবির বা আপনার মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা ছিল। কিন্তু অন্যান্য নির্মাতা, যাঁরা সামাজিক ছবির আওতায় অনেক বিনোদনধর্মী ছবি করছেন—সমাজচিত্র আছে সেখানে, কিন্তু এ রকম সক্রিয় শ্রেণিচেতনা নেই।

আমজাদ: একটা জিনিস ছিল আগে—সাহিত্যের প্রভাব। শরৎ, তারাশঙ্কর—এঁদের বই পড়ে ছবি বানানো হতো। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে এসে এটা তো নকলের রূপ ধারণ করেছে, শিল্প-সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়ে।

ফাহমিদুল: এবার অমিতাভ রেজার কাছে প্রশ্ন, পূর্বসূরিদের কাছ থেকে আপনারা একটা উত্তরাধিকার পেয়েছেন। এখন এই উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতায় আপনি যখন চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন, তখন সার্বিকভাবে বাংলা চলচ্চিত্রকে কীভাবে দেখেন? কোন জায়গায় নিজেকে ‘আইডেন্টিফাই’ করেন; কী দেখেন ভবিষ্যৎ?

অমিতাভ: আমরা আসলে নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের ফসল। ওই সময় যে জাগরণ ছিল, সরাসরিভাবে আমি জড়িয়ে ছিলাম এর সঙ্গে। কবিতা ও কবিতার আবৃত্তি খুব জনপ্রিয় ছিল তখন। এ ধরনের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিকাশ একজনকে চলচ্চিত্রকার হয়ে উঠতে সাহায্য করে। কিন্তু আমার নায়ক কে? সত্যজিৎ রায় তো আমার নায়ক নন। আমার নায়ক খুঁজতে গিয়ে...তখন তো স্ক্রিনে আমজাদ হোসেন নেই, আলমগীর কবির নেই...আমার নায়ক হয়ে এল শর্ট ফিল্ম মুভমেন্ট। সক্রিয়ভাবে ওখানে অংশ নেওয়া শুরু করলাম। তখন আমাদের নায়ক হয়ে উঠলেন মোরশেদুল ইসলাম, তানভীর মোকাম্মেল, মানজারে হাসীন মুরাদ।

এখন আপনার যে দ্বিতীয় প্রশ্ন, ভবিষ্যতের সিনেমার ব্যাপারে; আমাদের ফেলো ফিল্মমেকাররা, আমি বিশ্বাস করি...এরপর গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ছবি আসছে, অনিমেষ আইচের ছবি আসছে...আমরা সবাই কিন্তু আছি ওই জায়গায় যে আমরা আমাদের দেশের জন্য ছবি বানাব, আমরা আমাদের গল্প বানব। আমাদের সাহিত্য, আমাদের কবিতা, আমাদের গল্প দিয়ে ছবি বানাব আমরা।

আলমগীর কবির পরিচালিত সীমানা পেরিয়ে ছবিতে বুলবুল আহমেদ ও জয়শ্রী কবির
আলমগীর কবির পরিচালিত সীমানা পেরিয়ে ছবিতে বুলবুল আহমেদ ও জয়শ্রী কবির

আমজাদ: এইটাই...যেদিন চলচ্চিত্রে পা দিয়েছি, সেদিন থেকেই বিশ্বাস করেছি, আমরা আমাদের ছবি বানাব, আমাদের কথা বলব, আমাদের বাড়িঘরের চিত্র দেখাব। তবে যাঁরা শর্ট ফিল্ম আন্দোলন করেছেন, তাঁরা ঠিকমতো আন্দোলনটা করতে পারেননি। হয়তো মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক নিয়ে তাঁরা কাজ করছেন; কিন্তু ওই যে সিরাজগঞ্জের গ্রামে ফতেহ লোহানী আসিয়া বানানোর চেষ্টা করেছেন, তার স্বীকৃতি তাঁরা দেননি।

ফাহমিদুল: আমার আরেকটা প্রশ্ন, অমিতাভের কাছে—বর্তমান প্রজন্মের নির্মাতা হিসেবে আমজাদ হোসেনের প্রজন্মের চলচ্চিত্রকে সার্বিকভাবে কী মূল্যায়ন করেন?

