এক পা দূরেই নাদাল-ফেদেরার

>
জয়ের পর প্রথম অনুভূতিটাই হয়তো ছিল স্বস্তির। ২০১৪ ফ্রেঞ্চ ওপেনের পর এই প্রথম যে কোনো গ্র্যান্ড স্লামের সেমিফাইনালে উঠলেন রাফায়েল নাদাল! l এএফপি
জয়ের পর প্রথম অনুভূতিটাই হয়তো ছিল স্বস্তির। ২০১৪ ফ্রেঞ্চ ওপেনের পর এই প্রথম যে কোনো গ্র্যান্ড স্লামের সেমিফাইনালে উঠলেন রাফায়েল নাদাল! l এএফপি
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে অঘটন ঘটছে প্রায় প্রতিদিন। কিন্তু দুই ‘বুড়ো’ ফেদেরার ও নাদালের র্যা কেটে যেন ফিরছে পুরোনো রোমাঞ্চ

টিক-টক! টিক-টক! টিক-টক!

একেকটা ম্যাচ যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে, আর টেনিস রোমান্টিকদের স্বপ্নটা হচ্ছে উজ্জ্বলতর। একটা ফাইনাল দেখার স্বপ্ন। টেনিসের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত দ্বৈরথটি আরেকবার দেখার আশা—রজার ফেদেরার বনাম রাফায়েল নাদাল! অপেক্ষা এখন আর শুধু দুটি ম্যাচের, দুটি সেমিফাইনালের।
ফেদেরার পরশুই উঠে গিয়েছিলেন সেমিফাইনালে, আজ ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী স্বদেশি স্তানিসলাস ভাভরিঙ্কা। কাল সেমিফাইনালে উঠেছেন নাদালও, কানাডার মিলোস রাওনিচকে হারিয়ে দিয়েছেন ৬-৪, ৭-৬ (৯/৭), ৬-৪ গেমে। ২০১৪ ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের পর এই প্রথম কোনো গ্র্যান্ড স্লামের সেমিফাইনালে উঠলেন স্প্যানিশ তারকা, যেখানে তাঁর অপেক্ষায় গ্রিগর দিমিত্রভ।
মেয়েদের এককেও যেন কেউ লিখে দিচ্ছেন পারিবারিক চিত্রনাট্য—দুই উইলিয়ামস বোনের ফাইনাল। বড় বোন ভেনাস আগের দিন রেকর্ড গড়ে উঠে গিয়েছিলেন সেমিফাইনালে। কাল তাঁকে অনুসরণ করলেন ছোট বোন সেরেনা উইলিয়ামসও। ইংল্যান্ডের জোহানা কন্তাকে ৬-২, ৬-৩ গেমে হারানোর আগে যেন পাওয়ার টেনিসের পাঠ শেখালেন। সেমিফাইনালে তাঁর প্রতিপক্ষ ৩৪ বছর বয়সী মিরিয়ানা লুচিচ বারোনি, যিনি নিজেও গ্র্যান্ড স্লামের সেমিফাইনালে উঠেছেন ১৮ বছর পর।
এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে এমনই গল্প ছড়িয়ে আছে প্রতিটি পাতায়। শীর্ষ দুই বাছাই অ্যান্ডি মারে ও নোভাক জোকোভিচ অবিশ্বাস্যভাবে বিদায় নিয়েছেন। অঘটন ঘটছে প্রায় প্রতিদিন। এদিকে দুই ‘বুড়ো’ ফেদেরার ও নাদালের র্যা কেটে যেন ফিরছে পুরোনো রোমাঞ্চ।
২০১০ সালে শেষবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের পর গত ছয় বছরে শুধু ২০১২ সালের উইম্বলডনই জিতেছেন ফেদেরার। বয়সও হয়ে গেছে ৩৫, গত বছর অনেকটা সময় যুঝেছেন চোটের সঙ্গে। কে জানে, এবারই হয়তো সুইস কিংবদন্তির শেষ সুযোগ!
আর নাদাল? চোটের ভোগান্তি তো ছিলই। ফর্মও ভালো যাচ্ছিল না। নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন ‘স্প্যানিশ ম্যাটাডোর’। কিন্তু এবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে আবার দেখা যাচ্ছে আগের নাদালকে। কোর্টে প্রতিটি সেকেন্ডে, প্রতিটি ইঞ্চির জন্য যিনি লড়েন। কাল কোয়ার্টার ফাইনালে কানাডার মিলোস রাওনিচের সঙ্গে লড়াইয়েও যা চোখে পড়ল।
প্রথম সেটের প্রথম গেমেই সেটি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। সার্ভ করছিলেন রাওনিচ, এগিয়ে ছিলেন ৩০-৪০ পয়েন্টে। এমন সময় কানাডিয়ান তারকার ২২৫ কিলোমিটারের সার্ভও এক হাতের দুর্দান্ত ব্যাকহ্যান্ড রিটার্নে ফিরিয়ে দিলেন নাদাল! সেই শুরু, এরপর পুরো সেট কখনো স্পিনিং রিটার্ন, কখনো গতি দিয়ে, কখনো বা দ্রুত নেটের কাছে এসে রাওনিচকে বিভ্রান্ত করে গেছেন। সঙ্গে কোর্টের প্রতিটি ইঞ্চি চষে বেড়ানো তো ছিলই।
সপ্তম গেমে রাওনিচের সার্ভিস ভেঙে প্রথম সেটে নাদাল সহজেই জেতেন ৬-৪ গেমে। দ্বিতীয় সেটটি রাওনিচ নিয়ে যান টাইব্রেকারে। তাতে একটা সময় ছয়টি সেট পয়েন্টও পেয়ে যান কানাডিয়ান তারকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩০ বছর বয়সী নাদালের অভিজ্ঞতা আর নতুন করে জেগে ওঠা প্রত্যয়ের কাছে হার মানলেন, সেট হেরে গেলেন ৭-৬ (৯/৭)-এ। নিজের মতো করেই শেষ করলেন নাদাল। রাওনিচের সার্ভ ব্রেক করেই জিতে নিলেন ম্যাচ।
কে জানে, নাদাল নিজেও হয়তো মনে মনে ফেদেরারের সঙ্গে ফাইনালের আশাই করছেন। অসওপেনডটকম।