সংবর্ধনায় নেই কোচ!

বাফুফে ভবনে কাল এনভয় গ্রুপের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মেয়েদের সাফ ফুটবলে রানার্সআপ বাংলাদেশের নারী দল l প্রথম আলো
বাফুফে ভবনে কাল এনভয় গ্রুপের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মেয়েদের সাফ ফুটবলে রানার্সআপ বাংলাদেশের নারী দল l প্রথম আলো

মেয়েদের সাফে রানার্সআপ বাংলাদেশ দলের সংবর্ধনা চলছেই। কাল ফুটবল ফেডারেশন ভবনে সাবিনাদের সংবর্ধনা দিয়েছে এনভয় গ্রুপ। যে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। প্রথমবারের মতো সাফের ফাইনালে ওঠা দলের ফুটবলার, কর্মকর্তা ও কোচিং স্টাফদের প্রত্যেকে পেয়েছেন আর্থিক পুরস্কার। যদিও সেটি খুব বেশি নয় (২০ হাজার টাকা)।

অনুষ্ঠানে ছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনসহ অন্য কর্মকর্তারা। তবে যাঁদের ঘিরে এই আয়োজন, ছিলেন না সেই দলের কোচিং স্টাফের কেউ! প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, সহকারী মাহবুবুর রহমান লিটুদের অনুষ্ঠানে না দেখে মন খারাপ করে সংবর্ধনাকক্ষের এক পাশে বসে ছিলেন ফুটবলাররা। সংবর্ধনায় আসা মেয়েদেরই একজন বলছিলেন, ‘আজ কোচ স্যার (গোলাম রব্বানী) আসেননি, আমাদের একটুও ভালো লাগছে না।’ কিন্তু কেন কোচ আসেননি? প্রশ্নটা উঠতেই ফুটবলারদের হিড়হিড় করে টেনে চারতলায় নিয়ে গেলেন বাফুফে কর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাফুফের টেকনিক্যাল ও স্ট্র্যাটেজিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি এবং গোলকিপার কোচ রায়ান স্যানফোর্ডের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েই কাল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসেননি দুই কোচ।

ঘটনাটা ঘটেছে কাল সকাল সাড়ে সাতটায়। প্রতিদিনের মতো এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বে ওঠা মেয়েদের টার্ফে অনুশীলন করাচ্ছিলেন দুই কোচ। কিন্তু তাঁদের সেখান থেকে বের করে দিয়ে অনুশীলনের দায়িত্ব নেন পল স্মলি ও রায়ান। প্রথম সেশনের অনুশীলনে ডিফেন্ডার মাসুরাকে না নিয়ে নার্গিসকে নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন পল। গোলাম রব্বানীর কোচিং জ্ঞান নিয়েও নাকি প্রশ্ন তোলেন এই ব্রিটিশ!

মেয়েদের ফুটবলের বয়সভিত্তিক ও জাতীয় দলের সাফল্যের পেছনের অন্যতম রূপকার গোলাম রব্বানী। তাঁর হাত ধরেই নেপালে টানা দুই বছর এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতে বাংলাদেশ। গত বছর তাজিকিস্তানে একই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশের মেয়েরা। গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের আঞ্চলিক বাছাইয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলেরও কোচ ছিলেন গোলাম রব্বানী। সর্বশেষ ভারতে সাফের ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়া দলটির কোচও তিনিই।

এমনিতেই বাংলাদেশের নারী ফুটবল দিন দিন হয়ে উঠেছে সোনার ডিম পাড়া হাঁস। বয়সভিত্তিক ও জাতীয় দলের সাফল্য দেখে বাফুফের বিদেশি কোচিং স্টাফও এখন এদিকে ঝুঁকছেন। কিছুদিন থেকেই নাকি মেয়েদের দলের অনুশীলনে অহেতুক ‘খবরদারি’র চেষ্টা করছেন স্মলি ও স্যানফোর্ড। কিন্তু কালকের ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি গোলাম রব্বানী। বাফুফে ভবন ছেড়ে বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন। মেয়েদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও আসেননি। গণমাধ্যমকে এড়াতে নিজের মুঠোফোন বন্ধ করে রেখেছেন। ফোন বাজলেও ধরছেন না মাহবুবুর।

কোচদের বাফুফে ভবন ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে গুঞ্জন বলেই উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মহিলা কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার, ‘তাঁরা দুজন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এসে আমার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত কাজ আছে বলেই তাঁরা ছুটি নিয়েছেন। ফুটবলে কত রকম গুঞ্জন যে হচ্ছে। এটাও তেমনি গুঞ্জন। শতভাগ মিথ্যা কথা। তাঁরা অনুশীলন ছেড়েও যাননি, পদত্যাগও করেননি।’