টেস্ট সিরিজ জয়ের এক যুগ আজ

নাফিসের ধৈর্য বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিল প্রথম সিরিজ জয়। ফাইল ছবি
নাফিসের ধৈর্য বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিল প্রথম সিরিজ জয়। ফাইল ছবি

লক্ষ্যটা ছিল ৩৭৪ রানের। কোনো উইকেট না হারিয়ে ৯৮ রান করে চতুর্থ দিন শেষ করা বাংলাদেশকে পঞ্চম দিনে করতে হবে ২৭৬। হাবিবুল বাশারের দল কোনো ঝুঁকি নেয়নি। ড্র করলেই যে সমাধান হয়ে যায়! তবে নিজেদের পরিকল্পনায় সফল করতে বিরাট পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। পরীক্ষাটা ধৈর্যের।
দাঁতে দাঁত চেপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা উইকেটে টিকে থাকতে হবে ব্যাটসম্যানদের। সাবধানে এগোতে হবে সেশন ধরে ধরে। সেই পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে পাস করেছিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে দুই ওপেনার জাভেদ ওমর ও নাফিস ইকবাল। দ্বিতীয় ইনিংসে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা উইকেটে থাকলেন জাভেদ। ২৫৮ বলে ৪৩ রানটা হয়তো চমকজাগানিয়া নয়। কিন্তু জাভেদের ইনিংসটি সময়ের দাবি মিটিয়েছিল দারুণভাবে।
তবে এই লড়াইয়ের মূল যোদ্ধা ছিলেন নাফিস। প্রায় আট ঘণ্টা ব্যাটিং করেছিলেন, একাই কাটিয়ে দিয়েছিলেন ৫৯ ওভার। তুলে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত সাফল্যটা ধরা দিয়েছিল বাংলাদেশের মুঠোয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট ড্র হয়ে গেল। চট্টগ্রামে আগের টেস্ট জেতায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো পেল সিরিজ জয়ের স্বাদ। প্রথম সিরিজ জয়ের তারিখটা ছিল ১৮ জানুয়ারি, ২০০৫—সময়ের ডানায় চড়ে সেটির এক যুগ পূর্তি আজ।
টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পাঁচ বছর পর প্রথম সিরিজ জয় বাংলাদেশের। ক্রিকেটের কুলীন সংস্করণে এই ‘পাঁচে’র সঙ্গে বাংলাদেশের অদ্ভুত এক সখ্য গড়ে উঠেছে গত ১২ বছরে। পরের টেস্ট সিরিজটা জিততেও প্রায় পাঁচ বছর লেগেছে—২০০৯ সালের জুলাইয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তৃতীয় টেস্ট সিরিজ জয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে, জিম্বাবুয়ের সঙ্গে। তবে কি চতুর্থ সিরিজটা জিততে অপেক্ষা করতে ২০১৯ পর্যন্ত? স্রেফ রসিকতা। কিন্তু বাস্তবতা যে এমনই রূঢ়। এখনো পর্যন্ত ৪৮টি টেস্ট সিরিজ খেলে বাংলাদেশের জয় বলতে ওই তিনটি। ড্র করেছে ৫টি আর বাকি ৪০টি সিরিজে হার। নিউজিল্যান্ডে চলমান সিরিজটাও যে বাংলাদেশ জিততে পারবে না, সেটিও নিশ্চিত।
বড় ট্র্যাজেডি, বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ে যে দুই তরুণের অনবদ্য ভূমিকা ছিল, দুজনই কক্ষচ্যুত হয়েছেন অনেক আগে। ১৮ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা এনামুল হক জুনিয়র উচ্চকণ্ঠে আগমনী বার্তা দিলেও খুব বেশি দূর এগোতে পারেননি। ১৫ টেস্ট ও ১০ ওয়ানডেতেই থমকে আছে তাঁর পথ চলা। এনামুলের ক্যারিয়ার সীমাবদ্ধ ঘরোয়া ক্রিকেটের চৌহদ্দিতে। সেখানেও তিনি আলো ছড়াতে পারছেন না খুব একটা।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই সিরিজে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক নাফিস বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিরাট আক্ষেপের নাম। ২ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটিতে ২০৫ রান করার পুরস্কার হিসেবে এই ওপেনার একটা গাড়িও উপহার পেয়েছিলেন। ১১ টেস্ট ও ১৬ ওয়ানডে খেলা নাফিস জাতীয় দল থেকে ছিটকে পড়েছেন বহু আগেই। ঘরোয়া ক্রিকেটেও খুব একটা নিয়মিত নন এখন। মাঠের বাইরেই বেশির ভাগ সময় কাটছে তাঁর। 

প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের নায়কেরা হারিয়ে গেলেও পরে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আলোকিত করেছেন আরও অনেক নায়ক। এনামুল-নাফিস তৃপ্তি হতে পারেন এটি ভেবে, বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ জিততে পারে, এই দৃষ্টান্ত তাঁরা অন্তত তৈরি করতে পেরেছেন। যে পথ ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়ে গেছে। যার বড় প্রমাণ সদ্য শেষ হওয়া ওয়েলিংটন টেস্ট। ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হেরেছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে বাংলাদেশ চার দিন ধরে এগিয়ে থাকবে, সেটাই বা কে ভেবেছিল!