অমিতাভ: আমার মনে হয়, চলচ্চিত্র পাঠের জন্য আমরা সারা পৃথিবীর চলচ্চিত্র যেভাবে পাঠ করি, তার সমপরিমাণ চর্চা হওয়া দরকার সত্তরের দশকের ছবিগুলোকে নিয়ে। আমরা ঋত্বিক ঘটকের রেট্রোস্পেক্টিভ করি, কিন্তু এখনো কেন আমজাদ হোসেনের রেট্রোস্পেক্টিভ করিনি? এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য, জাতি হিসেবে হীনম্মন্যতার প্রকাশ। আমাদের পায়ের নিচে যে মাটি আছে, তা আমরা কখনোই দেখলাম না ঠিকমতো। এত চলচ্চিত্র উৎসব হচ্ছে, এত কিছু হচ্ছে...এখন একটা লাইফটাইম এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড দিলাম, তাতে কোনো লাভ হবে না। এরচেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলমগীর কবির, সুভাষ দত্তের ছবিকে অনুধাবন করা।

ফাহমিদুল: আমজাদ ভাই, আপনি এই প্রজন্মের ছবিকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

আমাজাদ: আমাদের চিন্তাভাবনা যত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, অমিতাভের মতো এই নতুন নির্মাতারা আসার পর চিন্তার দরজাগুলো আরও বেশি খুলে যাচ্ছে। এটা তো হওয়ারই কথা, নতুন নতুন চিন্তাভাবনা আসবে।

ফাহমিদুল: অমিতাভ, আপনার চাইতেও একেবারে তরুণতর নির্মাতারা আসছেন। তাঁদের অনেক কাজ দেখার সুযোগ আমার হয়েছে, কোথায় যেন সমাজ-রাষ্ট্র-রাজনীতি-ইতিহাসের অনুপস্থিতি দেখতে পাই আমি। এই পাঠ ও প্রস্তুতি যেন সম্পন্ন হয়নি।

অমিতাভ: তরুণ অনেক নির্মাতাকে আমি এই প্রশ্ন করি যে সে কেন ছবি বানাতে চায়? উত্তরটা যদি আমরা জানি, তাহলে আপনার প্রশ্নের উত্তরও চলে আসে। এখন কেউ যদি বলে আমি আমার নাম দেখতে চাই, এ কারণে ফিল্ম বানাব, তবে ওর কাছে কন্টেন্টের এসেন্স গুরুত্বপূর্ণ না। ছবি বানাতে কী লাগে? খুব ভালো ক্যামেরাম্যান ইত্যাদি কিছু থাকলে ছবি নির্মাণ কোনো কঠিন ব্যাপার না। কিন্তু আমি কী নির্মাণ করব—এই সিদ্ধান্ত নিতে অনেক বছর লাগে।

আমজাদ: চলচ্চিত্রের জন্য স্ক্রিপ্টকে অনেক চিন্তাভাবনা করে সাজাতে হয়। সিকোয়েন্সগুলো লেখার সময়, কোথায় কী ঢালবে, কোথায় কিসের প্রাধান্য থাকবে, ডায়ালগ নাকি মিউজিক, কোথায় ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে—এগুলো একজন পরিচালকের দিনরাত চিন্তার বিষয়।

ফাহমিদুল: এখন চলচ্চিত্রের কলাকৌশল জানা হয়ে গেছে আমাদের। ফান্ডিংও নানাভাবে ম্যানেজ হচ্ছে। সমস্যা থেকে যাচ্ছে বিপণন ও পরিবেশন করার ক্ষেত্রে। অমিতাভ বলেন, এই চ্যালেঞ্জ একজন নতুন নির্মাতা কীভাবে মোকাবিলা করবেন?

আমজাদ: অমিতাভের আগে আমি বলি। যখন আমি জানি যে আমার ছবি আর দশটা ছবি থেকে আলাদা, আমার ফান্ড কম, তখন কিন্তু প্রডাকশন পর্যায়েই ফান্ডকে ম্যানেজ করতে হবে। বলছি মিতব্যয়িতার কথা। স্ক্রিন প্লেতেই তার প্রতিফলন থাকবে, একটা টান টান ব্যাপার থাকবে।

অমিতাভ: একটা ছবি বিপণন করতে হয় কীভাবে, এর উত্তর আমি দেব না। পরিচালক হিসেবে এটা আমার কাজ নয়। এটা প্রযোজকের কাজ।

আমজাদ: তবে আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যেকোনো কারণেই হোক, বাংলাদেশের মতো জায়গায় সব ব্যাপারেই পরিচালককে জড়িত হতে হয়।

