এখন নাদালের অপেক্ষায় ফেদেরার

১৮তম গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপার আর এক ধাপ দূরে ফেদেরার। ছবি: রয়টার্স।
১৮তম গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপার আর এক ধাপ দূরে ফেদেরার। ছবি: রয়টার্স।

প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলল প্রথম চার সেট। জীবনে এমন পাঁচ সেটের ম্যাচ অনেক খেলেছেন রজার ফেদেরার, জিতেছেনও অনেক। কিন্তু ৩৫ বছর বয়সী পা জোড়া আজ যেন একটু বিশ্রাম চাইছিল। হয়তো খানিকের বিশ্রাম চাইছিল তাঁর মনও। নিজেকে গুছিয়ে নিতে হবে যে! প্রথম দুই সেট জিতেও যে চার সেট পর স্বদেশি স্তানিসলাস ভাভরিঙ্কার বিপক্ষে নিজেকে ২-২ সমতায় খুঁজে পাচ্ছিলেন সুইস কিংবদন্তি! 

কে জানে, ওই মিনিট সাতেকের ‘মেডিক্যাল টাইম আউট’ই হয়তো তাঁকে মনে করিয়ে দিল, ‘আর একটি সেট! নিজের ১৮তম গ্র্যান্ড স্লামের আরও এক ধাপ কাছে যেতে আর একটি সেট জিতলেই চলবে!’ সে জন্যই হয়তো, পঞ্চম সেটে খেললেন দুর্দান্ত টেনিস! পাত্তাই দিলেন না ভাভরিঙ্কাকে। সেট জিতলেন, ম্যাচও। ভাভরিঙ্কাকে ৭-৫, ৬-৩, ১-৬, ৪-৬, ৬-৩ গেমে হারিয়ে উঠে গেলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে।
এখন অপেক্ষা তাঁর রাফায়েল নাদালের। স্প্যানিশ ম্যাটাডোরের সঙ্গে আরেকটি ফাইনালে ফেদেরারকে খেলতে দেখার স্বপ্ন গত কয়েকদিন ধরেই উঁকি দিচ্ছিল টেনিস রোমান্টিকদের মনে। ফেদেরারের আশাও হয়তো একই। ম্যাচ শেষে নিজেই বললেন, আগামীকাল নাদাল-দিমিত্রভের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের দিকে আগ্রহ নিয়েই তাকিয়ে থাকবেন। তা ফেদেরার উঠে গেলেন ফাইনালে, এখন আগামীকাল গ্রিগর দিমিত্রভের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নাদাল জিতলেই তো হলো!
তবে ফাইনালে ওঠার আগে বড় পরীক্ষাই দিতে হয়েছে ফেদেরারকে। প্রতিপক্ষ ভাভরিঙ্কা র‍্যাঙ্কিংয়ে ৪র্থ, গত তিন বছরে জিতেছেন তিনটি গ্র্যান্ডস্লাম। তবে ইতিহাস সুইস কিংবদন্তির পক্ষে ছিল। এর আগে সুইস ‘ছোট ভাই’য়ের সঙ্গে ১৮ ম্যাচে ফেদেরারের রেকর্ড ১৫-৩! তিনবারই ভাভরিঙ্কা জিতেছেন ক্লে কোর্টে, হার্ড কোর্টে কখনো জেতেননি। দুর্দান্ত লড়াই করেও শেষ পর্যন্ত ফেদেরারের দুর্দান্ত টেনিসের কাছে হার মানলেন আজও।
প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী চলা প্রথম সেটেই লড়াইটা চলল সমানে সমানে। প্রথমে সার্ভ করেন ফেদেরার, নিজেদের সার্ভের প্রথম পাঁচ গেমই জিতে নিলেন দুজনে। ফেদেরার নিজের ষষ্ঠ সার্ভও জিতে নিলে সেটের অবস্থা দাঁড়ায় ৬-৫। নিজের ষষ্ঠ সার্ভ করতে যাওয়া ভাভরিঙ্কার জন্য তাই চ্যালেঞ্জ দাঁড়িয়ে যায় সেট বাঁচানোর। কিন্তু পারলেন না। ফেদেরারের দুর্দান্ত রিটার্ন, ক্রস কোর্ট ব্যাক হ্যান্ডের কাছে হার মেনে সেটটা হেরে গেলেন ৭-৫ এ।
দ্বিতীয় সেটে বলতে গেলে হেসেখেলেই জিতলেন ফেদেরার। নিজে খেলছিলেন দুর্দান্ত, ওদিকে ভাভরিঙ্কা সে সময় যেন ছন্দই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ফল? ভাভরিঙ্কার সার্ভ করা তৃতীয় ও পঞ্চম গেমে ব্রেক করে সেটটা ৬-৩ এ জিতে নিলেন ফেডেক্স। এ সময় নিজের ওপর এতটাই বিরক্ত ছিলেন ভারভরিঙ্কা, নিজের র‍্যাকেটই ছুঁড়ে ভেঙে ফেলেছিলেন! তবে অমন হঠাৎ ফর্ম হারিয়ে ফেলা চোটের কারণেও হয়েছে। দ্বিতীয় সেটের পরই মেডিক্যাল ব্রেকে যান ভাভরিঙ্কা।
তবে ওই একটুখানি বিরতি হয়তো ফেদেরারের মনঃসংযোগ কেড়ে নিয়েছে। তা না হলে তৃতীয় সেটে পুরো এমন উল্টোপাল্টা হবে কেন! প্রথম দুই সেটে যে ফেদেরারকে দেখে মনে বারবার মনে হচ্ছিল মধ্য বিশের ফেদেরার, সেই তিনিই কি না তৃতীয় সেটে পুরো ছন্নছাড়া! শুধু নিজের প্রথম সার্ভটিই জিতলেন, কিন্তু পরের দুবারই সুইস কিংবদন্তির সার্ভিস ব্রেক করলেন ভাভরিঙ্কা। সেটও জিতে নিলেন ৬-১ এ!
তৃতীয় সেটের ধাক্কাটা চতুর্থ সেটের শুরুতেও কাটিয়ে উঠতে পারেননি ফেদেরার। শুরুতেই তাঁর সার্ভিস ব্রেক করেন ভাভরিঙ্কা। তবে 'ভাঙচুর' চলল পরের গেমেও, এবার ফেদেরার ভাঙলেন ভাভরিঙ্কার সার্ভিস। তবে ভাভরিঙ্কাই ছিলেন বেশি আক্রমণাত্মক, ফেদেরারের পঞ্চম সার্ভিস আবার ব্রেক করেন। সেটটাও জিতে নেন ৬-৪ এ। চার সেট পর তাই আবার দুজনে ২-২ সমতা!
প্রায় দুই ঘণ্টার ওই চার সেটের ধকল ফেদেরারের ৩৫ বছর বয়সী শরীরে পড়তে শুরু করেছিল হয়তো, চতুর্থ সেট পর তাই মেডিক্যাল বিরতি নেন সুইস কিংবদন্তি। কিন্তু তারপর ফিরে এসেই খেললেন দুর্দান্ত। ভাভরিঙ্কার তৃতীয় সার্ভ ব্রেক করলেন, তাতেই সেটও জিতে নিলেন ৬-৪ এ।
দুটি মেডিক্যাল ব্রেকই তো তাহলে খেলার গতি পাল্টে দিল। যার শেষে হাসিটা ফুটল ফেদেরারের মুখে।