ভবন নির্মাণে প্রকৌশলীর সহায়তা নিতে হবে

রাকিব আহসান পরিচালক,  বুয়েট-জেআইডিপিইউএস
রাকিব আহসান পরিচালক, বুয়েট-জেআইডিপিইউএস

বাংলাদেশের স্থাপনাগুলোর অবকাঠামোগত দুর্বলতাগুলো হলো, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কংক্রিটের সহনক্ষমতা (স্ট্রেংথ) ভালো না। ভবন নির্মাণে মানসম্পন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই বিল্ডিং কোড যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয় না। পাশাপাশি দুটি ভবনের মধ্যে ফাঁকা জায়গা কম থাকে, যা ঝুঁকিপূর্ণ।

ভবন নির্মাণের ঝুঁকি সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-জাপান ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার প্রিভেনশন অ্যান্ড আরবান সেইফটির (বুয়েট-জেআইডিপিইউএস) পরিচালক অধ্যাপক রাকিব আহসান এ কথা বলেন।

রাকিব বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বেশ বড় ধরনের ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নতুন গবেষণায় এসেছে, দেশের বিল্ডিং কোড ও অন্যান্য বিষয় যে মাত্রা অনুমান করে নির্ধারণ করা হয়েছে, ভূমিকম্পের মাত্রা তার চেয়েও অনেক বেশি হতে পারে। কিন্তু ভূমিকম্প কবে হবে তা তো কেউ জানে না। তাই ভয় না পেয়ে দুর্যোগ মোকাবিলার দুর্বলতাগুলো দূর করতে হবে। তিনি বলেন, বড় ভূমিকম্প মোকাবিলার যথাযথ প্রস্তুতি এখনো নেই। আস্তে আস্তে এই সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব বেশি। দুর্যোগ-পরবর্তী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এটা একটা বড় সমস্যা।’

বুয়েট-জেআইডিপিইউএসের পরিচালক বলেন, ভবন নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) মেনে চলতে হবে। বিল্ডিং কোড একটি বিস্তৃত বিষয়। ভবন তৈরির ক্ষেত্রে নকশা তৈরি থেকে নির্মাণ পর্যন্ত যেসব প্রকৌশলী জড়িত থাকবেন, তাঁদের প্রত্যেকের করণীয় সম্পর্কে বিল্ডিং কোডে বিস্তারিত বলা আছে। বিল্ডিং কোড টেকনিক্যাল বিষয়। ভবনমালিক এটা পড়ে বুঝবেন না। এটা প্রকৌশলীদের পড়তে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাই ভবনমালিকদের দায়িত্ব হলো ভবিষ্যতের ঝুঁকি এড়াতে স্থাপনা নির্মাণের কাজে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের সাহায্য নেওয়া।

বাংলাদেশে ভূমিকম্প-সহনশীল নির্মাণের ক্ষেত্রে সাধারণ সমস্যাগুলো সম্পর্কে এই প্রকৌশলী বলেন, ভবনমালিকেরা অনেক সময় মাটি পরীক্ষা করাতে চান না। এটা ভুল। ঝুঁকিপূর্ণ। ভবন নির্মাণের আগে অভিজ্ঞ ফাউন্ডেশন ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে মাটি পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো, দেশে স্নাতক পর্যায়ে প্রকৌশল শিক্ষার পাঠ্যক্রমে ভূমিকম্প-সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত শেখার সুযোগ নেই। বিস্তারিত জানতে হলে এ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে হয় বা নিজে নিজে শিখতে হয়। প্রয়োজনীয় পড়াশোনার অভাবে অনেক প্রকৌশলী তাই সাধারণ নিয়মে ভবনের নকশা করে থাকেন। এটা খুব বড় দুর্বলতা। এ বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার।

রাকিব আহসান বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) একাডেমিক বিভাগ ছাড়াও বেশ কিছু ইনস্টিটিউট আছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নতুন ইনস্টিটিউটটি হলো বুয়েট-জেআইডিপিইউএস। ভূমিকম্পের কারণে নানা রকম কাঠামোর ভবনে কী ধরনের কাঠামোর ক্ষতি হতে পারে, তা নিয়ে এখানে গবেষণা করা হয়। এই ইনস্টিটিউটে কিছু অত্যাধুনিক যন্ত্র আছে। যেমন ‘শেকিং টেবিল’ যন্ত্র দিয়ে ভূমিকম্পের কৃত্রিম কম্পন তৈরি করা যায়। এই যন্ত্রে কংক্রিট মডেল বসিয়ে নানা মাত্রার কম্পনে ক্ষতির হার পরিমাপ করা যায়। আবার মাটির নমুনা তুলে এনে এর উপাদান পরীক্ষা করে ভূমিকম্পের সময় মাটির গঠন অনুযায়ী এর ভেঙে পড়ার হার, কম্পন সহ্যক্ষমতা—এসব নিয়েও গবেষণা করা হয়। তিনি বলেন, উত্তরা-পূর্বাচল এলাকাগুলো পানির ওপর বালু-মাটি ভরাট করে গড়ে উঠেছে। বড় ভূমিকম্প হলে এসব এলাকায় লিকুইফ্যাকশন হতে পারে। অর্থাৎ ভিত্তির পুরোটাই পানি হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের ব্যাপারগুলো মাথায় রেখে আলাদা আলাদা পরিকল্পনা করা দরকার।