অমিতাভ: আপনাদের সময়ে সেটা সম্ভব ছিল। কিন্তু এখন বড় প্রডকাশন হাউস স্থায়ী পুঁজি নিয়ে সিনেমায় না এলে এই মাধ্যমের উন্নতি হবে না। পেশাদার ও প্রশিক্ষিত প্রযোজক থাকতে হবে। প্রযোজকের দায়িত্ব কেবল টাকা দেওয়া নয়।

আমজাদ: তোমার কথাটা ভালো। কিন্তু যে আবর্জনা জমে আছে প্রযোজনার নামে...।

অমিতাভ: কিন্তু আমার প্রশ্ন আছে আপনার কাছে। আপনারা বেঁচে থাকতে এফডিসিতে এই দখল, এই মাস্তান বাহিনীর দাপট কীভাবে হলো? সৈয়দ শামসুল হকের মতো লেখক এক নম্বর ফ্লোরের সামনে আড্ডা দিতেন, আপনার মতো চিত্রনাট্যকার, রাজ্জাক, ফারুক সাহেবের মতো শ্রদ্ধেয় মানুষ...আপনাদের মতো শক্তিশালী মানুষ থাকতে কীভাবে এমন হলো?

আমজাদ: এখানে কথা আছে, যার কাছে টাকা আছে সে-ই প্রযোজক। এখন গুন্ডাপান্ডাদের কাছেও টাকা আছে।

অমিতাভ: আপনারা কী করছেন?

আমজাদ: আমরা তো ইন্ডাস্ট্রি থেকে চলে এসেছি।

অমিতাভ: সিনেমার প্রতি প্রেম থাকার পরও আপনারা কেন চলে এসেছেন?

আমজাদ: তখন চারদিকে অশ্লীল সিনেমা নির্মাণ শুরু হয়েছে...এই সময় রাজ্জাক হয়তো কিছু ছবি করেছেন, কিন্তু ফারুকসহ অনেকেই চলে আসছেন।

অমিতাভ: তাহলে আপনারা ফাইট করে জয়ী হতে পারেননি।

আমজাদ: তা বলতে পারো। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তুতে আছে সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্র। আমাদের চলচ্চিত্রে সংস্কৃতি তো নেই। সংস্কৃতি একদম বনবাসে। আমাদের ছবির যে চেহারা, যে দেশটা ভাষার জন্য লড়াই করেছে, মুক্তিযুদ্ধ করেছে, একজন পরিচালকের দায়িত্ব তো এখানে অনেক বেশি। আন্তর্জাতিকভাবে যেখানেই যাক, আমাদের ছবি দেখে যেন মনে হয় এটা বাংলাদেশের ছবি। তা তো মনে হচ্ছে না। এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেসব ছবি হচ্ছে, তা নকল ছবি।

ফাহমিদুল: অবক্ষয়ের পরেও আমাদের যে বাঙালি সংস্কৃতি, তার চিত্রায়ণে, তার ধারাবাহিকতা রক্ষায়, নতুন সময়ে সাংস্কৃতিক দিকনির্দেশনা দিতে, চলচ্চিত্র কী রকম ভূমিকা রাখতে পারে বলে আপনারা মনে করেন?

আমজাদ: পুরো ভূমিকাই রাখতে পারে। কিন্তু সমাজ, জীবন, রাজনীতি, সাহিত্য, সাংবাদিকতা—অনেক কিছুর ওপরেই তো চলচ্চিত্রকে নির্ভর করতে হয়। সবকিছু থেকেই টুকরো-টুকরো করে ধার করে চলচ্চিত্র। এগুলো যদি সুস্থ-সবল না থাকে, চলচ্চিত্র ভীষণ বিপদে পড়ে যায়।

অমিতাভ: শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে যেভাবে বৈষম্য তৈরি হয়েছে, বাংলা-আরবি-ইংরেজির মধ্য দিয়ে, অনেক ক্ষেত্রে নতুন ছেলেমেয়েরা ‘কানেক্ট’ই করতে পারে না বাংলা সাহিত্য-সমাজ-ইতিহাসের সঙ্গে। কোনো কোনো ছবিতে দেখি অদ্ভুত একেকটা গল্প বলে, আমিই ‘কানেক্ট’ করতে পারি না তার সঙ্গে। এখনো কী হচ্ছে? বাংলা বই থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কবিতা-গল্প বাদ দেওয়া হয়েছে। এই যদি হয় শিক্ষাব্যবস্থা, তাহলে আমরা কোথা থেকে বিকশিত হব?

