উপাদানগুলোর মিশ্রণ হতে হবে মানসম্পন্ন

মুনাজ আহমেদ নূর, উপাচার্য, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি
মুনাজ আহমেদ নূর, উপাচার্য, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি

ভূমিকম্পের সময় একটি স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য সব কটি উপাদান আলাদাভাবে যেমন ভালো মানের হতে হবে, তেমনি সব কটির মিশ্রণও হতে হবে মানসম্পন্ন। এ জন্য ভালো মানের প্রকৌশলী থেকে শুরু করে দরকার ভালো মানের রড, সিমেন্ট, কংক্রিট, দক্ষ শ্রমিক।

ভূমিকম্প সহনশীল একটি ভবন নির্মাণের জন্য এই বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) উপাচার্য মুনাজ আহমেদ নূর।

তিনি মনে করেন, ভূমিকম্পসহনশীল স্থাপনা তৈরির জন্য গুণগত মানসম্পন্ন উপাদান যেমন দরকার, তেমনই এর পেছনের কিছু বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো হলো ভালো মানের প্রকৌশলী, তদারক সংস্থা, ভালো মানের ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, অভিজ্ঞ শ্রমিক।

অধ্যাপক মুনাজ বলেন, প্রথমে বলতে হবে স্থাপনাটির নকশার জন্য ভালো মানের প্রকৌশলীর বিষয়টি। চিকিৎসকদের কাজের অনুমতি দেওয়ার জন্য যে রকম বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আছে, প্রকৌশলীদের জন্য সে রকম কোনো কাউন্সিল নেই। ভালো ও খারাপ মানের প্রকৌশলী আছে। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ে প্রকৌশলী হয়েছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। সবাই নকশা করছেন। কিন্তু সবার সমান সক্ষমতা নেই। এ কারণে তৃতীয় কোনো পক্ষকে এটা পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার। এরপর আসে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিষয়। তাঁদের কাজের পরিধি হচ্ছে তাঁরা মাঠে কাজ করবেন, কাজের গুণগত মান রক্ষা নিশ্চিত করবেন। সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষণীয় হলো, বেশির ভাগ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল বিষয়গুলোতে সান্ধ্যকালীন ডিগ্রি দিচ্ছে। এ ধরনের ডিগ্রি দেওয়াতে আপত্তি নেই। কিন্তু ঢালাও হলে সমস্যা। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো দেখা যাবে একসময় কোনো ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার পাবেন না। সবকিছুতে ভারসাম্য থাকা দরকার। এরপর আসে শ্রমিকদের বিষয়। আমাদের দেশে নির্মাণশিল্প খাতে যে শ্রমিকেরা কাজ করছেন, তাঁরা বেশির ভাগই অদক্ষ। তিনি শিখছেন নিজের কাজে ১০টা ভুল করে। দেখা যায়, শ্রমিক রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন, সেখান থেকে ভাড়া করে নিয়ে কাজে লাগানো হয়। তাঁরা কীভাবে বড় বড় বিল্ডিং বা ব্রিজ কনস্ট্রাকশন করবেন?

এই প্রকৌশলী বলেন, ভবন নির্মাণে রডের গুরুত্ব অনেক বেশি। এ জন্য ভালো মানের রড ব্যবহার করতে হবে। তিনি বলেন, স্টিল স্ট্রাকচারে যে স্টিলগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলোকে গার্ডার বলা হয়। বিম বা কলামের নকশা করার সময় চেষ্টা করা হয় যেন পুরো ভবনটিই ভূমিকম্প প্রতিরোধক হয়। এখানে এককভাবে কোনো উপাদান ভূমিকম্প প্রতিরোধক হয় না। পুরো ভবন ভূমিকম্প প্রতিরোধক হতে হলে কংক্রিট এবং অন্য উপাদানগুলো মিলে কাজ করতে হয়। ভালো মানের রড নিলেন, ভালো সিমেন্ট দিলেন, কংক্রিটের মিশ্রণটা হলো খারাপ। তখন সমস্যা দেখা দেবে। আলাদা আলাদা সব কটি উপাদানের প্রতি নজর দিতে হবে। সব কটি উপাদানের মান ভালো না হলে শেষ পর্যন্ত ভালো ফল পাওয়া যাবে না। আবার সব উপাদান গুণগত মানের দিক থেকে যদি সবচেয়ে ভালোও হয়, তাহলেও খুব ভালো স্থাপনা হবে, তার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। এখানে প্রকৌশলী, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘আপনি বাজার থেকে খুব ভালো মুরগি, মসলা নিয়ে এলেন। ইচ্ছেমতো রান্না করলেন। কিন্তু আপনার রান্না আর আপনার মায়ের রান্না এক হবে না।’