পারুলের ছুটি জীবন থেকেই

পারুল আক্তার
পারুল আক্তার

১১ বছর আগে জাতীয় সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় এসেই নিজেকে চেনাতে শুরু করেন পারুল আক্তার। সেই থেকে প্রতিটি জাতীয় প্রতিযোগিতায় দু-তিনটি সোনা জিতে এসেছেন এত দিন। নয় নয় করে জাতীয় প্রতিযোগিতায় ২৫টি সোনার পদক জিতেছেন। ২০১০ সালে বাংলাদেশ গেমসে পাঁচটি সোনা জিতে সেরা সাইক্লিস্ট হয়েছেন। গত বছর গুয়াহাটি এসএ গেমসে খেলে এসেছেন। ২০১৪ সালে দিল্লিতে এশিয়ান ট্র্যাক সাইক্লিংয়ে নিজের প্রথম ও শেষ আন্তর্জাতিক পদকটি (ব্রোঞ্জ) গলায় তোলেন। তবে পরশু রাতে এসবের ঊর্ধ্বে চলে গেলেন পারুল। অকালেই বিদায় নিলেন এই পৃথিবী থেকে।
শোনা গেছে, কদিন আগে পারিবারিক কলহে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন পারুল। এরপর তাঁকে ভর্তি করা হয় সাভারের এক হাসপাতালে। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে আর ফিরে আসেননি বাসায়। ঢাকা থেকে লাশ হয়েই ফিরলেন গ্রামের বাড়িতে। জাতীয় দলের কোচ আবদুল কুদ্দুস কাল পারুলের মরদেহ দেখে ব্যথিত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘আমি তার মুখটা দেখলাম শেষবারের মতো, শুনেছি সে গলায় ফাঁস দিয়েছিল।’ স্বামী সাবেক সাইক্লিস্ট ফিরোজ আলম প্রায় বাকরুদ্ধ, কিছু বলার মতো মনের অবস্থা তাঁর ছিল না। আসলে কী ঘটেছে জানতে চাইলে শুধু এটুকুই বলতে পারলেন, ‘...এই মাত্র হাসপাতাল থেকে এলাম। আমার আর বলার কিছু নেই।’
পারুল আক্তারের অকালবিদায় বাংলাদেশের সাইক্লিং-জগতের জন্য একটা ক্ষতি। কারণ, এমনিতেই নারী খেলোয়াড় খুব একটা উঠে আসছে না। তার ওপর প্রতিষ্ঠিত একজন খেলোয়াড়ের এভাবে চলে যাওয়া সাইক্লিংয়ের কেউই মানতে পারছেন না। সাইক্লিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ খান বাবুলের দুঃখ, ‘সে খুব ভালো খেলোয়াড় ছিল। নিজের ইভেন্ট-সেরা। এভাবে তাকে আমরা হারিয়ে ফেলব ভাবতেই পারিনি।’ সতীর্থরাও শোকাহত।
সম্প্রতি হয়ে যাওয়া প্রথম ট্যুর ডি বাংলাদেশের খেলা দেখতে ছুটে যান গোপালগঞ্জে। সফিপুর আনসার একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসারের হয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আরেকবার জাতীয় প্রতিযোগিতায় নামার। কিন্তু এর আগেই জীবন থেকে ছুটি নিলেন পারুল। রেখে গেলেন তিন বছর বয়সী একমাত্র শিশুকন্যাকে।