ফাহমিদুল: দুটো প্রসঙ্গ উত্থাপন করে ইতি টানব। একটা তথ্য হলো—গত চার বছরে ৯৭ জন নতুন নির্মাতা ফিচার ফিল্ম করেছেন। যদি শর্ট ফিল্ম ও ডকুমেন্টারি ধরেন, তবে সংখ্যাট ১ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এই তথ্যকে আপনারা কীভাবে দেখেন? আরেকটা—বিগত ২০ বছরে এই ঢাকা শহরে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। গ্রামগুলোতেও পরিবর্তনের ছোঁয়া দেখছি। তাহলে নতুন সময়ে ছবি করতে গেলে আমরা কি আবহমান বাংলাকে ধারণ করব, নাকি পরিবর্তনশীল বাংলাদেশকে তুলে ধরব?

আমজাদ: আমাদের এখানে পয়লা বৈশাখ ব্যাপকভাবে পালিত হয়। কিন্তু আমাদের বৈশাখের কিছু কিছু বিষয় হারিয়ে যাচ্ছে। হালখাতা প্রায় হারিয়েই গেছে। আমরা যা কিছু করি না কেন, নিজেদের ঐতিহ্যকে ভিত্তি করেই করতে হবে। যে লোকগুলো হালখাতা করত, সেই হালখাতা করতে তাদের উৎসাহ দিতে হবে। ওই পরিবেশ যেন বজায় থাকে, আমাদের ঐতিহ্য যেন উজ্জীবিত থাকে। সাতচল্লিশের আগে এখানে সাম্প্রদায়িকতা ছিল না। এ রকম অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এখনো কিছুটা অবশিষ্ট আছে। আমরা যে বাংলাদেশে ছিলাম, সেই বাংলাদেশেই আছি, সেটা চলচ্চিত্রে তুলে ধরতে হবে। হয়তো ধুলা জমেছে, গাছের পাতায় যেমন ধুলা জমে, তা পরিষ্কার করে নিতে হবে।

অমিতাভ: দুই প্রসঙ্গের প্রথমটি হলো, প্রচুর নতুন নির্মাতা আসছেন। সেই নির্মাতাদের স্বাগত জানাই। এটা স্বাভাবিক ঘটনা। সময়ের প্রয়োজনে এটা ঘটবে। এখন চলচ্চিত্রের অনেক পথ উন্মুক্ত হচ্ছে—বিকল্প প্রদর্শনী, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব...নিকট ভবিষ্যতে আসবে ওয়েব চলচ্চিত্র। নেটফ্লিক্স যখন বাংলাদেশে ঢুকবে, এ রকম অনেক কিছু আসবে, ওয়েব ছবি প্রচুর নির্মিত হবে। এখনই টেলিভিশন নাটকের থেকে ওয়েব নাটকের বাজেট বেড়ে গেছে।

আমজাদ: আমি এই প্রসঙ্গটা নিয়ে কোনো কথা বলিনি। আমার কথা হচ্ছে, আসুক না, যত পারে আসুক। চলচ্চিত্র কী, বোঝার চেষ্টা করুক, হতাশ হোক, চলে যাক...চলচ্চিত্র জগৎ যত ভরপুর করা যায়, তত ভালো। তারপরে যার মেধা আছে, সে টিকে থাকবে।

অমিতাভ: আয়নাবাজি কিন্তু তরুণ নির্মাতাদের একটা সিগন্যাল দিয়ে দিয়েছে, তোমাদের তামিল ছবির নকল করতে হবে না, তোমার ছবিতে উচ্চকিত নাচ-গান থাকতে হবে না, তোমার ছবিতে তোমার গল্প থাকলে মধ্যবিত্ত দর্শক লাইন করে সিনেমা দেখতে যায়। আর দ্বিতীয় প্রশ্ন, সমাজ এবং বাংলাদেশের ঢাকা শহর পরিবর্তিত হচ্ছে, গ্রামবাংলা পরিবর্তিত হচ্ছে। ইট ইজ ডিফিকাল্ট টু সে, আমরা কোন ছবিটা বানাব? এটা ওই ইন্ডিভিস্যুয়াল ডিরেক্টর ডিসাইড করবে, সে কোন ছবি বানাবে।